ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

 ‘বি স্মার্ট ইউজ হার্ট’র মাধ্যমে সুরক্ষিত ৪ লাখ শিক্ষার্থী

প্রকাশিত : ০৭:৩৮ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

অনলাইনে কীভাবে সুরক্ষিত থাকা যায় তা নিয়ে ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবং ৭৫ হাজার শিক্ষক, বাবা-মা ও অভিভাবকদের সচেতন ও শিক্ষিত করেছে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মসূচি ‘বি স্মার্ট ইউজ হার্ট’ সম্পন্ন হয়েছে।

দেশজুড়ে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৪ লাখ শিক্ষার্থী এবং ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষক, বাবা-মা ও অভিভাবকদের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য অর্জন করেছে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মসূচি ‘বি স্মার্ট ইউজ হার্ট’।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যাতে করে ডিজিটাল শিক্ষার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা গ্রহণে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তাদের সচেতন করে তুলতে পারে এটাই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল।   

এ বছরের জুন মাসে গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ ও ইউনিসেফের যৌথ অংশীদারিত্বে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা কর্মসূচি।

এ চুক্তির মূলে ছিলো নিরাপদ ডিজিটাল অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে সচেতনতা তৈরি করা এবং চাইল্ড হেল্পলাইন (১০৯৮) সেবার বিস্তৃতি, যেখানে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে সরাসরি পরামর্শ ও সুবিধা রয়েছে। অসাম্য দূরীকরণে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১০ এর প্রতি নিজেদের প্রতিশ্রুতির কারণেই শিশুদের অনলাইনে নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে গ্রামীণফোন ও টেলিনর গ্রুপ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতো গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নীতি নির্ধারকরা নিরাপদ ইন্টারনেটের এ উদ্যোগকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী উদ্যোগ বলে প্রশংসা করেন।

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বাবা-মা, শিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে শিশুদের সুরক্ষিত করা এবং তাদের ইন্টারনেটের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে জানানো আমাদের দায়িত্ব। আমাদের শিশুরা অনলাইনে কি করছে সে বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার এবং অনলাইনে যেকোন ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তাদের নিরাপদে রাখতে তারা অনলাইনে যেসব বিষয়বস্তু দেখছে বা জানছে তা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ। সবার জন্যই নিরাপদ ইন্টারনেট।’

বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে ধারণা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যত নিহিত। এ ধরণের উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুদের ক্ষমতায়ন এবং ডিজিটাল রাজ্যে তাদের সুরক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের শিশুদের সঠিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নে ইন্টারনেট অপরিহার্য। একইসাথে এটা সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের শিশুরা ইন্টারনেটে নানা প্রতিকূল অবস্থার পাশাপাশি অনলাইনে নিরাপদ থাকার গুরুত্ব নিয়ে সচেতন।’

এ মাইলফলক নিয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ফোলি বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা এবং সর্ববৃহৎ মোবাইল আইএসপি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ অনলাইন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্ল্যাটফর্মে সঠিক ডিজিটাল পরিবেশে আমাদের শিশুদের সম্পৃক্ত করতে এবং তাদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে আমাদের নিরাপদ ইন্টারনেটের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে যেতে হবে। সবার জন্য নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরিতে অবশ্যই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবো।’

ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এদুয়ার্দ বেগবিদি বলেন, ‘শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার খুব দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রতিটি শিশু যেনো ইন্টারনেট থেকে উপকৃত হতে পারে, তাই শিশুদের বাবা-মায়েদের এবং অভিভাবকদের জন্য অনলাইনে কিভাবে নিরাপদ থাকা যায় এ বিষয়ে জ্ঞান ও সচেতনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এ উদ্যোগের প্রাসঙ্গিকতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোনের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়ে লক্ষ্য অর্জন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমি নিশ্চিত উদ্ভাবনী এ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও যেসব মহতী কার্যক্রম হবে এটা তার শুরু মাত্র।’ 

২০১৪ সাল থেকে স্কুলশিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপদ ইন্টারনেটের বার্তা ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে গ্রামীণফোন। ২০১৫ সালে, গ্রামীণফোন ও ইউনিসেফ যৌথভাবে দায়িত্বের সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার ও এর সর্বোত্তম অনুশীলন নিয়ে বাবা-মা ও অভিভাবকদের জন্য গাইড বই প্রকাশ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৬- এর খসড়া তৈরির মাধ্যমে শিশুদের জন্য ‘অনলাইন নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে আসছে ইউনিসেফ। গণসচেতনতা তৈরি, সরকারি স্কুলগুলোতে ডিজিটাল ল্যাবে শিশুদের উপযোগী বিষয়বস্তু তৈরি এবং ইন্টারনেটে ঝুঁকিপ্রবণ শিশুরা যাতে এ ল্যাবের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে এজন্য বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরামর্শমূলক প্রচারাভিযান চালানো হয়।’

কেআই/