ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নুসরাতের ময়নাতদন্ত চলছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৪ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:২৬ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ফেনীর সোনাগাজীর দগ্ধ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে।এরআগে তার মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে সুরতহাল সম্পন্ন হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার সময় তার মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড কাজ শুরু করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে নুসরাতের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও প্রভাষক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।

এ বিষয়ে ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানান, সকালেই নুসরাতের মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন তাদের হাতে আসে। এরপর ময়নাতদন্ত শুরু হয়।

এদিকে নুসরাতের সুরতহাল প্রতিবেদন লেখেন শাহবাগ থানার এসএই শামছুর রহমান। তিনি বলেন, সুরতহাল করে দেওয়া হয়েছে। কিছু বিষয়ে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের পরামর্শের কথা উল্লেখ করা আছে সুরতহাল প্রতিবেদনে।

সুরতহাল প্রতিবেদনে এসআই মোহাম্মদ শামছুর রহমান বলেন, সকালে ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে স্ট্রেচারে শোয়ানো অবস্থায় নুসরাত জাহান রাফির মরদেহ দেখতে পাই। নুসরাতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলী (৩৫) তাকে শনাক্ত করেন। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আয়া চাঁন বিবির সহায়তায় মরদেহটি ওলট-পালট করে দেখা হয়।

তিনি প্রতিবেদনে বলেন, নুসরাতের বয়স ১৮ বছর। মাথার চুল কালো ও পোড়া, লম্বা অনুমান ১৮ ইঞ্চি। কপাল স্বাভাবিক। উভয় চোখ ও মুখ বন্ধ, নাক দিয়ে সাদা ময়লা বেরিয়ে এসেছে। মুখমণ্ডল গোলাকার, উভয় কান, থুতনি, গলা, ঘাড়সহ পোড়া ও ঝলসানো। উভয় হাতের আঙুল পর্যন্ত রাউন্ড গজ-ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গলার নিচ থেকে বুক-পেট-পিঠ-যৌনাঙ্গ-মলদ্বারসহ উভয় পায়ের পাতা পর্যন্ত রাউন্ড গজ-ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গায়ের রঙ ফর্সা, লম্বা অনুমান ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। পরনে রাউন্ডগজ ছাড়া কিছু নেই, সরকারি চাদর দিয়ে ঢাকা।

সুরতহাল প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে ও ঢামেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক স্বাক্ষরিত মৃত্যুর প্রমাণপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়— গত ৬ এপ্রিল সকাল অনুমান পৌনে ১০টায় ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টার ভবনের ছাদে নুসরাত জাহানের গায়ে কেরোসিন অথবা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। আহত অবস্থায় লোকজন তাকে চিকিৎসার জন্য সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য একই তারিখে অর্থাৎ ৬ এপ্রিল বিকাল তিনটায় ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডের রেড ইউনিটে এনে তাকে ভর্তি করা হয়।

সুরতহাল প্রতিবেদনের বলা হয়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ হাসপাতালের দেওয়া মৃত্যু সনদে উল্লেখ থাকলেও নুসরাতের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

সুরতহাল প্রতিবেদনে নুসরাত প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের মতামত জানতে চাওয়া হয়।

সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিকারী এসএই শামসুর রহমানের সঙ্গে হাসপাতালে এএসআই মিনারা খাতুন ও কনস্টেবল মো. রমজান আলী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিচার চেয়েছেন তার বাবা এ কে এম মুসা।

তিনি বলেছেন, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি দেয়া হলেই আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।

উল্লেখ্য, এর আগে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম জানান, দগ্ধ অবস্থায় নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তার শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে যায়। এছাড়া রক্ত ও লাং ইনফেকশনের কারণে কার্ডিও রেসপাইরেটরি ফেইলিয়র হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

এসএ/