ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান, প্রয়োজনীয়গুলো নিয়ে যান: মানবতার দেয়াল

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত : ০৪:৫৩ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:০৭ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

“আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান, প্রয়োজনীয় জিনিস এখান থেকে নিয়া যান”- সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এমনটাই আহবান জানাচ্ছে মানবতার দেয়াল। আর এই মানবতার দেয়ালের গোড়াপত্তন করেন নেত্রকোনা জেলার জাহাঙ্গীর মাহমুদ।

জেলার দূর্গাপুর থানার শিবগঞ্জ বাজারে একটি বন্ধ দোকান ছিলো জাহাঙ্গীর মাহমুদের। গত ১৪ নভেম্বর কে বা কারা আগুন লাগান জাহাঙ্গীরের দোকানটিতে। আর এতে দোকানে থাকা বেশকিছু বই পুড়ে যায় তার। বহুদিনের সাথী এসব বই হারিয়ে বিষণ্ণ জাহাঙ্গীর এমন এক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেন যেখানে কারও অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যাবেন আর সেগুলো যার জন্য প্রয়োজনীয় হবে তা নিয়ে যাবে অন্য কেউ।

এই ধারণা থেকেই বাজারের মসজিদ মার্কেটের একটি দেয়ালে জাহাঙ্গীর চালু করেন ‘মানবতার দেয়াল’ এর। দুইটি হ্যাঙ্গার ঝুলিয়ে আর স্থানীয় এক দেয়াল লিখককে দিয়ে রাঙ্গিয়ে নেন এই দেয়াল।

ছবিঃ মানবতার দেয়ালের প্রধান উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর মাহমুদ। 

গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে চালু হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে খুব দ্রুতই ভাইরাল হতে থাকে দেয়ালটি। বিশেষ করে ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ `উই আর বাংলাদেশ` গ্রুপে ছবিটি পোস্ট হওয়ার পর থেকে অনেকের টাইমলাইনে ঘুরতে থাকে দেয়ালটির ছবি। 

জাহাঙ্গীরের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান সকলেই। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে ইটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, “অনেক সময় আমাদের কাছে এমন জিনিস থাকে যেগুলো আমাদের দরকার নেই। কিন্তু সেগুলো হয়তো অন্য কারও দরকার হতে পারে। একজনের অপ্রয়োজন আর আরেক জনের প্রয়োজন এই দুটোকেই এখানে একত্রিত করা হয়েছে। আমার দোকান পুড়ে গেলে মন খুব খারাপ হয়ে যায়। তখন এই দেয়ালটির উদ্যোগ নেই”।

এমন একটি উদ্যোগ নিতে অনুপ্রেরণা পেলেন কোথায় এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর মাহমুদ বলেন, “আমাদের জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং বালুচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম স্যারের কাছ থেকে আমি এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এছাড়াও ঢাকায় সামিউল নামে আমার এক চাচা আছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমার ভাগ্নী কামরুন্নাহার মুন্নি। এই দুইজন ব্যক্তি আমাকে যথেষ্ট সাহস জুগিয়েছে। অন্য কোথাও এ ধরণের কোন দেয়াল আছে কী না আমি জানি না। তবে আমার উদ্দেশ্যে এই ধারণা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া”।

সম্প্রতি স্থানীয় সুসং ডিগ্রী কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করেছেন জাহাঙ্গীর মাহমুদ। তবে পড়াশুনা শেষে চাকরিতে না গিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। বাবা ইদ্রিস আলী সরকার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মানবতার দেয়াল ছাড়াও রক্তদান বিষয়ে স্থানীয়ভাবে ‘আমরা ব্লাড ডোনার’ নামের আরও একটি সংগঠনের সাথে আছেন জাহাঙ্গীর। তিনি জানান, দূর্গাপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিগত ৪ বছরে প্রায় ২০০ ব্যাগ রক্তের জোগান দেওয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।