ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সন্তানের মুখ দেখা হলো না জসিমের

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ১২:০৫ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:০৯ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার

অভাবের সংসারে তাঁর বেড়ে উঠা। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্যে কৈশোর থেকেই জীবন সংগ্রাম শুরু হয় তাঁর। কঠোর পরিশ্রম করেও পরিবারের ভরণপোষণ যেন কিছুতেই মিটাতে পারছিলেন না তিনি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। পরিবারের অন্য সব সদস্যগুলোর একই অবস্থা। জীবন যুদ্ধে ঘামে ভেজা শরীর তাদের। কোন মতেই দিনযাপন। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে পরিবারকে মুক্তি দিতে দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে একদশক আগে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।

প্রবাসে দীর্ঘদিন একটানা খাটুনির ফলে দারিদ্র্যের যাঁতাকল থেকে মুক্ত হয়ে সদ্য আলোর মুখ দেখছিল তাঁর পরিবার- পরিজনরা। স্ত্রী, সন্তান নিয়েই তাঁর সুখের সংসার। ঘর আলো করে একে একে চার সন্তানের বাবা হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, চতুর্থ কন্যা সন্তান জন্মের পর তাঁর মুখ এখনও দেখেনি সে। মেয়েকে দেখার প্রবল আগ্রহে কাটছিল তাঁর দিনগুলো। সহসা দেশে আসার স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্বপ্নের কথাগুলো পরিবারের বাকি সদস্যদের বলতেন তিনি। মেয়ের জন্য কিনেছেন খেলনা, চকলেট, নতুন কাপড়। কিন্তু সেই স্বপ্নসাধ পূরণ হলো না? মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনা হল না তাঁর।

মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়েড় স্থানীয় সময় পৌনে ৫টার দিকে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তাঁর মৃত্যু সংবাদে গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জসিমের মতো অনেক প্রবাসীদের জীবন এভাবে পথে-প্রবাসে নিয়তির চরম ছোবলে হারিয়ে যায়। দুঃখের ঘোরে নামে অভাবের কালো দিন। যেখানে আশা-ভরসার সমস্থ আকাশ দুঃখের কালো মেঘে ডেকে যায়।

জসিম উদ্দিনের ভাই মনির জানায়, বিকেলে সে বাসা থেকে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়। বাসার কাছেই হাইওয়েতে একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তাঁর মাথায় প্রাপ্ত হয়। ‘রাআস আল খাইমাহ’ একটি হসপিটালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মরদেহ  ‘রাআস আল খাইমাহ’ হাসপাতালের মর্গে আছে। মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, নিহত জসিম উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া ইউনিয়ের ৮নং ওয়ার্ডে। তাঁর পিতার নাম ফখরুল ইসলাম কালু। মৃত্যুকালে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন স্ত্রী, তিন কন্যা ও একটি ছেলে সন্তান রেখে গেছেন।

কেআই/ এসএইচ/