ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

কুমিরায় প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ

বাঙালি জওয়ানদের কাছে পাকবাহিনী ধরাশায়ী

জামশেদ উদ্দিন

প্রকাশিত : ০৯:১৯ পিএম, ২৬ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত বাঙালীদের ওপর পাকবাহিনী গণহত্যা চালায়। রাজার বাগ পুলিশ লাইনসহ পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি ক্যান্টনমেন্ট, পুলিশ স্টেশন, প্রশাসনিক স্পর্শকাতর স্থানে হামলা চালালো জান্তা পাকবাহিনী। এদিকে ২৫ মার্চ গভীর রাতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হতে পাক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল শফির নেতৃত্বে এক পাক কনভয় চট্টগ্রামের দিকে এগিয়ে যায়। এই পাক কনভয় ছোটখাট জনতার প্রতিরোধ ডিঙ্গিয়ে প্রায় একশ’ কিলোমিটার অদূরে কুমিরায় প্রথমবারের মত ধরাশায়ী হয় বীর বাঙালী ইপিআর জওয়ানদের হাতে।

অপর দিকে বাড়বাকুণ্ড ও পাক কনভয়ের উপর হামলা চালায় সাধারণ জনতা। এ সময় পাক বাহিনীর হাতে শহিদ হন বদিউল আলম প্রকাশ বাদশা মিয়া। এ পাক কনভয় সকাল ১১টার দিকে মিরসরায়ের শুভপুর ব্রীজটি পার হয়ে বারইয়ার হাট পর্যন্ত অতিক্রম করে। ২৫মার্চ গভীর রাতে ‘০০’ আওয়ারে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর এ স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সীতাকুণ্ডের সাব-পোস্ট মাস্টার পিযূষ কান্তি ভট্টাচার্য ও ভাটিয়ারীর সুলতান আহমেদ চেীধূরী পৃথক পৃথকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা-বার্তা টেলিফোনে  গ্রহণ করেন।

মুক্তিকামী জনতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা-বার্তা পেয়ে  ভাটিয়ারীর ধামার খাল ব্রীজ, বাড়বাকুণ্ডস্থ চিটাগাং কেমিকেল কমপ্লেক্সে ব্রীজ ও মিরসরায়ের শুভপুর ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে পাক কনভয় প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। শুভপুর ব্রীজটি উড়িয়ে দিতে ফজল হক বিএসসি (এমএলএ) ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের (এমপি) নেতৃত্বে। এছাড়া  কেমিক্যাল কমপ্লেক্স ব্রীজটি বিস্ফোরণ ঘটাতে নেতৃত্ব দেন ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন (এমপি)। ভাটিয়ারীর ধামার খাল ব্রীজটি উড়িয়ে দিতে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাসেম প্রকাশ রাজা কাশেম, মাস্টার মুছা আহমেদ চেীধূরী, টিএম ইসমাইল, ইঞ্জিনিয়ার সফি আহমেদসহ শতশত স্বাধীনতাকামী জনতা। এদিকে সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মামুন, সাধারণ সম্পাদক ডা.এখলাছ উদ্দিন,থানা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ডা. আখতারুজ্জামান, ছাত্রনেতা এস এম হাসান, আবুল কালাম আজাদ ও চট্টগ্রাম জেলা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দেয়।

ছোট কুমিরার বাইক্কার পোল ও চেীধূরী বাড়ির সন্মুখে অবস্থিত অশ্বত্থ বৃক্ষটিও কেটে ট্রাঙ্ক রোডে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন স্বাধীনতাকামী শদু মিয়া প্রকাশ শদু বলিসহ কাঠুরিয়ারা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই অশ্বত্থ বৃক্ষ অতিক্রম করার কালে অস্ত্র  বোঝাই পাক এক লরি দূর্ঘটনা কবলিত হয়। এতে পাকবাহিনী নড়ে চড়ে বসে। তারা প্রতিরোধের সম্ভাব্য আঁচ করতে পেয়ে রণকৌশলের ব্যাপক পরিবর্তন আনে। এ পাক কনভয় আরো ২ ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে রেল লাইন ও ট্রাঙ্ক রোড হয়ে দক্ষিণ দিকে মাচ করে।

১০২ বীর ইপিয়ার জওয়ান নিয়ে ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ঘোড়ামাড়া খালের উত্তর পাশে জাদুর বিলকে সামনে রেখে উত্তরমুখী এম্বুশ নেন।  এসকল বীর জওয়ানেরা চট্টগ্রামের পাহাড়তলী  থেকে ৩টি ট্রাকে করে কুমিরার ওই স্থলে এসে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। তখন বীর বাঙালী জওয়ানদের মুক্তিকামী জনতা পাকজান্তা বিরোধী  শ্লোগানে শ্লোগানে ও করতালি দিয়ে উৎসাহ দিতে থাকে।

ঠিক সন্ধ্যা ৭টায় পাক কনভয় জাদুর বিল অতিক্রম করার পাক্কালে বীর বাঙালী জওয়ানেরা ঝটিকা ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। সে কি ভয়াবহ দৃশ্য; পাক কনভয় ধরাশায়ীত হল। এ যুদ্ধে পাক ব্রিগেডিয়ার জামিল সহ ১৫২ জন সৈন্য প্রাণ হারায়।

আর বেঁচে থাকা অবশিষ্ট সৈনিকদের নিয়ে পাক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল শফি কুমিরা পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে আত্বগোপন করেন। এ যুদ্ধে ১১জন বাঙালী বীর জওয়ানও শহিদ হন।

(তথ্য সূত্রঃ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসঃ সীতাকুণ্ড অঞ্চল।)

লেখকঃ সাংবাদিক