ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলায় যেভাবে রক্ষা পেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত : ০৪:৪০ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার একটি। তখন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ ওই দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু সেদিন প্রাণে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভৎস্য ওই দিনে কিভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? তা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল বিবিসি বাংলায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভৎস্য ওই দিনটি ছিল শনিবার। আওয়ামী লীগের প্রধান এবং তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি। আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের রাস্তায় একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। বিকেল ৩টা থেকে দলটির কিছু মধ্যম সারির নেতা বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।

বিকেল ৪টার দিকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য দেয়ার পালা। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তখনও এসে পৌঁছাননি। দলের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকরা শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় ছিলেন। ওই সমাবেশে তখন উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের তৎকালীন সদস্য ও বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী আমির হেসেন আমু।

২০১১ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির হোসেন আমু বলেন, নেত্রীর বক্তব্য শেষ হবার সাথে সাথে হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনলাম। প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, এদিক-ওদিক তাকালাম। তখন চারপাশে চিৎকার শুনতে পেলাম।

এভাবে দফায়-দফায় বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। সমাবেশে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রথমে বুঝতে পারেননি যে এটি ছিল গ্রেনেড হামলা। অনেকেই ভেবেছিলেন বোমা হামলা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আঁচ করেছিলেন।

যখন গ্রেনেড হামলা শুরু হলো, তখন মঞ্চে বসা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনার চারপাশে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করেন - যাতে তার গায়ে কোন আঘাত না লাগে। যেসব নেতা শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তখন মি: হানিফের মাথায় গ্রেনেডের আঘাত লেগেছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের শেষের দিকে তিনি মারা যান।

গ্রেনেড হামলার পর এক সাক্ষাৎকারে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে তাঁর জীবন রক্ষা করেছিলেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন,আমার নেতা-কর্মীরা সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে অনেকেই ইনজিউরড (আহত) হয়েছে। তাদের রক্ত এখনও আমার কাপড়ে লেগে আছে। আমার নেতা-কর্মীরা তাদের জীবন দিয়েই আমাকে বাঁচিয়েছে।

গ্রেনেড হামলার বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য উপস্থিত থাকা বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা হাসান মাসুদ বলেন, আমি প্রথম যে দৃশ্যটা সেখানে দেখেছিলাম আইভি রহমানের। আমি ওনাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। উনি বসা, চোখ দুটো খোলা, নির্বাক। ঠিক মঞ্চের সামনে দু`পাশে দু`জন লোক তাকে ধরে রেখেছে। আইভী রহমানকে দেখে আমি ঘটনার ভয়াবহতা বুঝে গেলাম। মঞ্চের চারপাশে প্রচুর স্যান্ডেল-জুতা পড়ে ছিল। প্রচুর নিহত ও আহত মানুষ ছিল চারপাশে। কারো হাত নাই, কারো পা নাই।

গ্রেনেড হামলায় আহত নাসিমা ফেরেদৗসি বলেন, হঠাৎ করে এক বিকট আওয়াজ শুনলাম। এরপর আরেকটি আওয়াজ। আমি দৌঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমার পা নড়ছিল না। দ্বিতীয় আওয়াজের সাথে সাথে দেখলাম আমার শরীর রক্তে ভেসে গেছে। এরপর আমি সেন্সলেস (অজ্ঞান) হয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে দেখলাম লাশ আর লাশ। আমি বলছিলাম বাঁচাও-বাঁচাও।

কিছুক্ষণ পরে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন নাসিমা ফেরদৌসি। আশপাশের সবাই ভেবেছিল নাসিমা ফেরদৌসি মারা গেছে। তাকে মৃত ভেবে একটি মৃতদেহবাহী ট্রাকে তোলা হয়। তখন আবারও জ্ঞান ফিরে আসে নাসিমা ফেরদৌসির। ব্যথায় চিৎকার করে তিনি আবারও বলতে থাকেন `বাঁচাও-বাঁচাও`।
গ্রেনেড হামলায় নাসিমা ফেরদৌসির দুটো পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তার পা দু`টো কোন রকমে টিকে যায়। কিন্তু চার বছর তাকে কাটাতে হয়েছে হুইল চেয়ারে।

সূত্র- বিবিসি

আরকে//