ঢাকা, শুক্রবার   ১৮ জুলাই ২০২৫,   শ্রাবণ ৩ ১৪৩২

খাশোগি নিখোঁজ

অক্ষুণ্ন থাকবে কি সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তি?

প্রকাশিত : ০৫:০২ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৮ রবিবার

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কয়েকদিন আগেও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানাতে। কেননা তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার রূপরেখা বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনের সম্মিলনস্থল দাভোসের কথা মাথায় রেখে সৌদি যুবরাজ বলতে চাইছেন, এখানে তিনি ‘মরুভূমির দাভোস’ প্রতিষ্ঠা করবেন। তবে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেট ভবন থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা রিয়াদের ঘনিষ্ঠ পশ্চিমা-সহযোগীদের ভয়ে ফেলে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুবরাজ কি পারবেন আধুনিক সৌদি গড়ার সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে নিজের বাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে।তিনি কি পারবেন বিনিয়োগকারীদের একত্র করতে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, মূল্যবোধের মিল থাকলেই কেবল কোনও দেশের সঙ্গে জোট করা যেতে পারে। কেবল যুক্তরাজ্য নয়, বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশই এই ধারণায় বিশ্বাসী। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্কসূত্রে যুক্ত রয়েছে। বিশেষত সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ট্রাম্পের জামাতার সম্পর্কের দিকটি বারবার আলোচিত হয়েছে।

কেবল খাশোগি নিখোঁজের ঘটনা নয়, একজন সংস্কারক হিসেবে সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছে আগেই। নারী অধিকারকর্মীদের আটক করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। রাজপরিবারের অভ্যন্তরে কথিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর দমনের অভিযোগও রয়েছে তার নামে। সৌদি আরবের বিতর্কিত ভূমিকা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সখ্য বিদ্যমান রয়েছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির বিষয়টিও এগিয়ে নিতে চায় রিয়াদ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কই কি পারবে মোহাম্মদ বিন সালমানের ইমেজ রক্ষা করতে? খাশোগির নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরব বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করছে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

প্রশ্ন হলো, মোহাম্মদ বিন সালমান কি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো সমস্ত অভিযোগ অস্বীকারই করে যাবেন? তবে পুতিনের বাস্তবতা আর মোহাম্মদ বিন সালমানের বাস্তবতা তো এক নয়। পুতিনের বিরুদ্ধে আনা নার্ভ এজেন্ট হত্যা কিংবা মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ কিন্তু নেই। তবে খাশোগি হত্যার ক্ষেত্রে তুরস্কের দাবি অনুযায়ী তাদের কাছে সৌদি সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ আছে। সেসব আলামত তারা বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে সরবরাহও করছে।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এমন হতেই পারে যে এতকিছু জানার পরও যুক্তরাষ্ট্রসহ সৌদি আরবের কৌশলগত মিত্ররা রিয়াদে বিনিয়োগ কিংবা অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করবে না। তবে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রের এমন অবস্থানের সঙ্গে একমত থাকবে না। তারা সৌদি আরবের এসব অপকর্ম একইভাবে সহ্য করবে না। তবে সালমান বিন মোহাম্মদকে তার ২০৩০ সালের আধুনিক সৌদি আরবের রূপরেখা বাস্তবায়নে সেই বিনিয়োগকারীদের সংশ্লিষ্টতা অপরিহার্য। এটাই মোহাম্মদ বিন সালমানের পতনের কারণ হতে পারে।

সূত্র- সিএনএন

আরকে//