ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

নিজের কাজ ভালোভাবে করাই প্রকৃত দেশপ্রেম 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৩ পিএম, ২৫ মার্চ ২০১৯ সোমবার

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে সুপরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করে। মাত্র ৮ মাস ২২ দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৩০ লাখ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল টিক্কা খান ঘোষণা করেছিলেন আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না। তার সেই পোড়া মাটি নীতি ধরেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সারাদেশে বাঙালি নিধনে নেমেছিল।   

১৯৭১ এ ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতার ডাকে সেদিন বাংলার মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সশস্ত্র পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নিরস্ত্র বাঙালির মনে সেদিন ব্যক্তি প্রাপ্তি ছিল না, ছিল জাতির মুক্তি। সেই ১৯৫২ সালের ভাষার জন্য প্রতিবাদ, ১৯৭১ এ মুক্তির আন্দোলনে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) আয়োজনে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের বেস্ট ইউজ অব ডেটা ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরা হয় বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রের একটি দল। এ প্রতিযোগিতায় ৭৫টি দেশের ২০০টি ইভেন্টে ১৮ হাজারের বেশি প্রতিযোগী অংশ নেন। এর মধ্যে এক হাজার ৩৯৫টি দল তাদের প্রকল্প জমা দেয়। এদের মধ্যেই ছয়টি দল ছয়টি ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরা হয়। চাঁদে অবতরণের প্রচুর তথ্য-উপাত্ত ছবি আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব দেখা কঠিন। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে মানুষজন এসব তথ্য-উপাত্ত দেখার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্যে এ অর্জন নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জের ইতিহাসে এই প্রথম। এটি বাংলাদেশের জন্যেও একটি দারুণ অর্জন।

এইভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, দেশের বাইরেও অনেক বাংলাদেশি অবদান রাখছেন যার যার ক্ষেত্রে। এই যে অবদান, এটিই আসলে সত্যিকার দেশপ্রেম। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। এই প্রেম ছাড়া বিশ্বাসী হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, গোড়াটাই তো ঠিক নেই। আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স) দেশকে খুব ভালবাসতেন। কুরাইশদের অত্যাচারে তিনি যখন জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি বার বার মক্কার দিকে, কাবার দিকে ফিরে বলছিলেন, তোমাকে আমি বড় ভালবাসি। আপন গোত্রের লোকেরা যদি ষড়যন্ত্র না করত,আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যেতাম না। 

আসলে যখন মানুষ নিজেই নিজের কাজ করার উদ্যোগ নেয়, তখন সত্যিই কাজটি হয়। এ নিয়ে সারসীর একটি গল্প বলি। এক সারসী বাসা বেঁধেছিল এক ধানক্ষেতে। সেখানে সে তার ছোট্ট ছানাদের রেখে প্রতিদিন সকালে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে যেত। ফিরত সেই সন্ধ্যায়। বাচ্চারা কবে বড় হয়ে নিজেরাই খাবার খুঁজতে বেরুবে সেই আশায় সেদিন গুনছিল। এদিকে ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। আর কিছুদিন বাদেই কৃষকের লোকজন পাকা ধান কাটতে আসবে। প্রতিদিন তাই সারসী তার বাচ্চাদের বলে যেত, শোন বাছারা! লোকজন ক্ষেতে এলে তারা কী কথা বলে তা খেয়াল করবে। ফিরে এলে আমাকে বলবে। একদিন সারসী বেরিয়ে যেতেই এলো ক্ষেতের মালিক। সঙ্গে এক বন্ধু। কৃষক মালিক বলল, পাড়ার কাউকে বলতে হবে যাতে ধানগুলো কেটে বাড়িতে তুলে দেয়। বিনিময়ে কিছু মজুরি দেবো। ফিরে এলে ছানারা বলে, মা মা চলো পালাই। সারসী বলে, এখনো সময় হয়নি। ধান কাটতে কেউ আসবে না। কারণ কৃষক অন্যের ওপর নির্ভর করছে।

ঠিকই পরের দুদিনেও কেউ এলো না। এবারে কৃষক এলো তার ছেলেকে নিয়ে। বলল, দেখ অবস্থা! এত করে বললাম, কেউ এলো না। কাল তোমার চাচাদেরকে বলব। সেদিনও সারসী ফিরে এলে ছানারা সব খুলে বলল। সারসী বলে, এখনো সময় হয়নি। ধান কাটতে কেউ আসবে না। কারণ কৃষক অন্যের ওপর নির্ভর করছে।

আরো দুদিন পরে। এবার কৃষক ক্ষেতে এসেই রেগে গরম। দেখেছো, তোমার চাচারাও কেউ এলো না! চলো, কাল আমরাই আসব। ধানগুলো কেমন পেকে গেছে! তুমি বাড়ি গিয়ে কয়েকজন মজুর ঠিক করো। কাল সকাল সকাল আসতে হবে।

সারসী ফিরে এসে বাছাদের মুখে সব শুনে বলল, চলো বাছারা। আর দেরি করা ঠিক হবে না। এবার আমাদের ক্ষেত ছেড়ে যাবার সময় হয়েছে। কারণ, কৃষক নিজেই আসবে বলে ঠিক করেছে। তার মানে কাল সকালে তারা আসবেই। চলো, তারা আসার আগেই আমরা নিরাপদে সরে আসি। সারসী তার প্রিয় ছানাদের নিয়ে চলে এলো আরেকটি ক্ষেতে, নিরাপদে।

তার মানে একটা প্রাণিও জানে যে, যে উদ্যোগ নেয়, সে কাজ করতে পারে। আর যে নিজে কাজে নামে না, সে করতেও পারে না। মানুষ হিসেবে কি এই কথাটি আমরা জানি না? জানি। কারণ এ গল্পটি কোনো মানুষই লিখেছেন। এখন প্রয়োজন হচ্ছে এই কথাটিকে উপলব্ধি করা। এ সত্য যত উপলব্ধি করতে পারব, তত বাস্তবে কাজ করতে পারব।এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, কী কাজ করব। উত্তর হচ্ছে:

অনেক তরুণেরা আফসোস করে বলি, ইশ আমি যদি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারতাম। কী হলে কী করতাম এই নিয়ে আক্ষেপ করি কিন্তু বাস্তবে নিজের করণীয়টুকু সুন্দরভাবে পালন করিনা। আসলে নিজের কাজটুকু সৎভাবে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে করাই হলো দেশপ্রেম। একজন শিক্ষার্থীর জন্যে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম হচ্ছে জ্ঞানার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করা। যে শিক্ষার্থী আলস্যে সময় কাটায় না, ফেসবুক ও চ্যাটিংয়ে সময় না দিয়ে নিজের লেখাপড়ার জন্যে পর্যাপ্ত সময় দেন এবং নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি সত্যিকার অর্থেই দেশের কল্যাণেই কাজ করছেন। কারণ ছাত্রজীবনে সে যদি নিজেকে বড় কাজের জন্যে তৈরি করতে পারে, তাহলে পরবর্তীতে সে তার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারবে।

একজন শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও তথ্যে সমৃদ্ধ করা, লক্ষ্য সুস্পষ্ট করে দেয়া, লক্ষ্য অর্জনে মেধার বিকাশ ঘটানো, মূল্যবোধ জাগ্রত করা। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব কখনো শিক্ষার্থীকে পঙ্গু করে দেয়া নয়। আজকাল পত্রপত্রিকায় আমরা দেখতে পাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়। তাই শিক্ষকরা যদি আন্তরিকভাবে সৎ থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সেটিই তার দেশপ্রেম। 

একজন সরকারি চাকরিজীবি হচ্ছেন জনগণের সেবক। তার চিন্তা থাকবে কোনোরকম হয়রানি পেরেশানি ছাড়াই ফাইল ছেড়ে দেয়া বা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা। যে চাকরিজীবি কর্মস্থলে সময়মতো যান এবং পুরো কর্মঘণ্টা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন সেটিই তার দেশপ্রেম। যে কাজটি পাঁচ মিনিটে করে দিতে পারেন সেটি পাঁচ দিন ফেলে না রেখে যদি পাঁচ মিনিটেই করে দিতে পারেন, তাহলে সেটিও আপনার দেশপ্রেমের নমুনা।

যিনি রাস্তা নির্মাণ করছেন তার দায়িত্ব হলো কত ভালো উপকরণ দিয়ে টেকসই রাস্তা নির্মাণ করা যাতে অল্পদিনে রাস্তায় ফাটল না ধরে। আপনি যদি রাস্তা ঝাড়ু দেন সেটাই যদি সবচেয়ে সুন্দর ও আন্তরিকভাবে করেন, তবে আপনি একজন দেশপ্রেমিক। আপনি গৃহিণী হলে আন্তরিকতা নিয়ে যদি সন্তানদের লালন-পালন করেন, পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে খাদ্যাভ্যাসের ব্যবস্থা করেন তবে তা-ও আপনার দেশপ্রেমের নমুনা।

আপনি যদি গাড়ি চালান, কীভাবে নিয়ম ফাঁকি দেয়া যায় তা নয় বরং আপনাকে নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে হবে এটাও কিন্তু দেশপ্রেম। যে সৈনিক সৎ থেকে দেশের সীমান্ত রক্ষায় নিবেদিত থাকেন তিনিও দেশপ্রেমিক। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স) বলেন, একদিন ও এক রাতের সীমান্ত প্রহরা এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারারাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যবসায়ী জনগণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ভেজাল পণ্য বিক্রি থেকে বিরত থাকছেন-তিনিও দেশপ্রেমিক।

যে চিকিৎসক আন্তরিকভাবে সেবা দেন রোগীকে, তিনিও দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। যে চিকিৎসক রোগীকে বাড়তি টেস্ট করতে দেয় না এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়া বাড়তি ওষুধ লেখেন না তাহলে এটিও তার দেশপ্রেম। প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক শিশুবন্ধু ডা. এম আর খান তার সহকর্মীদের বলেছিলেন, তোমাদের সেবার মান এমন হতে হবে যেন রোগী মারা গেলেও তার আত্মীয় স্বজনরা বলতে বলতে যায় হায়াত নেই তাই মারা গেছে। ডাক্তার সাহেব চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি। 

কর্মপ্রেমী না হলে তাকে দেশপ্রেমিক বলা যাবে না। কারণ একজন মানুষের মূল পরিচয় তার কাজ। একালের একজন অনন্য মানুষ ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও পরমাণু বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বনেতৃবৃন্দ ও রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি আহ্বান ছিল, তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। নৈতিক চেতনায় উজ্জীবিত করতে হবে। যার জন্যে তিনি কিশোর তরুণদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে দিতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। তিনি ছিলেন কর্মপ্রেমী মানুষ। কাজই ছিল তার আনন্দ। যে কারণে তার অনুরোধ ছিল,আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা কোরো না। আমাকে যদি ভালবাস তাহলে একদিন বরং বেশি কাজ করো। 

দেশের সম্পদ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতাও দেশপ্রেমের অংশ। দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির যেন কোনো অপচয় না হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। পানির অপচয় সম্পর্কে নবীজী (স.) বলেছেন, যদি একটি প্রবাহমান নদীতে ওজু করতে যাও তবুও পরিমিত পানি ব্যবহার করো। আমরা কল ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করতে থাকি, এটি ঠিক নয়। রান্নার কাজে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয় তা আমরা অনেকেই কাপড় শুকানোর কাজে ব্যয় করি। অনেকে একটি দেয়াশলাইয়ের কাঠির খরচ কমাতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস জালিয়ে রাখছি। একজন দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের সম্পদ ব্যবহারেও সচেতন থাকেন।

অনেকে যত্র তত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখি। বাদামের খোসা,কলার খোসা নির্দিষ্ট স্থানে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আমরা যদি ময়লা আর্বজনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অঙ্গীকার করি তাহলে দেশের পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব। এটি আসলে অনেক বড়মাপের একটি কাজ।

এই যে আমরা কাজ করতে পারি না তার অন্যতম কারণ হলো হতাশা, নেতিবাচকতা,আলস্য, দীর্ঘসূত্রিতা। আমরা সবসময় হা-হুতাশ করতে থাকি। আমরা সময়ের কাজ সময়ে করি না। কতভাবে একটি কাজ না করা যায় তার পক্ষে যুক্তি দিতে পারি। অথচ মনে রাখতে হবে,আমি কাজটি করব এই বোধই কাজটি করার জন্যে যথেষ্ট। একটা মোমবাতির সাফল্য কোথায়? শুধু কি দাঁড়িয়ে থাকায়? না- জ্বলে জ্বলে চারপাশ আলোকিত করায়। এটাই তো মোমবাতির সাফল্য। আর আমাদের জীবনের সাফল্য কাজের মধ্য দিয়ে। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেছিলেন, কাজ হচ্ছে গঙ্গা জল। কাজই মানুষকে দুঃখের হাত থেকে বাঁচায়। হতাশা, বিষণ্নতা, ভয় ইত্যাদি নেতিবাচকতার আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। কাজ এমনই এক আশ্চর্য জিনিস যা মানুষকে ক্রমাগত এক উজ্জীবনী শক্তি দেয় ও আলোকিত করে রাখে।

এ ছাড়া আমরা নিজের দেশের প্রতি সবসময় নিরাশা পোষণ করি। ভাবি এদেশে থেকে কিছু হবে না। যত দ্রুত সম্ভব এ দেশ থেকে চলে যাওয়া ভালো। এখানকার আলো-বাতাস আবহাওয়া মাটি খাদ্যে বেড়ে উঠেছি আমরা। এই দেশটা যেমন একসময় সম্পদশালী ছিল আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এ বিশ্বাস রাখুন, ইতিবাচকভাবে ভাবুন। সদ্য প্রকাশিত এক বিশ্ব জরিপে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং আশাবাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। তাই আশাবাদী হোন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।

চিন্তা করুন কী কী দেয়ার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আপনার রয়েছে : আসলে প্রেম হলো কেবল দেয়ার নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ চিন্তা করেন নি যে কে কী পাবে। তারা যখন অপারেশনে বের হতেন ভাবতেন এটিই হয়তো তার শেষ যাত্রা বা শেষ অপারেশন। ফিরে আসবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তারা তখনো ভাবেন নি কে কী পাবে? তারা চিন্তা করতেন আমি কী দিতে পারি, কতটা দিতে পারি।

বড় বড় কাজ যখন  সময় হবে করব কিন্তু ঠিক এখনই কী করতে পারি? মন দিয়ে পড়তে পারি, মন দিয়ে কাজ করতে পারি, মন দিয়ে সন্তান লালন পালন করতে পারি, চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারি, নিরক্ষর মানুষটিকে অক্ষরজ্ঞান দিতে পারি। সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে পারি, ঘরের কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে পারি, সময়খাদক টিভি সিরিয়াল এবং ফেসবুক দেখা থেকে বিরত থাকতে পারি। যা যা আপনি পারেন তার কতটুকু আপনি করতে পারেন তা চিন্তা করুন।

 নিজেকে যোগ্য করা : নিজেকে শিক্ষা দীক্ষা ও জ্ঞানে-গুণে সুন্দর ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। না জানাটা দোষের নয় কিন্তু শিখতে না চাওয়াটা হচ্ছে দোষের। শেখার কোনো সুযোগকে হাতছাড়া করা যাবে না। যত মুক্তমন নিয়ে শিখব তত বেশি যোগ্য ও দক্ষ হবো। শুদ্ধাচার, আচার-আচরণ ও নৈতিক জ্ঞান সবকিছু শিখতে হবে।

আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমাদের এখন বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন আমাদের যুদ্ধ নিজের অক্ষমতার বিরুদ্ধে, নিজের অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, নিজের আলস্যের বিরুদ্ধে। আসলে নিজে বদলালেই পৃথিবী বদলে যাবে। এই সত্যকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি তাহলে আমাদের দেশ বিশ্বের সেরা জাতিতে রূপান্তরিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি এই দেশ আমাদের গর্ব, এ মাটি আমাদের কাছে সোনা। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। এ-কথা শুধু বললে হবে না। কাজের মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে এবং আমরা তা করব।

কেআই/