ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২২ ১৪৩১

চাঁটগাঁইয়ারা মেতে উঠলো প্রাণের মেলায়

অালী অাদনান

প্রকাশিত : ০৭:১৫ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার

`মেজবান` শব্দটা শুনলেই প্রথমে মনে অাসে চট্টগ্রামের কথা। চট্টগ্রামের যে কয়টি ঐতিহ্য সারা দেশে এ জেলাকে অন্য জেলা থেকে অালাদা পরিচিতি দিয়েছে অন্যতম এ মেজবান। সময়ের ব্যবধানে মেজবানের রীতিতে হয়তো কিছুটা সংস্কার এসেছে। কিন্তু এখনও চাঁটগাঁইয়াদের মেজবানের কথা শুনলে ওই অঞ্চলের মানুষ লোভ সামলাতে রীতিমতো হিমসিম খায়।

অার এমনই চিত্র দেখা গেলো শনিবার চট্টগ্রাম সমিতির মেজবান ও মিলনমেলায়। রাজধানীর শারীরিক শিক্ষা কলেজে এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণিকার প্রচ্ছদ উন্মোচন, খাওয়া দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অালোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান আরও অনেক কিছু।

রাজধানীর ব্যস্ত জীবনেও মানুষ তার শিকড় ভুলে যায় না। তার প্রমাণ এ চট্টগ্রাম সমিতি- ঢাকার এ অায়োজন। যেখানে ফুটে উঠেছে চট্টগ্রামী বা চাঁটগাঁইয়াদের নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি, অাচার অাচরণ।

"বদ্দা ক্যান অাছন", " বদ্দা, খাইয়্যন নে", "বদ্দা, অনেরে বদ্দিন পরে দেইলাম" এমন আঞ্চলিক ভাষার কথা সারাদিন শোনা গেলো চট্টগ্রাম সমিতির মেজবানে। চট্টগ্রাম দেশের বড় জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। কিন্তু মেজবানে অাসা লোকজনদের অাচরণ দেখে তা বুঝার উপায় নেই যে, তারা বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছে। মনে হচ্ছে সবাই একই পরিবারের সদস্য। সবার অাচরণ, কথা বলার ঢং, পছন্দ অপছন্দ প্রায় একই রকম। অান্তরিকতা ও ভালোবাসায় সবাইকে বেঁধেছে এক সূত্রে।

অানুষ্ঠানিক অালোচনা শুরু হওয়ার কথা সকাল সাড়ে দশটায়। কিন্তু শীত উপেক্ষা করে ন`টার অাগেই মানুষ অাসতে থাকে। দশটার মধ্যেই মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজ চাঁটগাঁইয়াদের বিচরণে ভরপুর হয়ে যায়। নানা বয়সের নানা ধর্মের চাঁটগাঁইয়ারা হাজির হন মিলনমেলায় দল বেঁধে।

নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রথমেই শুরু হয় অালোচনা সভা। সমিতির সভাপতি ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মাবুদ। বক্তব্য রাখেন- সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব দিদারুল আনোয়ার, হাসপাতাল কমিটির চেয়ারম্যান ও জেকে গ্রুপের কর্ণধার জাহাঙ্গীর আলম খান, মেজবান কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মেজবান উপ-পরিষদের সদস্য সচিব মো. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী হিরো। মোড়ক উন্মোচন করা হয় সমিতির প্রকাশনা ‘চট্টলশিখা’র। মোড়ক উন্মোচন করেন সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল মোবারক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার তাজুল ইসলাম।

সমুদ্র বিধৌত অঞ্চল চট্টগ্রামে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য গুণীজন। তেমনি কয়েকজন গুণীজনকে প্রদান করা হয় `চট্টগ্রাম সমিতি পদক`। যারা পদক পেয়েছেন তারা হলেন- মাতৃমৃত্যু হ্রাসকরণে অবদানের জন্য প্রফেসর ডা. সায়েবা আখতার, অাঞ্চলিক গানের জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কল্যাণী ঘোষ, চিত্রশিল্পে অবদানের জন্য কনক চাঁপা চাকমা, ইলিশের জীবন রহস্য উদঘাটনে অবদানের জন্য ড. মং সানু মারমা এবং পাটের জীবন রহস্য উদ্ঘাটনে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য ড. মাকসুদুল আলম (মরণোত্তর)। পদক উপ-পরিষদের সদস্য সচিব মাহমুদ সালাহউদ্দীন চৌধুরীর পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমিতির সহ-সভাপতি ও পদক উপ-পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। পদক প্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান অ্যাডভোকেট আনিচ উল মাওয়া আরজু, মো. গিয়াস উদ্দীন খান, মো. ফরিদুল আলম, শফিকুর রহমান শফিক ও মাহমুদ সালাহউদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

মেজবানের তৃতীয়পর্বটি ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাজানো। ‘চট্টগ্রাম সমিতি আঁরার প্রাণের সমিতি’- দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারপর একে একে চলতে থাকে ` যদি সুন্দর এক্কান মুখ পাইতাম`, `কইলজার ভিতর গাতি রাইখখুম তোঁয়ায়ে অ ননাইরে,` `ওরে সাম্পানওয়ালা`, ` বাঁশখালী মহেশখালী` ইত্যাদি নানা গান।

দীর্ঘদিন পর ঢাকার বুকে চট্টগ্রামবাসীদের এ মিলন একদিকে যেমন অনেক অানন্দের অনেক তৃপ্তির তেমনি চট্টগ্রামে উন্নয়নে জন্ম দেয় নতুন সম্ভাবনার। পাহাড় ও সমুদ্র বেষ্টিত চট্টগ্রামের ঢাকাস্থ অধিবাসীদের সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাবে এমন আশা করছেন মিলনমেলায় আসা চাঁটগাঁইয়ারা।

এসএইচ/