ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

অভিনন্দনের শরীরে জীবাণু নেই, মেরুদণ্ডে চোট: চিকিৎসক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২২ পিএম, ৩ মার্চ ২০১৯ রবিবার

অভিনন্দন বর্তমান ভারতের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই উৎসবের আমেজ। কিন্তু যাকে ঘিরে এত উচ্ছ্বাস, ভারতীয় বায়ু সেনার সেই উইং কম্যান্ডার এখন কেমন আছেন? তার শরীরে পাকিস্তান কোনও জীবাণু ঢুকিয়ে দেয়নি তো? এমনই জল্পনা আর আশঙ্কা যখন উঁকি দিচ্ছিল, তখন সুখবর দিল দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতাল। এমআরআই এবং অন্যান্য পরীক্ষার পর সেখানকার চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে তার শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে কোনও প্রকার জীবাণু ঢোকানো হয়নি।

তবে অভিনন্দনের মেরুদণ্ডে এবং পাঁজরের হাড়ে চোট রয়েছে, জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আরও অন্তত ১০ দিন তাঁর চিকিৎসা চলবে। রবিবার অভিনন্দন কথা বলেছেন তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। রবিবার তাঁর ডি-বিফ্রিং (অর্থাৎ মিগ-২১ যুদ্ধবিমানে ওড়া থেকে শুরু করে ‘ডগ ফাইট’, বিমান ধ্বংস হয়ে যাওয়া, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মাটিতে নামা, পাক সেনার হাতে বন্দি হওয়া এবং ভারতে ফেরা পর্যন্ত সমস্ত কিছু সেনা কর্তাদের জানানো ও বর্ণনা করা) হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া আরও চলবে বলে সেনার একটি সূত্রে জানানো হয়েছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান। মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নামেন উইং কম্যান্ডার অভিনব বর্তমান। পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন তিনি। তাঁর মিগ বিমানটিও ভেঙে পড়ে। বিমান থেকে বেরিয়ে প্যারাশুট নিয়ে নেমে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মাটিতে নামতে সফল হন অভিনন্দন। তার পরই পাক সেনা তাঁকে বন্দি করে।

প্রায় ৬০ ঘণ্টা পাক সেনার হেফাজতে থাকার পর শুক্রবার রাত ৯.২৫ মিনিটে ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত দিয়ে ভারতের মাটিতে পা রাখেন অভিনন্দন। রাতেই সেখান থেকে তাঁকে দিল্লিতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বায়ু সেনার বিশেষ বিমানে। সেখানেই সেনাবাহিনীর আর আর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অভিনন্দন।

অভিনন্দনের ফেরার পর দেশ জুড়ে উৎসবের মধ্যেও শঙ্কার মেঘ কাটছিল না। আশঙ্কা ছিল, পাক সেনা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তাঁর শরীরে ক্ষতিকারক কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া অর্থাৎ কোনও জীবাণু ঢুকিয়ে দিতে পারে। আবার সেনা কর্তাদের একটি অংশ এ-ও আশঙ্কা করেছিলেন কোনও মাইক্রো চিপ তাঁর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হতে পারে, যাতে ভারতীয় সেনার কার্যকলাপ বা গতিবিধির আঁচ করতে পারে পাক সেনা।

এই পরিস্থিতিতেই শনিবার অভিনন্দনের এমআরআই করা হয়। রবিবার সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর শরীরে কোনও ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি।

মিগের মতো যুদ্ধবিমানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০০ কিলোমিটারেরও বেশি থাকে। এই বিপুল গতিবেগে চলা যুদ্ধবিমান থেকে ‘ইজেক্ট’ করা অর্থাৎ চলন্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া যে উচ্চতায় ‘ইজেক্ট’ করা হয়, সেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও ভুমি বা মাটির থেকে কয়েক গুণ বেশি থাকে। একটি সমীক্ষা বলছে, তিন জনের মধ্যে এক জনই এই সংক্রান্ত চোট-আঘাত পান। এ ছাড়া পাঁজরের হাড়, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অভিনন্দনের ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কাই করা হচ্ছিল।

রবিবার এমআরআই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। অর্থাৎ মেরুদণ্ডে চোট পেয়েছেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন। এ ছাড়া আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে সেগুলি তেমন গুরুতর নয়। তবু আরও অন্তত ১০ দিন একাধিক শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তাঁকে। সমান্তরাল ভাবে চলবে ডি-ব্রিফিং-এর প্রক্রিয়াও।

আরকে//