ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের চাকরি দিল গণবিশ্ববিদ্যালয়

গবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০২:২১ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৫:৪৫ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার

সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ তথা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে কাজ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। নিরাপত্তার মত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিভাগে তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুই জন তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- সুমনা ও আখি। এরা দুজনই সাভারের পল্লীবিদ্যুত এলাকার হিজড়াদলের সদস্য ছিলেন।

আর আগে গত ১ অক্টোবর প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন নূরমালা নীলা। এ নিয়ে এখন ক্যাম্পাসে তাদের সংখ্যা দাড়াল তিনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যেন নিজেদের সমাজের জন্য বোঝা মনে না করেন, তারা যেন আর দশজন সাধারণ মানুষের মত নিজেদের সব কাজে নিয়োজিত করতে পারেন। সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা চাই তারা স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের মত এই সমাজে বসবাস করুক। তাই তাদের জন্য আমাদের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর মধ্যে সমন্বয়কারী শিক্ষকদের একজন ইংরেজি বিভাগের সাকিনা আক্তার বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আমাদের সমাজে যেভাবে অবহেলিত ও অপমানিত হয়, তা সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। সমাজে আমরা শুধু তাদের তিরস্কারই করি, কিন্তু কখনও কোনও কাজের সুযোগ দেই না। কিন্তু এটা খুব সত্যি কথা সুযোগ পেলে এরা আমাদের মতই কাজ করার যোগ্যতা রাখে।

প্রথম নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত নূরমালা নীলা বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি আমি সমাজের অন্যদের থেকে আলাদা, তখন থেকেই অবহেলা তিরস্কার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। তাই যখন আমাকে স্যারদের পক্ষ থেকে এখানে আসতে বলা হয়েছিল তখন আমি রাজি হইনি। ভেবেছি এমন একটি জনবহূল জায়গায় হয়ত আমাকে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে আমার ধারণা পাল্টাতে থাকে। আমিও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। তাই আমি আমার সঙ্গের অন্যদের এখানে আসার জন্য বলি। এখন আমি আর নিজেকে ছোট মনে করি না বরং একজন মানুষ মনে করি।

উল্লেখ্য, বৈষম্য দূর করতে ও সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।