ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সাংবাদিক সমাজের জন্য বড় শূন্যতা শাহ আলমগীর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২২ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:২৭ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) প্রয়াত মহাপরিচালক শাহ আলামগীর ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। যিনি নিজের স্বার্থ না দেখে সামগ্রিকভাবে প্রাধান্য দিতেন। সাংবাদিকদের দুর্দিনের বন্ধু ছিলেন তিনি। তার চলে যাওয়া সাংবাদিক সমাজের জন্য বড় শূন্যতা।

আজ শুক্রবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে শাহ আলমগীরের স্মরণ সভায় এ কথা বলেন বরেণ্য সাংবাদিকরা।

স্মরণ সভায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শাহ আলমগীরের কাছে অনেকে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি ভালো ভাষার মাধ্যমে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি সবার কথা শুনেছেন, অন্যকে বলার উৎসাহ দিতেন, সবশেষ তিনি উত্তর দিতেন। তার চলে যাওয়া বেদনার। তার চলে যাওয়া সাংবাদিক সমাজের জন্য বড় শূন্যতা।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘নানা কিছুর বিনিময়ে ভালোবাসা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ভিন্ন ছিলেন শাহ আলমগীর। তিনি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন কাজের মাধ্যমে। তিনি সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি তিনি বেঁচে আছেন, আমাদের মাঝে চিরকাল থাকবেন।’

দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি সবসময়েই ইতিবাচক চিন্তা করতেন। শাহ আলমগীর গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন। আমি মনে করি, এটা একটা বিশাল কাজ। ভালো মানুষ না হলে এমন কাজ করা যায় না। তিনি সবসময়েই কমিউনিটির স্বার্থের কথা ভাবতেন।’

একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘একটি মানুষের যতোগুলো গুণ থাকা দরকার, তার সবগুলো ছিল শাহ আলমগীরের মধ্যে। তিনি সাংবাদিকদের দুর্দিনে পাশে থাকতেন। আবার সুখের সময়ও ছিলেন। তার উৎসাহ আমাদের আজও কাজের প্রেরণা যোগায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মফিদুল রহমান বলেন, ‘শাহ আলমগীর ছিলেন সদালাপী। তার সঙ্গে কথা বলে আরাম পাওয়া যেত, মনে শান্তি আসত।’

প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘শাহ আলমগীর ছিলেন সকলের বন্ধু। তার মতো বন্ধু তৈরি করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই আছে। তিনি একাধারে সাংবাদিক নেতা ও কর্মী ছিলেন। তিনি দুর্দিনে সময়ের বন্ধুদের কথা সবসময়েই মনে রেখেছেন। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তার দুঃখ-কষ্ট সহজে প্রকাশ পেত না কিন্তু আনন্দের বিষয়গুলো তিনি সবার সঙ্গে ভাগ করতেন।’

দৈনিক সমকালের যুগ্ম-সম্পাদক অজয় দাস গুপ্ত বলেন, ‘শাহ আলমগীর এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তিনি কঠিন কথা সহজে বলতে পারতেন। তিনি ছিলেন বটবৃক্ষের মতো, যার ছায়াতলে এলে মন ভালো হয়ে যেত।’

প্রধান তথ্য কমিশনার মর্তুজা আহমেদ বলেন, ‘৮৫ সালে পিআইবি গঠিত হয় কিন্তু শাহ আলমগীরের সময়টা হচ্ছে পিআইবির স্বর্ণযুগ। তার আমলে পিআইবিতে যত কাজ হয়েছে এবং পিআইবিকে যেভাব প্রযুক্তিসহ উন্নত করা হয়েছে তা আগে কখনো হয়নি। শাহ আলমগীর কর্তব্যপরায়ণ বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। একটা সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাংবাদিকদের ঢাকায় এসে পিআইবিতে প্রশিক্ষণ নিতে হতো। কিন্তু শাহ আলমগীর এ ধারা ভেঙে দিয়ে পিআইবিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আর সাংবাদিকদের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে হয় না, পিআইবি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসে। তার দেখানো পথ আমাদের জন্য অনুসরণীয়।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘কাজ পাগল শাহ আলমগীর ভাই আজও আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনি নিজে অসুস্থ থাকলেও সেটিকে চেপে রেখে আমাদের কাজ করতে বলেছেন, নিজেও করেছেন। তার একান্ত চেষ্টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার পেয়েছে সাংবাদিক সমাজ।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘শাহ আলমগীর কখনো আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তাকে নিয়ে আমরা যত উচ্চ প্রশংসা করি না কেন তা অতিকথন হবে না। হাসিমুখ ছাড়া তাকে কল্পনা করা যায় না।’

স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শাহ আলমগীরের সহধর্মিনী ফৌজিয়া বেগম মায়া, মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব নিউজ এবং সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের চেয়ারম্যান রেযোয়ানুল হক রাজাসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।

টিআর/