ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ঘুরে আসুন সীতাকুন্ড শিবচতুর্দশী মেলা 

আলী আদনান

প্রকাশিত : ১২:০০ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের অন্যতম তীর্থস্থান সীতাকুন্ড। প্রায় দেড়`শ বছরের পুরনো শিবচতুর্দশী মেলার জন্য সীতাকুন্ডের পরিচিতি আজ বিশ্বজুড়ে। আগামী চার, পাঁচ ও ছয় মার্চ তিন দিনব্যাপী সীতাকুন্ডে শিবচতুর্দশী মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।    

শিবচতুর্দশী মেলার অন্যতম বিশেষ দিক হলো তিন দিনে এখানে প্রায় সাত- আট লক্ষ, কখনো কখনো দশ লক্ষ লোকের সমাগম হয়। বাংলাদেশে তো বটেই, বিশ্বের কোথাও হিন্দু ধর্মমতাবলম্বীদের এতো বড় সমাগম একসাথে হয়- এমনটি এখনো দাবি করতে পারেননি কেউ।

প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় আসা পূর্ণ্যার্থীরা সারাদিন উপবাস থেকে পাহাড়ের উপর অবস্থিত মন্দিরগুলোতে দুধ ও ডাবের জল দিয়ে শিবকে স্নান করাবেন। সকল পাপ মুছে ফেলার মানসে স্নান করবেন ব্যসকুন্ডে। মূলত প্রতি বছর শিব চতুর্দশী তিথিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সীতাকুন্ড উপজেলা সদরের এই মেলার অবস্থান। সীতাকুন্ড পৌরসদর থেকে পূর্ব দিকে থেকে চলে গেছে সীতাকুন্ড কলেজ রোড। যার শেষ হয় চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়ে। এ পাহাড় বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। এর সর্বোচ্চ চূড়াটির উচ্চতা প্রায় ৩৬৫ মিটার বা ১২০০ ফুট প্রায়। চূড়ায় ওঠার পথটি বেশ দুর্গম। বাজার ছেড়ে কিছুটা সামনে এগুলেই পথটি ক্রমশ: উপরের দিকে উঠে গেছে। এ পথে রয়েছে শংকর মঠ, শ্মশান, গিরিশ ধর্মশালা, ননী গোপাল তীর্থ মন্দির, ভৈরব ধর্মশালাসহ আরও অনেক দেবালয়। আরও কিছুটা পথ ওঠার পরে দেখা যাবে ভবানী মন্দির। ভবানী মন্দির ছেড়ে আরেকটু পথ এগুলেই শম্ভুনাথ মন্দির, ছোট্ট একটি পাহাড়ি ঝর্ণা। আর এখান থেকেই চন্দ্রনাথ মন্দিরের দিকে উঠতে হয়।

পুণ্যার্থীদের পাহাড়ে ওঠার জন্য এখান থেকে শান বাঁধানো সিঁড়ি তৈরি করা আছে। তবে পাহাড় কেঁটে বানানো সিঁড়িগুলোর একেকটি ধাপের উচ্চতা এতো বেশি যে, একটু উঠলেই হাঁপিয়ে যেতে হয়। বেশ কিছুটা পথ কষ্ট করে উঠলেই চোখে পড়বে প্রাচীন বটবৃক্ষের পাশে দুটি মন্দির। এর মধ্যে যেটি পুরানো মন্দির সেটির নাম বিরূপাক্ষ। এ জায়গাটির উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় দু’শ মিটার। এখান থেকে দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি সীমানা ছাড়িয়ে যায় বঙ্গোপসাগর অবধি। বিরূপাক্ষ মন্দির ছেড়ে পূর্বদিকে সর্পিল পথ চলে গেছে পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দিরে।

শিব চতুর্দশী পূঁজা উপলক্ষে সীতাকুন্ডে মেলায় আসা পূর্ণ্যার্থীরা পাহাড় বেয়ে চন্দ্রনাথ মন্দিরে ওঠার দৃশ্য দূর থেকে অনেকটা পিঁপড়ার সারির মতো মনে হয়। বিভিন্ন মন্দিরে পূঁজা-অর্চনা করলেও ভক্তদের সবার কাছেই মূল আকর্ষণ থাকে পাহাড়ের চূড়ার চন্দ্রনাথ মন্দির। তাই দলবেঁধে সবাই ছুটেন মন্দিরটির দিকে। অনুষ্ঠানে আগত ভক্তরা অনেকেই পুণ্যস্নানে নিজেকে পবিত্র করে নেন চূড়ায় ওঠার আগে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ঠিক গোড়া থেকে দুটি পথ চলে গেছে চূড়ার দিকে। মেলার সময় অতিরিক্ত লোক সমাগম হয় বলে বাঁয়ের পথটি কেবল পাহাড়ে ওঠার জন্য। আর ডানের পথটি কেবল পাহাড় থেকে নামার জন্য ব্যবহার করা হয়।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া থেকে পূর্ব দিকে নিচে নামলেই ইকোপার্কের শুরু। এটি দেশের প্রথম ইকো পার্ক। সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ২০০৪ সালে গড়ে তোলা হয়েছে এ ইকোপার্কটি। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে নানান প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও এ পার্কের ভেতরে রয়েছে কয়েকটি ছোট-বড় পাহাড়ি ঝর্ণা। জেনে রাখুন- চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা খুব বেশি না হলেও এর চূড়ায় ওঠার পথটি বেশ সরু এবং দুর্গম। শিব মেলার সময় ভক্তদের ভিড় থাকে বলে বেশ চাপাচাপি করে এ পথে উঠতে হয়।

কিভাবে মেলায় যাবেন: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোন বাসে সীতাকুন্ড যাওয়া যায়। এছাড়া, মেলার সময় বেশিরভাগ ট্রেনই সীতাকুন্ড স্টেশনে থামে। চট্টগ্রাম শহরের অলঙ্কার মোড় থেকেও বাসে আসা যায়।  

থাকার জায়গা: সীতাকুন্ডে থাকার জন্য বর্তমানে ভালো মানের বেশকিছু হোটেল রয়েছে। সাধারণ মানের হোটেলও রয়েছে অনেকগুলো। তবে সামান্য কয়েকটি হোটেল মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই সীতাকুন্ডে ভ্রমণে গেলে চট্টগ্রামে থাকাই সবচেয়ে ভালো। চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল রয়েছে। তবে, অনেক পুণ্যার্থী মেলাতে যাওয়ার সময় থাকার জন্য তাবু কিংবা বিভিন্ন বেড নিয়ে যান।  

আপনিও চাইলে মেলায় ঘুরে আসতে পারেন। ধর্মীয় অনুভূতি ছাড়াও অর্জন হবে এক নতুন অভিজ্ঞতা।

আআ/এসি