ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ইসি যেভাবে ব্যালটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে

প্রকাশিত : ০৭:২৫ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১০:৫০ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র চার দিন। এরমধ্যে জেলায় জেলায় ব্যালট পেপার বিতরণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির পক্ষ থেকে ২৭শে ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যালট বিতরণের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।    

এবার দেশের মোট তিনশ` আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এরমধ্যে ব্যালট পেপারে সিল দেয়ার মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে ২৯৩ আসনে।  

বাকি ছয়টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমের মাধ্যমে।

তবে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ি-সাদুল্যাপুর) আসনটির ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। গত ১৯ ডিসেম্বর ওই আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ড. টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী মারা যাওয়ায় এই নির্দেশ দেয়া হয়।  

শুরু হয়েছে ব্যালট বিতরণ: এবারে সারাদেশের ব্যালট ছাপানো হয়েছে ঢাকার দুটি সরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বিজি প্রেস ও গভর্নমেন্ট প্রিন্টিংয়ে।

মূলত এখান থেকেই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে এসব ব্যালট পেপার সারা দেশের প্রতিটি আসনে বিতরণ করা হচ্ছে।

আজকের মধ্যেই প্রতিটি জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে এই আসনভিত্তিক ভোটের ব্যালট পেপার বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে।   

তবে এসব ব্যালটের সঠিক ও নিরাপদ বিতরণ নিশ্চিত করতে কী ধরণের নিয়ম কানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নির্বাচন কমিশনকে?

এ বিষয়ে জানতে কথা হয়েছিল সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।

তিনি জানান, ব্যালটগুলো মূলত প্রতিটি আসনের ভোটার সংখ্যা হিসাব করে ছাপানো হয়। তবে ব্যালট ছাপানো বা পরিবহনের সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকায় প্রতিটি আসনের ব্যালট জন্য দশ শতাংশ বেশি ছাপিয়ে রাখা হয়।  

প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সেই বাড়তি ব্যালটের হিসাব রাখেন এবং ব্যালট নষ্ট হয়েছে প্রমাণ পেলে সেটা ব্যবহারের অনুমোদন দেন।

ব্যালটগুলো ঢাকা থেকে জেলায় পাঠানো হয় কিভাবে?   

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের ব্যালটে প্রতীকের পাশে প্রার্থীদের নামও দেওয়া থাকে। তাই আসন ভেদে প্রার্থী ও প্রতীক হয় বিভিন্ন রকম।   

এ কারণে ব্যালট পেপার প্রতিটি আসনের ভোটার সংখ্যা হিসেব করে, তাদের প্রার্থী ও প্রতীক অনুযায়ী আলাদাভাবে ছাপাতে হয়। যার প্রতিটিতে থাকে আলাদা সিরিয়াল নম্বর।

তারপর সেগুলো আসন হিসেবে আলাদা আলাদা প্যাকেট করা হয়। সাধারণত প্রতিটি প্যাকেটে একশটি করে ব্যালট পেপার থাকে।

এরপর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটার সংখ্যা হিসাব করে সেগুলো প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও কেন্দ্র হিসেবে আলাদা করেন।   

প্রিজাইডিং কর্মকর্তার থেকে এই ব্যালটগুলো বুঝে নিতে প্রতিটি জেলা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের একজন প্রতিনিধি এবং তাদের সঙ্গে এক বা একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঢাকায় আসেন।

তাদের তত্ত্বাবধানে ব্যালটগুলো প্রিন্টিং প্রেস থেকে ট্রাকে করে যার যার জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোথায় কোন সিরিয়ালের কয়টি ব্যালট যাচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নিয়ে রাখেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।

এছাড়া কারা কখন ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে, কখন পৌঁছেছে, পথে কোন দুর্ঘটনা ঘটলো কিনা - সেগুলো নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা নজরদারি করে থাকেন।

যদি কোন দুর্ঘটনায় ব্যালট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সিরিয়াল নম্বর মিলিয়ে সেগুলো পুনরায় ছাপানো অথবা বাড়তি ব্যালট থেকে ইস্যু করার ব্যবস্থা করে ইসি।   

ব্যালটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় যেভাবে: প্রতিটি জেলায় ব্যালট পৌঁছানোর পর সেগুলোকে উপজেলায় হিসেবে ভাগ করে পাঠানো হয়।

এরপর ভোট গ্রহণের আগের রাতে প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা উপজেলা থেকে সেই ব্যালটগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। সারারাত সেই কেন্দ্র কড়া পাহাড়ায় থাকে।

ব্যালট ছাপানো থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া থাকে যে কেউ যদি ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে তাহলে তারা প্রয়োজনে গুলি চালাতে পারবে।

যদি এই পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, তাহলে মিলিয়ে দেখা হয় কোন সিরিয়াল নম্বরের ব্যালট নেই। পরে সেই পুরো সিরিয়ালটাই বাতিল করে দেয়া হয়।   

যদি কেন্দ্র থেকে ব্যালট ছিনতাই হয়, তাহলে বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জানানো হয়।  

তাদের সিদ্ধান্তে সেই কেন্দ্রটিই বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।

যদি কেন্দ্র বন্ধ করা নাও হয়, তাহলে প্রতিটি ব্যালট ভোটারদের ইস্যু করার সময় পোলিং কর্মকর্তারা ব্যালটের পেছনে ওই ভোটারের ভোটার নম্বর ও সই নিয়ে রাখেন।   

পরে সেই সইসহ ব্যালটগুলোই গণনা করা হয়। নির্বাচনের অন্যান্য সব প্রস্তুতি শেষ করার কথাও জানায় নির্বাচন কমিশন।

এরইমধ্যে ভোটগ্রহণের সিল- স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালির কলমসহ অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী জেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানায় তারা। সূত্র: বিবিসি বাংলা   

এসি