ঢাকা, রবিবার   ০৬ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২১ ১৪৩২

টেলি সামাদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৫ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

ঢাকাই সিনেমার কমেডি কিং টেলি সামাদ সবকিছুর মায়া ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আজ শনিবার দুপুরে। তার মৃত্যুর খবর ছড়াতেই ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চলচ্চিত্রেরে এই প্রিয় মুখকে হারিয়ে অনেকেই স্মৃতিচারণ করেছেন। টেলি সামাদের মৃত্যুর খবর শুনে নির্বাক হয়ে যান এক সময়ের সহকর্মী ও ঢাকাই সিনেমার মিঞা ভাই খ্যাত নায়ক আকবর হোসেন খান পাঠান (ফারুক)। একসঙ্গে বেশকিছু সিনেমায় দেখা মিলেছে তাদের। নিজ নিজ ক্ষেত্রে চমক দেখিয়েছেন তারা।

নায়ক ফারুক টেলি সামাদকে স্মরণ করে বলেন, আমরা কি শুধুই এক সিনেমায় অভিনয় করেছি! আমার প্রাণের বন্ধু টেলিসামাদ। একে একে বন্ধু, প্রিয়জনরা হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের সিনেমার অনেক গুণী মানুষকে হারিয়েছি। এবার টেলি সামাদও চলে গেল। খবরটা পেয়েই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বন্ধু হারানোর বেদনা আসলে অনেক কঠিন।

টেলি সামাদকে স্মরণ করে চিত্র নায়ক রিয়াজ বলেন, অসম্ভব ভালো মানের একজন অভিনয় শিল্পী ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি ভালো গায়ক ছিলেন, পেইন্টার ছিলেন, খুব ভালো ছবি আঁকতেন। আপাদমস্তক শিল্পী বলতে যা বোঝায়। টেলি সামাদ ভাই সেটাই ছিলেন।
টেলি সামাদ আমাদের আইকন ছিলেন। তার সঙ্গে যে কটা সিনেমায় অভিনয় করেছি। প্রত্যেকটা ছবিতেই তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কেউ তার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে না।

টেলি সামাদের আসল নাম আবদুস সামাদ। বিক্রমপুরে জন্ম। বড় ভাই বিখ্যাত চারুশিল্পী আব্দুল হাই তাকে প্রভাবিত করতেন শৈশব-কৈশোরে। ভাইয়ের পথ ধরে তিনিও পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়।

ছবি আঁকতে জানতেন, গান করতে জানতেন, অভিনয়টাও পারতেন। তবে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতেন অভিনয়কেই। বিশেষ করে কৌতুক অভিনয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়তই কৌতুক অভিনয়ের প্র্যাকটিস করতেন তিনি। সেজন্য ক্যারিয়ার হিসেবে এটাকেই বেছে নিলেন।


এদেশের অভিনয়ের আঙিনায় অত্যন্ত রুচিশীল, মার্জিত, ভদ্র, বিনয়ী স্বভাবের একজন অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। একজন উচ্চশিক্ষিত তারকা হিসেবেও তিনি শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে।

ব্যক্তি জীবনে দুইবার সংসার পেতেছিলেন টেলি সামাদ। তার প্রথম স্ত্রীর সংসারে একমাত্র মেয়ে সোহেলী সামাদ বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধায় হঠাৎ করে বাবা আবার অসুস্থ হয়ে যান, আমরা তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসি। রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে লাইফ সার্পোটে দেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। আজ শনিবার দুপুর ১টা ৩০মিনিটে ডাক্তার প্রতিক দেওয়ান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

এদিকে টেলি সামাদের মৃত্যুর পর তার জানাজা নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। দুই সংসারের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা জানাজার দাবি উঠে। প্রথম পক্ষের বড় মেয়ে কাকলী দাবি করেন পশ্চিম রাজাবাজারেই টেলি সামাদ থাকতেন। এলাকাবাসী চায় সেখানেই জানাজা হোক তার বাবার।

অন্যদিকে টেলি সামাদের দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে একমাত্র পুত্র দিগন্ত সামাদও মগবাজারে তার বাবার জানাজা দাবি করেন। দিগন্ত তার মায়ের সঙ্গে মগবাজারেই থাকেন।

টেলি সামাদের দুই স্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েনের গল্প পুরনো। এই বরেণ্য অভিনেতার মৃত্যুও দুই সংসারের বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব মেটাতে পারেনি। জানাজা নিয়ে বিভক্তিতে দুই পরিবারের সেই চিত্রটাই ফুটে উঠলো।

১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন টেলি সামাদ। টিভি, চলচ্চিত্র ও মঞ্চে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা এবং গানের জগতেও তার অবাদ বিচরণ ছিল। ‘মনা পাগলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। চার দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে টেলি সামাদ অভিনয় করেছেন ৬ শতাধিক সিনেমায়।

এসএইচ/