ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

(পর্ব-১)

রাইড শেয়ারিং-এ হ-য-ব-র-ল

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত : ০৮:১৩ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:১৪ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৮ রবিবার

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাইড শেয়ারিং এর ধারণা। ব্যস্ততম শহরগুলোতে রোজ বাড়তে শুরু করেছে শেয়ার করা রাইডের সংখ্যা। কিন্তু এসবের মাঝেই রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, চালক এবং যাত্রীদের ত্রিমুখী অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় এখনই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় পরিণত হয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। রাইড শেয়ার করা যানবাহনগুলোর যেখানে সেখানে পার্কিং, অ্যাপস বাদ দিয়ে চালক ও যাত্রীর রাইড শেয়ারিং সেবা আদান-প্রদান, ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ এমন নানান অভিযোগ দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে।

যত অভিযোগ

রাইড শেয়ারিং নিয়ে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা প্ল্যাটফর্ম, রাইড শেয়ার করা বাহনের চালক এবং সেবা নেওয়া যাত্রীদের প্রত্যেকের আছে প্রত্যেকের প্রতি অভিযোগ। সাধারণ গ্রাহক বা যাত্রীদের অন্যতম অভিযোগ চালকের দক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে। আর প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি সবথেকে বেশি অভিযোগ রাইডের ভাড়া নিয়ে।

যাত্রীরা বলছেন, রাইড শুরুর আগে যে ভাড়া প্রদর্শন করা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাইড শেষে আসা ভাড়ার সঙ্গে তার পার্থক্য বেশ বড় । চালকেরা অনেক সময় ইচ্ছে করেই স্বল্প দূরত্বের যাত্রা ঘুরপথে গিয়ে বেশি ভাড়া আদায় করেন বলেও অভিযোগ যাত্রীদের। একই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মগুলো যাত্রীদের কোনো সমস্যায় তাৎক্ষণিক সমাধান বা প্রতিক্রিয়া দেয় না বলেও অভিযোগ তাদের।

অন্যদিকে প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে চালকদের অন্যতম অভিযোগ হলো যাত্রীদের দেওয়া মূল্যছাড়ের অর্থ সমন্বয় না করা, বকেয়া এবং অফারকৃত বোনাসের অর্থ পরিশোধ না করা। একইসঙ্গে উবার, ও-ভাই এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে আগে থেকে যাত্রীর সম্ভাব্য গন্তব্যস্থল প্রদর্শিত না হওয়া নিয়েও আছে অসন্তোষ। আর প্ল্যাটফর্মগুলোর মতে সব দোষ চালকদের। মাঠ পর্যায়ের পেশাদারিত্ব এবং দায়িত্ব নিয়ে রাইড শেয়ার করতে না পারলে তার দায়ভার চালকদেরই।

অ্যাপস বাদ দিয়েই রাইড শেয়ারিং

রাইড শেয়ারিং এর ধারণা অনুযায়ী, পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে একটি স্মার্টফোন ভিত্তিক অ্যাপসের মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমান সময়ে অ্যাপস বাদ দিয়েই শেয়ার করা হচ্ছে রাইড। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অ্যাপস ছাড়াই রাইড নেওয়ার জন্য সম্ভাব্য যাত্রীদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায় চালকদের। আবার অনেক যাত্রীই অল্প কিছু অর্থের খরচ ঠেকাতে অ্যাপস ছাড়াই রাইড নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মোটর বাইকের ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রবণতা সবথেকে বেশি।

আরও পড়ুনঃ করের আওতায় আসছে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলো

অনেক বাইক চালক পথচারীদের রাইড নিতে সরাসরি আমন্ত্রণ জানান। আবার অনেক গ্রাহকই বাইক চালক বলতে রাইড শেয়ার দেওয়া বাইক চালক মনে করে থাকেন। উভয় ক্ষেত্রেই বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয় সাধারণ যাত্রী ও চালকদের। আপাতদৃষ্টিতে সমস্যা মনে না হলেও, অ্যাপসবিহীন রাইড শেয়ারে চালক ও যাত্রী উভয়ের নিরাপত্তাই ঝুঁকিতে থাকে বলে মনে করে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। তাই অ্যাপস ছাড়া অপরিচিতদের সাথে যাত্রা না করতে চালক ও যাত্রী উভয়ের প্রতি পরামর্শ তাদের। 

সমস্যা মুহুর্তে নেই সমাধান

চালক ও যাত্রীদের সাধারণ অভিযোগ যে, কোন সমস্যার মুহুর্তে কোনো সমাধান পাওয়া যায় না রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে। সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রামে পাঠাও-তে রাইড শেয়ার দিতে গিয়ে পুলিশ চৌকিতে সাথে থাকা যাত্রীর কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। তখন পাঠাও এর কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাননি ওই বাইক চালক।

আরও পড়ুনঃ স্মার্ট অ্যাপে যুক্ত হলো সিএনজি-অটোরিক্সা

 

ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখান থেকে মুক্তি পান তিনি। আরেকটি ঘটনায় উবারের এক নারী যাত্রীকে রাইডের মাঝেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে উদ্যত হন চালক। নির্জন সড়কে আর কোন পরিবহণ পাবেন না জেনেও ওই নারী যাত্রীকে নেমে যেতে বলা হয়। সেসময়ও উবারের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ঐ নারী। কারণ গ্রাহক পর্যায় থেকে উবারের সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগের সরাসরি কোনো নম্বর নেই। অ্যাপসের মাধ্যমে সমস্যা জানাতে হয় তবে সেখান থেকে সমাধান আসাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

এভাবেই কোন বিশেষ মুহুর্তে বা প্রয়োজনে গ্রাহক ও চালকদের সমাধান দিতে পারছে না প্ল্যাটফর্মগুলো।

সড়কে বাড়ছে বাহনের সংখ্যা, অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং-এ যানজট

২০১৬ সালের শেষভাগে দেশে রাইড শেয়ারিং এর ধারণা চালু হওয়ার পর থেকে দিন দিন বেড়েছে এর পরিধি। তবে নগর পরিকল্পনাবীদেরা বলছেন, রাইড শেয়ারের কারণে রাজপথে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাইড শেয়ারিং করার জন্য দেশের অন্যান্য জেলা ও মফস্বল শহরগুলো থেকে আসতে শুরু করেছে বাইক ও ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়াও অন্যান্য সময় যে মোটরবাইক বা ব্যক্তিগত গাড়ি তাদের নিজস্ব যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে গ্যারেজে থাকতো সেটি এখন রাইড শেয়ারের জন্য সড়কে থাকে। একই সাথে, শুধু এই খাতকে উদ্দেশ্য করে সড়কে নেমেছে নতুন নতুন গাড়ি ও মোটর বাইক। সব মিলিয়ে রাজপথগুলোকে সহ্য করতে হচ্ছে যানবাহনের বাড়তি চাপ।  

আরও পড়ুনঃ ভাই’তে একের ভিতর পাঁচ

এর পাশাপাশি যত্রতত্র পার্কিং, রাইডের জন্য সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অপেক্ষমান থাকা এসব কারণে বাড়ছে যানজট। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার বলেন, “এই গোলচত্বর সবসময়ই খুব ব্যস্ত থাকে। এরমধ্যে মেট্রো রেলের কাজ চলছে। কিন্তু গোলচত্বরের চার মাথায়ই দেখি রাইড দেওয়া বাইক দাঁড়িয়ে থাকতে। এতে করে যানজট আরও বাড়ে। রাইড শেয়ার করে বলে আমরা হার্ডলাইনে যাই না। কিন্তু সারাদিন কতবার বলে পারা যায় বলেন!”

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোন ধরণের মন্তব্য করেনি পাঠাও, উবার এবং সহজের মতো শীর্ষস্থানীয় রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলো। আশাজনক কোন উত্তর দিতে পারেনি দেশের পরিবহণখাতের অভিভাবক বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ। সংস্থাটির পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, “রাইড শেয়ারিং খাতে বেশ কিছু অব্যবস্থাপনা এখনও আছে। এগুলো নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত আলাপ আলোচনা করছি। তবে এটা একটা বহুমুখী সমস্যা। এর সাথে পুলিশও জড়িত। সবাইকে নিয়ে একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করছি আমরা”।

আরও পড়ুনঃ রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ

 

/ এআর /