ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বিশ্বভ্রমণে ১১০তম দেশে পৌঁছে গেলেন নাজমুন নাহার 

মাসুদ রানা, জবি

প্রকাশিত : ০৩:০৮ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৯:২০ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

বাংলাদেশি নারী হিসেবে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করলেন লক্ষ্মীপুরের মেয়ে নাজমুন নাহার। বর্তমান প্রজন্মের কাছে সাড়া জাগানো একজন সাহসী দেশপ্রেমী নারী হিসেবে বহুল পরিচিত লাভ করেন তিনি। বাংলাদেশের পতাকাবাহী এ নারীর বিশ্বজয়ের যাত্রা চলছে দুর্বার গতিতে একের পর এক। তার ভ্রমণকৃত দেশের সংখ্যা এখন ১১০। ইতোমধ্যে তিনি একশত দশটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। পৃথিবীর বাকি দেশগুলোও ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন তিনি। সম্প্রতি তিনি তার ১১০তম দেশ ইরানকে নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন।  

অনেক আগেই ইতিহাসের পাতায় স্থান হয়েছে যার নাম। বর্তমানে তিনি আজারবাইজান সফর শেষে ইরানে পৌঁছেছেন। এবার তিনি ইরানের পথে পথে লাল সবুজের পতাকা উড়াবেন।  সম্প্রতি তিনি ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার’- এ ¯স্লোগানে বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছান।

সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের পতাকাকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়াও তার অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে যোগ হয়েছে সম্প্রতি ভ্রমন করা আজারবাইজানের জীবন, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির কথা। চলতি মাসের ১৭ তারিখ বিকেলে স্টকহলম থেকে বাল্টিক এয়ারের ফ্লাইটে তিনি আজেরবাইজান যান। বাকু শহর থেকেই শুরু হয়েছে তার যাত্রা। তার অনাবিল উৎসাহে লাল সবুজের পতাকা ছুঁয়ে যাচ্ছে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। লাল সবুজের পতাকাকে বুকে করেই তিনি অবিরাম ছুটছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

নাজমুন নাহার আমাদের এই প্রজন্মের আইডল। পৃথিবীর মাঝে তার এই ছুটে চলা, নানান দেশের মানুষের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা, অজানাকে আবিষ্কার করার মাঝে তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের দর্শন। বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্ব শান্তির জন্য তার এই অভিযাত্রা অব্যাহত থাকুক পৃথিবীর বাকি দেশগুলোতে। নাজমুন আমাদের দেশের আলোকিত কন্যা আর  মানুষের আশার দিশারী হয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকুক এই পৃথিবীর সব মানুষের মাঝে। বাংলাদেশের সম্মান অনেক উঁচুতে নিয়ে যাক নাজমুনের মত সর্বকালের সূর্য সন্তানেরা।

বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বালাদেশের পতাকাবাহী নাজমুন নাহার। পৃথিবীর ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠছেন তিনি। বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শান্তির বার্তা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১০টি দেশে বাংলাদেশের পতাকা বহনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও মানবতার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। বিশ্বের বাকি দেশের মানুষের কাছাকাছি পৌঁছবেন খুবই দ্রুত। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ববাসী গর্ব করবে তার বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রাকে।

তিনি জানান, ইরানে পা দেওয়ার আগেই আমি মাথায় হিজাব পরে নিলাম। ইরানের রাষ্ট্রীয় আইনে সব নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক। শুধু তাই নয়, ইরানে সফররত সব নারী টুরিস্টদের জন্যও একই আইনের বিধান রয়েছে। ওয়েস্টার্ন ড্রেসআপের সঙ্গে ইরানের মেয়েরা মাথায় একটা ওড়না হিজাব পরে। ইরানের ইসলামিক কালচারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমিও রাষ্ট্রীয় হিজাব আইনকে মেনে নিয়ে ইরানের পথে পথে ভ্রমণ করছি। প্রথম ইরানের তেহরানে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাবা বয়সী একজন আমার দিকে তাকিয়ে বললো আজনবি, তুমি কোথা থেকে এসেছো? বাংলাদেশ থেকে বলতেই তিনি খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন।

সকালে আমি হোস্টেলের লবির রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেতে নেমেই দেখলাম সবার মাথায় হিজাব। হিজাব পরেই মেয়েরা খাবার পরিবেশনের মতো কাজ করছে। আর টুরিস্ট অতিথিদের মাথায় ও হিজাব পরা।  আমিও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছি। এই মাসটি ইরানি শিয়া পন্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। এটি শোকের মাস । তাই ইরানের বিভিন্ন জায়গায় এই কালো পতাকার উড্ডয়ন। ইমাম হাসান ও হুসাইনসহ তার পরিবারের প্রতি শোকের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই মাস পালিত হয়। ইরানের ইতিহাস খুবই আকর্ষনীয়। আমি ছোট বেলা থেকেই ইরানের মানুষের জীবন, সংকৃতি ও তাদের ইতিহাসকে খুব কাছে থেকে জানার জন্য ও দেখার জন্য অতি উৎসাহিত ছিলাম।

বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী নারী পরিব্রাজক নাজমুন নাহারের জীবন, শিক্ষা আর এই বিশ্ব ভ্রমণ যাত্রার উদ্দীপনার পাশাপাশি দেশাত্ববোধের চেতনা এই দেশের প্রতিটি তরুণকে জাগিয়ে তুলবে। ইতিহাসজয়ী এই পরিব্রাজক নারীকে মনে রাখবে সমগ্র মানুষ।

উল্লেখ্য, নাজমুন নাহার ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন ২০১০ সালে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। মা তাহেরা আমিন। তিন ভাই এবং পাঁচ বোনের মধ্যে নাজমুন নাহার সবার ছোট।

একে//