ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বই মেলায় সুবর্ণ আদিত্যর ফারদুন সিরিজের নতুন বই 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:২২ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৮:১০ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

সুবর্ণ আদিত্য। বাংলা ভাষার কবি। বসবাস করেন ঢাকায়। ফারদুন সিরিজ- দ্বিতীয় কবিতার বই। যা ২০১৯ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে পেন্সিল প্রকাশনী প্রকাশ করেছে।    

সুবর্ণ আদিত্য বিশ্বাস করেন- পৃথিবীতে ভালোবাসার কাছাকাছি কোনো চেতনা নেই। তিনি যাই-ই লেখেন, সেই লেখায় প্রেম-ভালোবাসা প্রাধান্য পায়। কবিতার বই ফারদুন সিরিজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কবিতা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়-ভালোবাসাতে শেখায় কিংবা ভালোবাসতে নিবেদিতভাবেই উদ্বুদ্ধ করে। এবং যেহেতু জীবন একটাই এবং বেঁচে থাকাই চরম ব্যর্থতা মানুষের জন্য আর সমস্ত জীবনজুড়ে তীব্র হাহাকার রেখে যেতে চান থমকে যাওয়া পৃথিবীতে। সেজন্য একমাত্র, চূড়ান্ত আশ্রয় প্রেম—যা নিয়ে হাজির হওয়া কবিতার মঞ্চে। নিজের গায়ের চামড়া যেহেতু বেচি ভালোবাসার পাপে সেহেতু রোমান্টিক কবিতার ক্ষেত্রে ‘ফারদুন সিরিজ’অদ্বিতীয়।

তার মতে, আমার ২য় কবিতার বই ফারদুন সিরিজ। সমগ্র কবিতাই একটা পরম্পরা ধরে এগিয়ে এক সুরঙ্গপথ আপনাকে সাগরে নিয়ে যাবে। ফারদুন মূলত একজন চরিত্র, যাকে নানান ফিরিস্তি দিয়ে সম্মোধন করা হয়েছে। যিনি পৃথিবীর সকল মানুষের আরাধ্য। এই যে আরাধনা—এটা যারাই করেন, (সবাই করেন, যেহেতু দিন শেষে আপনি বাসায় ফেরেন, আসতে হয়, এই যে আসতে হয় তাইই ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার দ্বারাই পৃথিবী আর্বতিত হয়। সুতরাং আমি প্রেম-ভালোবাসা—মানে রোমান্টিকতাকে আঁকড়েই বেঁচে আছি, থাকতেও চাই।) তিনি প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা যেইই হোন না কেন—ফারদুন সিরিজ তাদেরই জন্য।

শুধু বলতে পারি—কতটা বিশুদ্ধ কবিতা হয়েছে তা জানি না, তবে আপনাকে ফারদুন শেষ অব্দি টেনে নেবেই। এই সিরিজের সব কবিতাই একইসাথে আপনার মন ও মগজে আঘাত করবে। আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য—এমনকি হৃদয়ে রক্তক্ষরণে মরে যেতেও পারেন ভালোবাসার নামে। আর সব সময়ই আমি যা বলে এসেছি—যারা প্রেমে যাবৎজ্জীবন দন্ডিত এই কবিতা বই তাদের মুক্তি দিতে পারবে না। বরং ধ্বংসযঙ্গে দাঁড়িয়েও দ্বীধাহীন কণ্ঠে ঘোষণা করবেন—আমিই সেই বদ্ধমূল সাজা, কারারুদ্ধ করেছি জীবন। যদি প্রেমী হন—ফারদুনকে এড়িয়ে যাবার সাধ্য আপনার নেই। সমগ্র বাংলায় তোলপাড় দিতে, ভালোবাসা নিয়ে আপনাকে মুর্হুমুহু স্বাগতম জানাচ্ছে ফারদুন সিরিজ।
হে হৃদয়সকল—আপনারা প্রস্তুত তো!

ফারদুন সিরিজ থেকে ৫টি কবিতা দেয়া গেল।

মুখ ও মুখোশ

একদিন স্বপ্নের ভেতর তোমার হাত নিয়ে উড়ে গেলাম। ডানা কাটা আঘাত নিয়ে তুমি অলিম্পিকে গেলে। সাঁতারে গোল্ড জিতে ফিরে এসে আমার পা দু’খানা খুলে নিলে লং জাম্পে লড়বে বলে।
উড়তে গিয়ে মোমের আকাশে আমার বুকের হাপর খুলে গেলো
চালতার আচারের বোয়ামে রোদে শুকোতে দিলে ফুটন্ত হৃদপিন্ড।

এখন তো আর তোমার হাত ফিরিয়ে দিতে পারি না
ভালোবাসি—বলতে পারি না
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াই...
পুরোনো চেহারাটা খুঁজে নিতে নিতে
মুখোমুখি হয়ে যাই মুখোশের

ফারদুন—আমার মুখ, ফিরিয়ে দাও।

হাড়ক্ষয় রোগ  

হাসপাতালের বেডে...
নরম ইনসুলিন চলছে—আমার রক্তের ভেতর নড়েচড়ে উঠছো ফারদুন

হাড়ক্ষয় রোগ নিয়ে জন্মেছিলাম। এক স্বচ্ছ আকাশ রোদ আমাদের বাড়ি ঘিরে রাখে।
ভেতরবাড়ির উল্লাস, কাঁপনের দরজা খুলে
মা
বাবাকে
ডাকেন
দাদার আর কোনো ছেলেপুলে ছিল না
নাতির সাথে গল্প করবেন ভেবে
আমার আয়ুর বিনিময়ে প্রতিদিন
নিজেকে ইটভাটায় পোড়ান

দাদার অবশিষ্ট হাড়
বুকের পাজরে নিয়ে এখন আমি বাবার সাথে গল্প করি।

ধ্যানবিদ্যা  

ধ্যানবিদ্যা আত্মস্থ করতে করতে ধ্যানি হই। ফারদুনের ঠোঁটের কাছে নিজেকে অবনত করি প্রেম ও শোকে। যেহেতু আমাদের পৃথিবী ও বৃক্ষরা খুব উদার। মানুষ বলেই বারবার অসুখে পড়ি, রোগী হই। কোনো কোমল নারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ভেবে তৃতীয়বার ফারদুনকে ডাক্তার হবার পরামর্শ দিই। সমস্ত গরিমা নিয়ে হেঁটে যায় ফারদুন। আকাশের মত এক গমগমে পৃথিবী ফারদুনকে কেন্দ্র করে ঘোরে।

ফারদুন—আমাকে স্পর্শ করো, খোলাচুলে বুকের কাছাকাছি ঝুঁকে আসো, ঘন নিঃশ্বাসে গাঢ় করে কপালে সেবন করাও মৃত্যু নিরঙ্গম।

এরপর নত হতে হতে, তোমার বুক সমান আধিপত্য নিয়ে ফুল আর পাখির কাছে শিখে নিই সমূহ উড়াল জীবন।

ফারদুনবিষয়ক চমৎকার পাখি

একটি চমৎকার নিয়ে পাখিটি ডানা খুলে উড়াল দিল
আমরা যেতে যেতে দেখলাম তার পালক পড়ে আছে
যে পালকগুলি চড়া দামে কিনে এনেছিল তার প্রিয়তম প্রেমিক

পাশেই পড়ে আছে যোগ-বিয়োগ
আমরা বুঝে নিই
ফারদুন গণিতে কাঁচা
একটা টিউটর নিয়োগ দিলে পাখিদের ভাষা শিখে নিতে পারত

এইভেবে প্রতিদিন বাজারে হাট বাড়াই
পাখিটি আরো আরো দৃশ্যবন্দি খাঁচায়
নাম আটকে রাখে

ফারদুন পাখি আঁকে
যেহেতু সে গির্জায় শেষবার রেখে এসেছিল পিয়ানো
তিলক
নূপুর
কবুতর আর
দুটি হাত

আমরা তার আঙুলসদৃশ কিছু কুড়িয়ে আনি
পুনরায় পাখিটি চমৎকার নিয়ে উড়ে যায়

আমরা মানুষ মানুষ ভাব ও মুখোশ নিয়ে
প্রতিদিন তাকে ফোন করি
তার স্বরে ভেসে আসে তীব্র করুণ
নীলকণ্ঠ
বেলুন

কুয়াশা ভরা মোমের পুকুর এঁকে
আরো কিছু দলছুট মাছ ও শিকারি বক
প্রতিবার শীত ডাকে
ঋতুর ভিড়ে শীতেরও দুঃখ থাকে

নদীটা গণিতে খাটো
গাছটা ছায়া বাঁকা
একদিন
হঠাৎ...

ফারদুন চমৎকার উড়ে গেল

ঘুম

ফারদুনের ঘুম পায়...
প্রতিদিন তার জন্য ঘুম কিনে আনি

বাবাও আমার জন্য ঘুম আনতেন
মা
তার সাথে অপেক্ষা মিশিয়ে দরজা খুলে রাখতেন
ভোর অবধি আমাকে ঘুমিয়ে দিয়ে
বাবা রোগী দেখতে বের হতেন

একদিন এক রোগী এলো  
মা’কে পাশে নিয়ে বাবা হাস্নাহেনার নিচে
তিন যুগ ধরে ঘুমাচ্ছেন...

রোগীর চোখে ঘুম দিয়ে আমি বাবা-মা’র পাশে শুয়ে পড়লাম...

এসি