ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সিজার কখন জরুরি ও সিজারের প্রস্তুতি  

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার

প্রকাশিত : ০৬:৪৬ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:৪১ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত একটা পদ্ধতি সিজার। মা যখন প্রসবকালীন সময়ে অসহনীয় ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করেন তখন সিজারের মাধ্যমে প্রসব করানো হয়। আবার অভিযোগ আছে, বাণিজ্যিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে অনেক ডাক্তার স্বাভাবিক সন্তান প্রসব পদ্ধতি এড়িয়ে গিয়ে মাকে বা মায়ের আত্মীয় স্বজনকে সিজারের জন্য প্রলোভিত করে। এমন অভিযোগ সবসময় সত্য না হলেও কখনো কখনো অবশ্যই সত্য।       

তবে সিজার- এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। রয়েছে নানা ক্ষতিকর দিক। শুধু প্রসবকালীন সময়েই নয়, সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলে সারা জীবন একজন মাকে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হয়। মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও সিজার ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কখনো কখনো মায়ের ও গর্ভস্থ সন্তানের নানা দিক বিবেচনায় সিজার করা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই বুঝতে হবে কখন সিজার করা আবশ্যক। আজ আমরা একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য সে বিষয়ে আলাপ করব।

সিজার করতে হবে এটা কখন বুঝব তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোন সময় নাই। এমন হতে পারে ৩৭ সপ্তাহের পর দেখা গেল বাচ্চার পজিশন তখনো ঠিক হয়নি। কাজেই তখন সম্ভাবনা থাকে যে সিজার করতে হবে।

যদি আগের দুটো বা তিনটি বাচ্চা সিজারে প্রসব হয় তাহলে আমরা প্রথম থেকেই নিশ্চিত থাকি যে এবারো সিজার করতে হবে। আবার কখনো কখনো সিজার জরুরি কী জরুরি নয় এ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়। দেখা গেল প্রথম থেকে বাচ্চা ও মায়ের সবকিছু ঠিক আছে। প্রসব বেদনাও স্বাভাবিকভাবে উঠল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে গিয়ে দেখা গেল মা বা বাচ্চার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তখন সিজারের সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপায় থাকে না।

যখন আমরা (ডাক্তার) সিদ্ধান্ত নিই সিজার করতেই হবে, তখন আগে থেকে কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। যদিও আমি শতভাগ রোগীকে স্বাভাবিক প্রসবের (নরমাল ডেলিভারী) জন্য চেষ্টা চালিয়ে থাকি, তবুও সকল প্রসূতির মানসিক এ প্রস্তুতি থাকা দরকার, পরিস্থিতি যে কোন সময় সিজারের দিকে যেতে পারে। অর্থাৎ, আপনাকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ট্রায়াল দিচ্ছি তার মানে এই নয় যে, আপনার স্বাভাবিক প্রসব হবে। শেষ মুহুর্তে গিয়ে সিজার লাগলেও লাগতে পারে। তাই পুরো গর্ভকালীন সময়টা শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক ভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত। পাশাপাশি এটাও দেখা উচিত, আপনি যে হাসপাতালে প্রসব কালীন সময়ে ভর্তি হবেন সেই হাসপাতালের খরচ কেমন বা হঠাৎ সিজার জরুরি হয়ে পড়লে কেমন টাকা লাগবে তা সংগ্রহে রাখতে হবে। সিজার কালীন সময়ে আপনার সাথে হাসপাতালে কে কে থাকবেন, সেটা পরিবারের লোক, আত্মীয় স্বজন বা সাহায্যকারী - তা আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হবে।

আপনার যে রক্তের গ্রুপ সেই গ্রুপের একজন বা দু`জন রক্তদাতা আগে থেকে যোগাযোগ করে রাখতে হবে। যেন দরকার হলেই তাৎক্ষণিকভাবে রক্ত সংগ্রহ করা যায়। আপনি যে হাসপাতালে ভর্তি হবেন সেই হাসপাতালে যাতায়াত কীভাবে করবেন, নিজের গাড়ি না থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে যেন গাড়ির ব্যবস্থা করা যায় সেই প্রস্তুতি রাখতে হবে।

লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার (এমবিবিএস, এফআরসিপিএস, এমসিপিএস)। কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল। গাইনী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ।

আআ//এসি