ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অক্টোবরের শুরুতে মন্ত্রিসভায় উঠছে কোটা বাতিলের প্রস্তাব

প্রকাশিত : ০২:০৭ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৩:৪৫ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর (বর্তমান নবম থেকে ১৩ তম গ্রেড) সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠছে। জাতিসংঘ অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফেরার পর আগামী ১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাব উঠতে পারে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। তিনি আজ বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, কোটা নিয়ে কমিটির দেওয়া সুপারিশ প্রধানন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের কাছে এসেছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য আমরা সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েও দিয়েছি। আশা করছি আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকে সেটি অনুমোদনের জন্য উঠবে।

প্রসঙ্গত, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুপারিশ জমা দেয়। কমিটি নবম থেকে ১৩ তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ওই দিন বলেন, আমাদের ফাইন্ডিংস হলো নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ আগে যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি বলা হতো, সেগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকবে না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেওয়া হয়। অনুমোদনের পরে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হবে।

কোটা পর্যালোচনা কমিটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবুল কাশেম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা জাস্ট সুপারিশটাই মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য পাঠিয়েছি। সেখানে নতুন করে কিছু যুক্ত করা হয়নি। এখন মন্ত্রিসভা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটার উপর ভিত্তি করেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। আগামী ১ অক্টোবর (সোমবার) সকাল ৯টায় তিনি দেশে পৌঁছাবেন। ওইদিন মন্ত্রিসভা বৈঠক হবে কিনা সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। তাই ১ অক্টোবর না হলে পরবর্তী মন্ত্রিসভা বৈঠক হবে আগামী ৮ অক্টোবর।

প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম মন্ত্রিসভা বৈঠকে সভাপতিত্ব করে থাকেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সরকার।

কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ৮ জুলাই প্রথম সভা করে কমিটি। পরে কমিটির মেয়াদ আরও ৯০ কার্যদিবস (৩ মাস) বাড়ানো হয়।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেওয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।

এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করছিলেন তারা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় আন্দোলনকারীদের। গ্রেফতারও হন আন্দোলনকারী নেতারা।

টানা আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।