৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটার দাবিতে শনিবার মহাসমাবেশ
প্রকাশিত : ১০:৩৮ এএম, ৪ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:০৫ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
এবার সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহাল রাখার দাবিতে রাজপথে নেমেছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড। গতকাল বুধবার রাত থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে তাঁরা। বিক্ষোভ আজও চলছে। সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে আগামী শনিবার শাহবাগে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড়ে আটকে রেখেছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড। সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে তাঁরা নানা স্লোগান দিচ্ছে। সকালে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা।
প্রসঙ্গত বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে সব ধরণের কোটা বাতিলের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখার দাবিতে রাজপথে নামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
বুধবার রাত ৮টার দিকে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ গিয়ে অবরোধ করেন। এতে ওই এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, সরকারি চাকরির সব ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করব।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে, কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে থাকবে না- এটা হতে পারে না।’
দাবি আদায়ে আগামী শনিবার বিকাল ৩টায় শাহবাগ মোড়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মহাসমাবেশ করবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
মন্ত্রিসভার কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড বলেছে, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত তাদেরকে কষ্ট দিয়েছে। এছাড়া নিম্ন পদে বহাল রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে বলেও সংগঠনটির নেতারা মনে করেন।
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তারিকুল হাসান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা তারা নিজের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন। আর তারই পুরস্কার হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩০ শতাংশ কোটা দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আমাদের অধিকার। এ কোটা বাতিল হলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে অপমান করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি শেখ আতেকুর বাবু বলেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা শাহবাগ থেকে ক্রমান্বয়ে সারাদেশে বিক্ষোভ-অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা না আসার আগ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই এই আন্দোলন চলছে।
উল্লেখ্য, এতদিন সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই কোটা ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের জন্য ছিল ৩০শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ ছিল নারীদের জন্য, প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ ছিল জেলা কোটা।
কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর ব্যানারে আন্দোলন জোড়ালো হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। এপ্রিলে সেই আন্দোলন তীব্র হয়ে দেশের বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছিল।
শুরুতে সরকার কোটা পদ্ধতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলেও সেই আন্দোলনের মুখে এক পর্যায়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
আর এই কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রীসভা সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর পদের জন্য কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড বলেছে, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত তাদেরকে কষ্ট দিয়েছে। এছাড়া নিম্ন পদে বহাল রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে বলেও সংগঠনটির নেতারা মনে করেন।
/ এআর /