ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মেগা প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহে পুঁজিবাজারকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:০৬ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৮:১১ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

দেশের চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্টিল এবং সিমেন্ট খাতের প্রধান নির্বাহী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, আমাদের দেশের শিল্প খাত ব্যাংক ভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। যখনই কোনো উদ্যোক্তার টাকার প্রয়োজন হয় তখন তারা সবার আগে ব্যাংকের কাছে যায়। কিন্তু ব্যাংকের স্বল্প মেয়াদী আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করা ব্যাংকিংসহ অর্থনীতির জন্য খুবই বিপদজনক। তাই দীর্ঘমেয়াদী মেগা প্রকল্পের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা উচিত।

অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০১৯ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারের অবকাঠামো খাতের কোম্পানি: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন, খাত সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নির্বাহী ও বিশেষজ্ঞরা। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনে এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ক প্রথম অনলাইন পত্রিকা অর্থসূচক তিনদিনব্যাপী এই এক্সপোর আয়োজন করেছে। গত বৃহস্পতিবার এক্সপোটি শুরু হয়েছে, যা আজ রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।

আজকের প্রথম সেমিনারটিতে সভাপতি ছিলেন দি ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের পরিচালক মাহফুজুর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ক্রাউন সিমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ খান, এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেসের পরিচালক মো. রেজাউর রহমান, জিপিএইচ ইস্পাতের নির্বাহী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক এফসিএমএ ও বসুন্ধরা গ্রুপের গ্রুপ কোম্পানি সেক্রেটারি নাসিমুল হাই।

এবিষয়ে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যত কোম্পানি আছে তার মধ্যে খুব কম সংখ্যকই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। অজ্ঞতা, সামান্য ট্যাক্স সুবিধা না নেওয়ার প্রবণতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা হারাবার আশঙ্কায় কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয় না। এছাড়া তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের ঝামেলা এড়াতে অনেকেই লিস্টেড হতে চান না।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে কোম্পানি সম্প্রসারণের জন্য যে ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সেরকম কোনো ঝামেলা নেই। একারণেই উদ্যোক্তারা বেশি বেশি ব্যাংকের দিকে ছোটে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট আইন পরিপালন করতে পারবে না বলেই অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন ক্রাউন সিমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ খান। এছাড়া বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণের ভয়েও পুঁজিবাজার থেকে দূরে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি।

বসুন্ধরা গ্রুপের কোম্পানি সেক্রেটারি নাসিমুল হাই বলেন, কোনো কোম্পানি যখন তালিকাভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারপর থেকে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হতে তিন বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু এই সময়টাতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বসে থাকতে পারে না। যে কোনোভাবে তার কোম্পানি চালাতে হয়। তখন বাধ্য হয়েই একজন উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়।

এবিষয়ে ইউনাইটেড সিকিউরিটিসের পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলোকে এই ট্যাক্স দিতে হয় ৩৫ শতাংশ। মাত্র ১০ শতাংশ ট্যাক্স অব্যাহতি যথেষ্ট মনে করেন না অনেকে। এছাড়া তালিকাভুক্ত হলে রেগুলেটরদের নির্দেশনায় আসার ব্যাপারে অনিহা রয়েছে পুঁজিবাজারের বাইরের ভালো ভালো কোম্পানিগুলোর।

এদিকে প্রতিবছরই শেয়ারবাজার এমন মেলা আয়োজনের দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোতে বিনিয়োগকারীদের অনেক অজানা তথ্যের উত্তর মেলে। আর এ কারণে প্রতি বছর মেলার আয়োজন চায় বিনিয়োগকারীরা। মেলায় যদি সব তালিকাভুক্ত কোম্পানি অংশগ্রহণ করতো তাহলে আরও ভালো হতো। তালিকাভুক্ত বিবিএস ক্যাবলস কোম্পানির স্টলে এসে বিনিয়োগকারীরা এমনটিই জানিয়েছেন।

মেলার বিবিএস ক্যাবলস, বিবিএস এবং নাহী এলুমিনিয়াম অংশগ্রহণ করেছে। এসব স্টলে ঘুরে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছে অনেক তথ্য জানতে চাচ্ছেন। তারা কোম্পানির খোঁজ খবরও নিচ্ছেন। কর্মকর্তারাও হাসি মুখে তাদের কথার জবাব দিচ্ছে।

আব্দুল জব্বার নামে একজন বিনিয়োগকারী বিবিএস ক্যাবলসে এসে জানতে চান, আপনাদের বিবিএস ক্যাবলস ইউনিট ২ এর খবর কি? কবে উৎপাদনে যাবে? তখন কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত ইউনিটটি শিগগিরই চালু হবে। তা সময়মতো নিয়মানুযায়ী বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।

বিবিএসের স্টলের অবস্থানরত বিনিয়োগকারী মো. সোহরাব হোসেন বলেন, এরকম মেলা প্রতিবছর প্রয়োজন। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসবেন এ মেলায়। তাতে আমরা তাদের নিকট থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে পারি।

মেলায় অংশগ্রহনকারী প্রতিষ্ঠান বিবিএস ক্যাবলসের সহরকারী ব্যবস্থাপক মো. গোলাম হাবিব বলেন, মেলায় অংশ নিয়ে বুঝলাম বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রশ্ন থাকে কোম্পানির নিকট। যা তারা সব সময় করতে পারে না। মেলা উপলক্ষ্যে অনেক বিনিয়োগকারী প্রতিদিন আসছে। তারা কোম্পানির খোঁজ খবর নিচ্ছে। মেলা একটি কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগকারীর সুসম্পর্কে মাধ্যম বলে মনে করেন তিনি। আর এমন মেলার ব্যবস্থা প্রতিবছর থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

আরকে//