ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলে যাওয়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২৪ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

চলে গেলেন খ্যাতিমান ভারতীয় লেখক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। গত শনিবার গভীর রাতে কলকাতার সেন্টিনারি হাসপাতালে ৮৫ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে দুই বাংলার শিল্পী-সাহিত্যিকরাই শোকাহত।

কথাসাহিত্যই ছিল তার সারা জীবনের সাধনা। সাধনা করতে করতে লাভ করেন সিদ্ধি। বাংলা ভাষার ধ্রুপদি ঔপন্যাসিক হিসেবে পোক্ত করে নেন নিজের আসনটি। তিনি সাহিত্যের একজন মৌলিক স্রষ্টা। দুই বাংলার সাহিত্যসেবীদের কাছে তিনি ছিলেন নমস্য।

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের নাগরিক। কিন্তু মননে ছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক। ১৯৩৪ সালে অবিভক্ত বাংলার ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানকার গাছপালা, নদী-নালা, ফুল-পাখি, আকাশ-বাতাস, দেখতে দেখতে তিনি বড় হয়েছেন। কিন্তু দেশভাগের পর চলে যান পশ্চিমবঙ্গে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি নানা পেশায় জড়িত ছিলেন।

দেশভাগের বেদনা এই লেখককে আমৃত্যু তাড়া করেছে। ঘুরেফিরে বহু লেখায় এসেছে দেশভাগের কথা। মাতৃভূমি ছেড়ে ওপারে চলে গেলেও বাকি জীবনে কখনো ভুলতে পারেননি এই দেশকে। ফেলে যাওয়া দেশ, সময়, প্রকৃতি আর মানুষজনকে নিয়ে লিখলেন ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ উপন্যাস। উপন্যাসটিতে তিনি তুলে ধরেছেন তার ফেলে যাওয়া সাড়ে ১৭ বছরকে। উপন্যাসটি উত্সর্গ করেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

কিন্তু কেন চলে গিয়েছিল তার পরিবার? কারণটি ছিল অভিমান। বাংলাদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও হিন্দুদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকত। আপন মনে করত। অথচ হঠাৎ করেই মুসলমানরা প্রতিবেশী হিন্দুদের বাদ দিয়ে নিজেদের জন্য আলাদা একটি দেশ দাবি করে বসল। মুসলমানরা বলতে শুরু করল ‘মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ’। এ থেকে হিন্দুদের মনে একটা বেদনা সৃষ্টি হয়। সেই বেদনা, সেই অভিমানের কারণে অনেক হিন্দু দেশ ত্যাগ করে ওপারে চলে যায়। একই অভিমানে চলে যায় অতীনের পরিবারও।

উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যাওয়ার বেদনা কখনও কাটাতে পারেননি তিনি। বেঁচে থাকার জন্য ট্রাকশ্রমিকের কাজ করেছেন, জাহাজের খালাসি হয়ে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত চলে গেছেন। আর্জেন্টিনার এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমও হয়েছিল।

বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের পাশাপাশি ছোটগল্পও লিখেছেন তিনি। লেখালেখির জগতে তাকে আলাদা মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’। মানুষের ঘরবাড়ি, অলৌকিক জলযান, ঈশ্বরের বাগান তার অনন্য সৃষ্টি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার একটি উপন্যাস আছে। সেই উপন্যাসের নাম ‘ফোটা পদ্মের গভীরে’। তিনি লিখেছেন একগুচ্ছ কিশোর উপন্যাস। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- রাজার বাড়ি, নীল তিমি, উড়ন্ত তরবারি, হীরের চেয়েও দামি।

বাংলা ভাষায় অসামান্য সাহিত্যকীর্তির জন্য ২০০১ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। পেয়েছেন মানিক স্মৃতি পুরস্কার, সমুদ্র মানুষের জন্য বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার, ভুয়াল্ক্কা পুরস্কার ও পাল বঙ্কিম পুরস্কার। এ ছাড়াও পেয়েছেন অনেক সম্মাননা।