ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘হৃদিতা তুই এমন কেন’ তানভীর আলাদিনের ভাবনা জাগানিয়া নতুন উপন্যাস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:০৬ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার

স্বৈরাচার যুগের তান্ডব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েনি তখনও। শান্ত-স্নিগ্ধ অসাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতি লালন করা একটি হৃদ্যতাপূর্ণ মফস্বল শহর ছিল সুখিপুর। শহরের গল্পটা এগুতে পারতো কিশোর অপু আর কিশোরী হৃদিতার প্রেম-খুনসুটিতে। কিন্ত পারেনি, পারতে দেয়নি সময়! হঠাৎ করেই সময়টা বদলে গোলা। শহরটাকে গ্রাস করল গ্রহণেরকাল। স্বৈরাচার যুগকে পুঁজি করেই শহরে গড়ে উঠল সশস্ত্র ‘হালুয়া বাহিনী’! ওদের নগ্ন থাবার অমানিশায় সুখিপুরের মানুষ ভুলেই গেল এই শহরের আকাশেও একদিন পূর্ণিমার চাঁদ উঠতো...।   

হৃদিতার মেয়ে শুভ্রা। তার জন্ম আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে স্বৈরাচার যুগে। শুভ্রার জন্মটা সুখিপুর থেকে প্রায় দু’শ কিলোমিটার দূরে শুভলংয়ের ছোট্ট পাহাড়ী এক দ্বীপে। যেখানে তার মা হৃদিতা কখনো প্রেমিকা আবার কখনো যেনো যৌনদাসী। অপুকেই শুভ্রা আব্বু ডাকে। এতদিনতো ওকেই আব্বু জানতো। তাই পিতৃপরিচয়ের বিষয়ে শুভ্রার মনে কোনোদিন কৌতুহল না থাকাই স্বাভাবিক ছিল। শুভ্রা কি তবে কুমারি মাতা হৃাদিতার সন্তান? একদিন হৃদিতার দু’টো ডায়েরি এসে গেলো শুভ্রার হাতে। তখন কৌতুহলটা কঠিনভাবে দেখা দিয়েছে শুভ্রার মনে। সেই সঙ্গে ভয়ও আব্বুকে নিয়ে। শুভ্রা সত্যান্বেষণে নামলে যদি আব্বু মনে কষ্ট পায়! তবুও শুভ্রা ভাবে অপু কি তার মায়ের বন্ধু? নাকি প্রেমিক ছিল? এনিয়ে তার মনেও যে নানান প্রশ্নের উদয় হয়নি, তা কিন্তু নয়। তাহলে শুভ্রার জন্মদাতা কী অন্য কেউ?

পিতৃ পরিচয়ের সংকট ডিজিটাল প্রজন্মের করর্পোরেট দুনিয়ায় চলতে অসঙ্গতি কিংবা অসংকোচও বেধে রাখেনি শুভ্রাকে! যতটুকু বাধ সেধেছে তার রোগটা, সে তার মা হৃদিতার মতোই থেলাসেমিয়া রোগবহণ করে চলছে। স্বামী-সংসারও করছে। চালাচ্ছে মনোচিকিৎসক হিসেবে পেশাগত দৈনিন্দিন কর্মকান্ড। পিতৃপরিচয়ের খোঁজ তাকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে সাদা-কালো অধ্যায়ের সামনে, যেখানে অদৃশ্য পিতাকে তার কাছে কখনো সাইকো, আবার কখনো ভয়ঙ্কর খল মনে হতে লাগলো, তাই সেই না দেখা বাবা চরিত্রটাকে কেবল মনে-মনে করুণাই করতে চায় শুভ্রা। এরমধ্যে একদিন রহস্যজনক কারণে অপহৃত হয় শুভ্রার স্বামী জিসান।

সাংবাদিক কবি ও সংগঠক তানভীর আলাদিনের প্রথম উপন্যাস ‘হৃদিতা তুই এমন কেন’র গল্পে দুই প্রজন্মের সেতুবন্ধনের মধ্যে মানবিক বিষয়টা বার-বার প্রাধান্য পেতে দেখা গেছে। প্রায় তিনযুগ সময়ের স্রোত হৃদিতা’কে টেনে টুকরো-টুকরো করে বিভিন্ন ঘাটে নোঙর করিয়েছেন লেখক। লম্বা একটা সময়কে বুনতে গিয়ে গল্পটা কোথাও থমকে যায়নি একটু সময়ের জন্যেও। তিনি প্রেম-দ্বন্ধ-সংঘাত, সম্পদ-লোভ-সম্ভ্রম, আন্দোলন-ত্রাস-লাশ, সংস্কৃতি-সম্প্রীতি-অবিশ্বাসকে পায়ে-পায়ে হাটতে যেনো বাধ্য করিয়েছেন।

উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে একটানা পড়ে শেষ না করা পর্যন্ত স্বস্থি নেই। ছোট-ছোট ৩৭টি পর্বে সাজানো উপন্যাসের প্রতিটি বাঁকেই ভাবনার প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন লেখক। এখানেই লেখক হিসেবে তানভীর আলাদিন নান্দনিক মুন্সিয়ানার ছাপ রেখে গেছেন। পাঠককে ভাবনার দুয়ার-জানালার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন একাধিকবার।

ভাটিয়াল প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘হৃদিতা তুই এমন কেন’ উপন্যাসটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন কাব্য কারিম। দাম ২৫০ টাকা।

একুশে বইমেলায় তানভীর আলাদিনের ‘হৃদিতা তুই এমন কেন’ উপন্যাসটি পাওয়া যাবে একুশে বইমেলার ভাটিয়াল, স্টল # ৫২, লিটল ম্যাগ চত্বরে ও বাংলা একাডেমি, ঢাকা ও সাহিত্যদেশ স্টল # ৫৩৪, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

এসি