ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ইটিভির জন্মদিনে বৃহৎ সন্দেশ: গিনেসে অন্তর্ভুক্তির দাবি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:১৬ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৫:২৬ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার

অতিথি পরায়ন ভোজন রসিক বাঙালি খাবার নিয়ে নিয়ে আগে থেকেই বেশ কৌতুহলী। ঐতিহ্যের বাংলা নববর্ষ সেই ধারাই রক্ষা করে চলছে বাঙালিদের হৃদয় পটে। আর খাবারের মধ্যে মিষ্টান্ন হয়ে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। যেকোন আচার-অনুষ্ঠানে খাবার শেষে একটু মিষ্টি মুখ না করলে আয়োজনই যেন পূর্ণতা পায় না। তাই পায়েস, দই, হরেক রকম মিষ্টি, জিলাপী, সন্দেশ না হলেই যেন নয়। আর বাংলা নববর্ষে বাঙালির মিষ্টি হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয়।

এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং দেশের প্রথম টেরিস্টেরিয়াল টেলিভিশন একুশে টিভির ২০ বছরে পদার্পন উপলক্ষে পৃথিবীর বৃহৎ সন্দেশের আয়োজন করা হয়েছে। টেলিভিশনের সেবা সংগঠন একুশে ফোরামের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫০ কেজি ওজনের ছানার সন্দেশটি কাটা হবে। এ নিয়ে এখন জেলাজুড়ে সবার মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, মানবতার কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন ইটিভি একুশে ফোরাম গত প্রায় ১০ বছর ধরে এনায়েতপুর-চৌহালীতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা, শহীদ মিনার নির্মাণ, দুঃস্থ শিক্ষার্থীসহ অসহায়দের সহযোগিতায় কাজ করে আসছে। পহেলা বৈশাখে ইটিভির ২০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এবার তারা বিশেষ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তারা। মিলাদ-দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, দিনব্যাপী বাউল উৎসবের পাশাপাশি ৫০ কেজি ওজনের সন্দেশের আয়োজন করেছে। তাঁত শিল্প ও দুগ্ধ ভান্ডার খ্যাত সন্দেশটি গাভীর ১০ মন দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এনায়েতপুর, শাহজাদপুর উপজেলার ঘোষদেশ সম্মিলিত বোর্ড এই বৃহৎ সন্দেশটি তৈরি করেছে। আয়োজক একুশে ফোরামের সভাপতি আখতারুজ্জামান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ডনু ও সমাজ-সেবক শওকত আলী জানান, ইটিভির প্রতিনিধি স্বপন মির্জা তার এই প্রস্তাবের কথা বললে আমরা বিষ্মিত হই। পরে ঘোষদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে তা তৈরি করেছি। আমাদের এজন্য ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।  ৩ হাত, প্রস্থ সোয়া ২ হাত ও উচ্চতা সাড়ে ৩ ইঞ্চি। আমরা সন্দেশটি তৈরি করতে  পেরে দারুণ আনন্দিত।

ফেসবুকে প্রচার করেছি বলে সাড়া দেশজুড়েই সন্দেশটি নিয়ে সবার মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরও জানান, আমরা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেছি, ২০১২ সালে চেন্নাই কিংসকে কলকাতা নাইটরাইডার্স চ্যাম্পিয়ান হবার পরে ইডেন গার্ডেন্সে টিম শাহরুখ খান কলকাতার বিখ্যাত নকুড়ের তৈরি ৩৪ কেজি ওজনের সন্দেশ কেটেছিল। তখন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিল। এটাই এ যাবৎকালের বড় সন্দেশ ছিল। এখন সে রেকর্ড ভেঙ্গে আমরা পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ৫০ কেজি ওজনের সন্দেশ তৈরি করেছি। আমরা চাই সন্দেশটি যেন গিনেস ওয়াল্ড রেকর্ড বুকে স্থান দেওয়া হয়। তারা আরও জানান, সন্দেশটি কাটতে এতিম শিশু, প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে অতিথিরা যোগ দেবেন।

সন্দেশের উদ্যোক্তা স্বপন মির্জা জানান, ভোজন রসিক বাঙালির ভিন্ন স্বাদের খাবারের প্রতি আকৃষ্টতা দীর্ঘ দিনের। অতিথি এলেই তাদের বুক উজাড় করে দেন আপ্পায়নে। তাই আমরা বড় আকারের সন্দেশ দিয়েই হাজারো মেহমানদের আপ্যায়িত করবো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উৎসাহী মানুষেরা এই সন্দেশ কাটা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

এদিকে সন্দেশটি তৈরি হয়েছে এনায়েতপুরের ঐতিহ্যবাহী রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারে। এর সত্ত্বাধিকারী রনজিৎ ঘোষ, পৌরজনার অসীত ঘোষ ও শ্রী শম্ভু জানান, আমরা এতো বড় সন্দেশ তৈরি করবো কখনো ভাবিনি। প্রথমে আমরা অর্ডারই নেইনি। পরে দুই থানার ঘোষদের সঙ্গে বসে সন্দেশটি তৈরি করেছি। আমরা পৃথিবীর বড় সন্দেশটি তৈরি করতে পেরে আমরা ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে আনন্দিত।

এলাকা জুড়েও এখন সন্দেশটি নিয়ে আগ্রহ ও উৎসাহের কমতি নেই। ছাত্র-ছাত্রী সবাই এ নিয়ে আনন্দিত। এ ব্যাপারে এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয়রে সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল মতিন মিয়া, সুধীর চন্দ্র রায়, চিত্র শিল্পী মোশারফ হোসেন খান, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা আসলেই অভিভুত। সন্দেশ পুরোটাই মুখে দিয়ে খাওয়া যায়। আর এ সন্দেশটি ৯ জন মিলে ধরে আনতে হয়েছে। সন্দেশটি কাটতে জাপান হতে আনা সুবিশাল সামুরাই সংগ্রহ করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বাড়ি থেকে। এখন কখন কাটা হবে সেই ক্ষণের অপেক্ষায় এনায়েতপুরবাসী।

কেআই/ এসএইচ/