ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এদেশের অধিকাংশ ধর্ষকই সমাজের উচ্চ পর্যায়ের : আরমা দত্ত

আলী আদনান :

প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৯:৫৪ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

দেশের অধিকাংশ ধর্ষকই উচ্চ পর্যায়ের। এদেশে তারাই ধর্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় যাদের একটা স্ট্যাটাস আছে, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ ও অবদমিত করার ক্ষমতা রাখে। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়; তবে সেটা খুব কম। এমন মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে নিহত সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি’র করুণ মৃত্যু সম্পর্কে একুশে টেলিভিশন অনলাইনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

আরমা দত্ত বলেন, ‘খুব গরীব মানুষরা ধর্ষন করে না। করলেও সেটার মাত্রা খুবই কম। এখানে শ্রেণী বৈষম্যের একটা ব্যাপার আছে। তারাই ধর্ষক হয় যারা সাধারন মানুষকে শোষণ করতে পারে। যাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান আছে। সেই প্রতিষ্ঠানেও তারা উচ্চ পর্যায়ের। যাদের উপর সাধারন মানুষ নির্ভরশীল।’

একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আরমা দত্ত। তার পিতামহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ সর্বপ্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে (২৯ মার্চ) তার (আরমা দত্ত) পিতামহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও কাকা দীলিপ দত্তকে রাতের বেলায় পাকিস্তানী সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়। পরে আর তাদের লাশ পাওয়া যায়নি।

আরমা দত্ত বলেন, ‘এসমাজের অধিকাংশ ধর্ষকের কোন অভাব নেই। খাওয়ার অভাব নেই, টাকার অভাব নেই, সংসারে কোন কিছুর অভাব নেই। তারাও কণ্যার বাবা। তাদের স্ত্রী আছে, তারাও কোন না কোন মায়ের সন্তান। অর্থাৎ তাদের কোন ঘাটতি নাই, তাদের কোন অভাব নাই। তারাই এ ধরনের জঘন্য কাজগুলো করছে।’

বিভিন্ন উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি ধর্ষিতা যখন বিচার চাইতে থানায় যায় তখন পুলিশ তাকে আইনী সহায়তা না দিয়ে উল্টো যে দোষী তার পক্ষ অবলম্বন করে। ধর্ষককে বাঁচানোর জন্য নানা টালবাহানা করে।’

সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সম্পর্কে বলেন, ‘নুসরাত তার (মোয়াজ্জেম) কাছে কোন সহায়তা তো পায় নি, বরং হেনস্থার শিকার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতোমধ্যে মোয়াজ্জেমকে ক্লোজড করে দেওয়া হয়েছে। শুধু ক্লোজড নয়, আমি বলব এ ব্যাপারে যেন পুলিশ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়।’

পুলিশের এমন নেতিবাচক ভূমিকা সম্পর্কে আরমা দত্ত বলেন, ‘আমি আশ্চর্য্য হই, পুলিশ কীভাবে ধর্ষকের পক্ষ নেয়। পুলিশের কী মা নেই, বোন নেই, স্ত্রী নেই? স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ রাষ্ট্রীয় অভিভাবকের ভূমিকায় আছে। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা পুলিশের কাছে যাব। সেখানে পুলিশের নেতিবাচক ভূমিকা তাকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত সাড়ে ন’টায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসারত অবস্থায় প্রাণ হারান সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। এর আগে নিজ মাদ্রাসার ছাদে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন দিলে শরীরের আশি ভাগ পুড়ে যায়। ঘটনায় দায়ে অভিযুক্ত একই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

আআ/