ঢাকা, শনিবার   ০২ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ১৮ ১৪৩২

অগ্নিঝরা মার্চ

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাঠামো তৈরির নির্দেশ

তোফায়েল আহমেদ

প্রকাশিত : ০৯:১১ এএম, ৪ মার্চ ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১১:৩৭ এএম, ৪ মার্চ ২০১৯ সোমবার

৪ মার্চ, ১৯৭১। এই দিন বঙ্গবন্ধু ঘোষিত পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ঢাকায় সাময়িকভাবে কারফিউ তুলে নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে তা বলবৎ থাকে। খুলনায় হরতাল পালনকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনীর বিক্ষিপ্ত গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে এদিনও সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ২ মার্চ আর আজ মিলে মোট ১২০ জন নিহত ও ৩৩৫ জন আহত হয়। সারাদেশে আহতদের সুচিকিৎসার্থে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত-সহস্র মানুষ লাইন দিয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও নিহতদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরকম উত্তাল পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে আওয়ামী লীগের এক মুলতবি সভায় ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ব্যাখ্যা করে সংগ্রামের নতুন দিকনির্দেশনায় বলেন, `আজ আওয়ামী লীগ নয়, গোটা বাঙালি জাতিই অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন। আমাদের সামনে আজ দুটো পথ খোলা আছে। একটি সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকারের জন্য নিজেদের মনোবল অটুট রেখে অবিচলভাবে পূর্ণ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া অথবা ভুট্টো-ইয়াহিয়ার কথামতো সবকিছু মেনে নেওয়া।
নিজের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, `আপনারা জানেন, আমি সারাজীবন ক্ষমতার মসনদ তুচ্ছ জ্ঞান করে দেশ ও জাতির কাছে আমার জীবন মর্টগেজ রেখেছি।

বাংলার মানুষ গুলি খেয়ে বন্দুকের নলের কাছে বুক পেতে দিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে আমাকে মুক্ত করে এনেছে। আমার ৬ দফা কর্মসূচির প্রতি ম্যান্ডেট দিয়েছে। এখন শহীদের পবিত্র আত্মত্যাগের প্রতি অশ্রদ্ধা জানিয়ে পাকিস্তানিদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে অবমাননাকর শর্তে কী করে ক্ষমতায় যাই।

অতঃপর বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের মধ্যে সারাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাঠামো তৈরির নির্দেশ প্রদান করেন। এ দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে বিক্ষুব্ধ শিল্পীসমাজ রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের নতুন নামকরণ করেন, `ঢাকা বেতার কেন্দ্র।` পাকিস্তান টেলিভিশনের নাম পাল্টে `ঢাকা টেলিভিশন` নাম দিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতে থাকে। কার্যত সারাবাংলা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে।


টিআর/