ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

মাত্র ১০ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:০০ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ রবিবার

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া বনের ভেতরে রেললাইনের উপর গাছ ভেঙে পড়ে সারাদেশের সাথে ৩ ঘন্টা বন্ধ ছিল রেল যোগাযোগ। একই সাথে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা আঞ্চলিক মহা-সড়কের উপর একাধিক গাছ ভেঙ্গে পড়ে প্রায় ২ ঘণ্টা যান চলাচলও বন্ধ ছিল। 

এদিকে বিভিন্ন গ্রামে শত শত ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে বহু মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে।

 শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে ষ্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন জানান, রোববার বিকেল ৫টার দিকে প্রচণ্ড বেগে ঝড় হয়। এতে লাউয়াছড়া বনে রেললাইনের উপর একাধিক স্থানে গাছ ভেঙ্গে পড়ে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রায় তিন ঘন্টা কাজ করে রাত ৮টার দিকে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। 

এতে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে আটকা পড়ে জয়ন্তীকা ও ভানুগাছ ষ্টেশন আটকা পড়ে পারাবত এক্সপ্রেস।

অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে লাউয়াছড়া বনের বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ শিকড় উপড়ে সড়কের ওপর পড়ে যায়। এক গাছের ধাক্কায় পাশের গাছও ভেঙে গিয়ে রাস্তার পড়ে। কোনটা দুই পাহাড়ে ঝুলে আছে। এতে রাস্তার দুই পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের মধ্যেই দুই পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। 

এ সময় বনের ভিতরে থাকা যানবাহনের যাত্রীরা আতংকৃত হয়ে পড়েন। ঝড় থামার পর প্রায় দুই ঘন্টা বন বিভাগ ও স্থানীয়রা মিলে রাস্তা থেকে গাছ কেটে সরালে যান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হয়।

সিএনজি যাত্রী কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিকাল ৫টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ভিতরে ডুকলে ঝড় বাতাস শুরু হয়। সে সময় তাঁর গাড়ির সামনে বড় দুইটা গাছ পড়ে। অল্পের জন্য তাদের সিএনজির ড্রাইভারসহ অনান্য যাত্রীরা রক্ষা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, যে কোন সময় অন্যকোন গাছ তাদের উপর পড়বে এই ভয়ে ছিলেন।

শ্রীমঙ্গল বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বড় গাছ কাটা ও সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত সরঞ্জাম। তাদের কাছে এমন সরঞ্জাম না থাকায় কাছ কাটতে বিলম্ব হয়।

লালবাগ এলাকার মিয়াধন মিয়া জানান, বিকেল ৫টার দিকে প্রথমে বৃষ্টি ও হালকা বাতাস হয়। ১০ মিনিট পর থেকে যায় আবার ৫ মিনিট পর ৫টা ১৫ মিনেটে প্রচন্ড গতিতে ঝড় আসে। তখন পরিবার পরিজন নিয়ে তারা ঘরের ভিতরে। ঘর নড়ছে দেখে তারা একটি টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন। সবে মাত্র তারা টেবিলের নিচে প্রবেশ করেছেন তখন হঠাৎ তাদের পুরো ঘর ও ঘরের অনেক জিনিসপত্রসহ উড়িয়ে নিয়ে যায় পাশের ক্ষেতে। অলৌকিকভাবে তারা বেঁচেছেন।

তিনি জানান, একজন দরিদ্র কৃষক প্রতিদিন চাল কিনে তাদের খেতে হয়। এই ঘর পুনরায় তৈরী করার সামর্থ তাদের নেই। একইভাবে, লালবাগ, সবুজবাগ, সুন্দরপুর, বালুচরসহ অনেক গ্রামে শত শত ঘর বিধ্বস্ত হয়। এ সময় অন্তত শতাধিক স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে ও খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে  শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ।

লালবাগ এলাকার সুহেল আহমদ জানান, ঝড়ের সাথে শিলা বৃষ্টি হয়ে বোরো ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দুদু মিয়া জানান, ঝড়ে তার ইউনিয়নের ৫-৬টি গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ও পরিবারগুলো চিহ্নিত করেছেন।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব জানান, রোববার বিকালে শ্রীমঙ্গলের উপর দিয়ে প্রবল শক্তিশালী এক ঘুর্ণিঝড় বয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ আসছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।

মৌলভীবাজার পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক আব্দুর রহিম জানান, এই ঝড়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে মৌলভীবাজার পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির। তিনি বলেন, কত জায়গায় বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে তা বলে শেষ করা যাবেনা। এসব জায়গায় কাজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। 

এএইচ