ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার প্রশংসা করলেন জার্মানির গুন্টার ভাইট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৪২ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার

উৎপাদন বাড়াতে এবং সময়ের সঙ্গে ক্রেতার চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর অটোমেশন জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন জার্মানির টেক্সটাইল মেশিনারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গুন্টার ভাইট। একই সঙ্গে তিনি দেশের পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার প্রশংসা করেন।

আজ রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কতা বলেন জার্মানির টেক্সটাইল মেশিনারি অ্যাসোসিয়েশন, টেক্সটাইল কেয়ার, ফ্যাব্রিক ও লেদার টেকনোলজির চেয়ারম্যান।

আগামী ১৪ থেকে ১৭ মে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক মেলা টেকটেক্সটিল এবং টেক্সপ্রসেস-এর তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলনটি করা হয়। এতে জার্মানভিত্তিক প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠান মেসে ফ্রাঙ্কফুর্টের বাংলাদেশ শাখার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর সালাহউদ্দীন, বাংলাদেশে মেসে ফ্রাঙ্কফুর্টের হেড অব অপারেশন্স রুমানা আফরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে বেশিসংখ্যক পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা (গ্রিন ফ্যাক্টরি) রয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে বলে জানান গুন্টার ভাইট। তবে, তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর সক্ষমতা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতে চলার কারণে উৎপাদন কম। এ থেকে বের হওয়ার জন্য কারখানাগুলোর অটোমেশনে যাওয়া জরুরি।

গুন্টার ভাইট বলেন, ব্র্যান্ডগুলো নয়, এখন ফ্যাশন নির্ধারণ করছে ক্রেতারা। বিশ্বের ফ্যাশন এখন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং ক্রেতারা ঘরে বসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বুঝে নিতে চায়। এসব দিক বিবেচনা করে অটোমেশন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকল্প নেই বাংলাদেশের জন্য। আর এটি করার জন্য বাংলাদেশের বড় শক্তি পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলো।

ফ্রাঙ্কফুর্টের মেলায় ফ্যাশন, ডিজাইন, কাটিং, সুয়িং, নিট, অ্যামব্রয়ডারি, ফিনিশিংসহ বিভিন্ন কাজে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ প্রদর্শন করা হবে।

যন্ত্র পরিচালনায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের দক্ষ করে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন গুণ্টার ভাইট। বলেন, যে যন্ত্র জার্মানিতে একজনে চালান, একই যন্ত্র চালাতে বাংলাদেশে প্রয়োজন হয় একাধিক লোকের। শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশে শ্রমিকের সহজলভ্যতাকে এই শিল্পর জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখেন গুন্টার ভাইট। অনেক দেশ শ্রমিক সংকটে পড়ে। বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে অনেক শ্রমিক কাজ করে এটা এ শিল্পের জন্য আশীর্বাদ। তাদের দক্ষ করে তুলতে পারলে এ শিল্প আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন গুন্টারভাইট।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী `টেক্সপ্রসেস` এবং বিশেষায়িত টেক্সটাইলের প্রদর্শনী ‘টেকটেক্সটিল` আগামী ১৪ মে শুরু হবে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে। চার দিনের প্রদর্শনী দুটির আয়োজক জার্মানিভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠান ম্যাসে ফ্রাঙ্কফুর্ট।

প্রদর্শনীতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে কাঁচামালের অপচয় রোধ এবং উৎপাদন ব্যয় কমানো যায়, সেই প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হবে। তৈরি পোশাক ও বিশেষায়িত টেক্সটাইলের ভবিষ্যৎ বাজার ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ভিডিএমএ টেক্সপ্রসেসের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে অতীতে এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে জায়ান্ট গ্রুপ, মেট্রো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, এভিন্স কগ্রুপ, ডেকো গ্রুপ, ইসলাম গার্মেন্টস উল্লেখযোগ্য।
ভিডিএমএ জার্মানি ও ইউরোপের যান্ত্রিক প্রকৌশল শিল্পে ৩ হাজার ২০০ এরও বেশি সদস্য সংস্থাগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। ভিডিএমএ টেক্সটাইল কেয়ার, ফ্যাব্রিক অ্যান্ড লেদার টেকনোলজি ট্রেড এসোসিয়েশন সেলাই ও গার্মেন্টস প্রযুক্তি নির্মাতা, জুতা এবং চামড়া প্রযুক্তি, লন্ড্রি ও ড্রাই ক্লিনিং এর পাশাপাশি প্রযুক্তিগত টেক্সটাইল প্রক্রিয়াকরণে মেশিন নির্মাতাদের সহায়তা করে। ভিডিএমএ টেক্সপ্রসেসের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।

ভেইট জিএমবিএইচের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুন্তার ভাইট বলেন, বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল উৎপাদনে টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের অংশ ২৭ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২০ সালের সধ্যে এই বাজার দ্বিগুণ বেড়ে ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের হবে। যেখানে ২০০০ সালে ছিলো মাত্র ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইউরোপে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সেক্টর ক্রমাগত বেড়েছে এবং প্রযুক্তিগত টেক্সটাইলের গুরুত্ব আরও বাড়ছে। ১৩ বিলিয়ন ইউরো বার্ষিক বিক্রি নিয়ে জার্মানি প্রযুক্তিগত টেক্সটাইলে বিশ্ববাজারের শীর্ষস্থানে আছে।

সভায় জানানো হয়, এ বছর প্রদর্শনীতে বিশেষ ফোকাস থাকবে শহুরে বাসভবনের দিকে। জাতিসংঘের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ মহানগর ও বড় শহরে বসবাস করবে। যা তৈরি করছে নতুন চ্যালেঞ্জ হাউজিং মোবিলিটির ধারণা, খাদ্য সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসেবার বিধান নিয়ে। এই ক্ষেত্রটি ফোকাস করবে টেকনিক্যাল টেক্সটাইল । একজন লোকের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ, আরও ভালো এবং নিরাপদ করে তোলার বিষয়েও তুলে ধরা হবে।

আরকে//