ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

যে সব আলোচিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল      

প্রকাশিত : ১১:১৩ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১১:৩৩ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিযোগিতার জন্য যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সেগুলো আজ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। প্রার্থীদের দাখিল করা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা শেষে রিটার্নিং অফিসার অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। যেসব আলোচিত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। তবে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তারা নির্বাচন কমিশনে আপিল করার সুযোগ পাবেন।        

খালেদা জিয়া

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে ফেনী-১ আসনে। বগুড়া-৬ এবং বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জানিয়েছে, দুর্নীতির মামলায় যাদের দুই বছরের বেশি সাজা হয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

কাদের সিদ্দিকী
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কাদের সিদ্দিকীর দল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট-এর অন্যতম শলীক দল। কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন।

রুহুল আমিন হাওলাদার

জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রিটার্নিং অফিসার। তিনি পটুয়াখালী ১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ঋণখেলাপি হওয়ার জন্য তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

এম মোর্শেদ খান

বিএনপি নেতা এম মোর্শেদ খান চট্টগ্রামের বোয়ালখালী আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রিটার্নিং অফিসার।

গোলাম মাওলা রনি  

পটুয়াখালী-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং অফিসার। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, "হলফনামায় প্রার্থীর স্বাক্ষরে একজন আইনজীবীর প্রত্যয়ন দরকার হয়। তার হলফনামায় স্বাক্ষরও ছিল না এবং যেই আইনজীবীর নাম উল্লেখিত ছিল তাকে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।"

আফরোজা আব্বাস 

ঢাকা ৯ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন বিএনপি নেতা মীর্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। প্রথম তাঁর মনোনয়নপত্র স্থগিত করেছিল রিটার্নিং কর্মকর্তা। ঋণখেলাপি হবার কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম 

বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নেয়া আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে। বগুড়ার রিটার্নিং অফিসার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনী আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে ঐ ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সম্বলিত যেই পত্র মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দিতে হয়, তা প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে হিরো আলমের।

রেজা কিবরিয়া 

হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে গণফোরাম মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া; তার মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পাওনা বাকি থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে কিবরিয়ার।

ইমরান এইচ সরকার 

কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেয়া গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক পারভিন সুলতানা জানান, "মনোনয়ন পত্রের সাথে ১% সমর্থকের সমর্থনের প্রমাণ দাখিল করতে না পারায় ইমরান সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।"

আমান উল্লাহ আমান 

ঢাকা-২ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর সাজা হওয়ায়। অবশ্য ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও কামরাঙ্গীর চরের এই আসনে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকছেন আমানের ছেলে ইরফান ইবনে আমান অমিত।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা 

ঢাকা-১৭ আসনে জমা দেওয়া ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন ঢাকা মহানগরের রিটার্নিং কর্মকর্তা। মনোনয়নপত্রে কোনো দলের নাম কিংবা স্বতন্ত্র হিসাবেও উল্লেখ না থাকায় তৃণমূল বিএনপির প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু    

নাটোর-২ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে দুটি মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ার কারণে। অবশ্য সদর ও নলডাঙ্গা এলাকা নিয়ে গঠিত ওই আসনে দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে।

আরও যাদের বাতিল হয়   

ঢাকা-২০ আসনে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

বিএনপি প্রয়াত নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার নাসিমা আক্তার কল্পনা ঢাকা ৭ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেলেও তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে।

ঢাকা ৬ আসনে ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের মনোনয়নপত্রও এক লাখ টাকা ঋণ খেলাপের কারণে বাতিল হয়েছে।   

চট্টগ্রামে মোরশেদ খান, মীর নাছির, আসলাম চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরীসহ বিএনপির ১১ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে একই কারণে। ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচনের দৌড় থেকে বাদ পড়েছেন বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া।    

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে জমা পড়া ১৮০টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৪১টি বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তার মধ্যে ১১টিই বিএনপি নেতাদের। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বাদ পড়েছেন খেলাপি ঋণের কারণে। গিয়াসের সঙ্গে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপির টিকেট পাওয়া তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্রও একই কারণে বাতিল হয়েছে।

মামলার তথ্য গোপন করায় রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের এবং ঋণ খেলাপী হওয়ায় রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার এবার নির্বাচন করা হচ্ছে না।

এদিকে, মানিকগঞ্জে দলের সাতজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।  

মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে বিএনপির ওই সাত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এসি