ঢাকা, সোমবার   ০৭ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৩ ১৪৩২

কাল ময়মনসিংহে যাচ্ছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৪ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং রোববার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে যাচ্ছেন। তিনি এ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি এখানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। ক্যাম্পাসের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন।

তার আগমনে উচ্ছ্বসিত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। কলেজে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ডা. শেরিংকে বরণ করতে রঙিন সাজে সাজানো হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাস।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার স্মৃতিবিজড়িত গ্যালারি, ছাত্রাবাস, ছাত্র ক্যান্টিন, ডক্টরস ক্যান্টিন ও ইন্টার্নশিপের ওয়ার্ড পরিদর্শনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন বলে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, আগামীকাল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে লোটে শেরিং হেলিকপ্টারে করে ময়মনসিংহে পৌঁছাবেন। বেলা ১১টায় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে লোটে শেরিংয়ের ৭৭ জন সহপাঠীও এই আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরটি রাষ্ট্রীয় সফর। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে তিনি পড়াশোনা করেছেন। নিজের অতীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টানেই তিনি ময়মনসিংহ আসছেন। তাঁর সঙ্গে ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও থাকবেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বলেন, লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি এমবিবিএস কোর্স শেষ করে আরও একটি প্রশিক্ষণ নেন ময়মনসিংহে। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ছিলেন। সেই স্মৃতি থেকেই তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আসছেন।

এদিকে আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকে স্বাস্থ্য, কৃষি, জাহাজ চলাচল, পর্যটন ও জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারে ঢাকা ও থিম্পু পাঁচটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পরিবহন এবং ট্রানজিট কার্গো চলাচলে অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহারের বিষয়ে দ্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। নৌপরিবহনসচিব আবদুস সামাদ এবং ভুটানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব দাশো ইয়েসি ভাংদি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং রাজকীয় ভুটান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্য সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়। সই করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম এবং ভুটানের স্বাস্থ্যসচিব উগানদা দফু।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এবং ভুটানের কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিভাগের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিএআরসির নির্বাহী পরিচালক কবির ইকরামুল হক ও ঢাকায় ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোপদেন রাবগি।

বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) এবং ভুটানের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (আরআইএম) মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে সই করেন বিপিএটিসির রেক্টর ড. এম আসলাম আলম এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোপদেন রাবগি।

পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পর্যটন খাতে সহযোগিতা বিষয়ে ভুটানের পর্যটন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোপদেন রাবগি নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

এদিন ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাথে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পারিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

ভূটান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর এবং নৌরুট ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগের দিন শুক্রবার ঢাকায় এসেই বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতি ও জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। বিকালে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক মতবিনিময় করেন তিনি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র ডা. শেরিংয়ের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে বাংলাদেশ।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অষ্টাদশ ব্যাচের ছাত্র লোটে শেরিং এমবিবিএস পাস করার পর বাংলাদেশেই সার্জারিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। দেশে ফিরে যোগ দেন চিকিৎসকের পেশায়।

সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০১৩ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই তার দল ডিএনটি চমক সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডিএনটি জয়ী হলে ডা. শেরিং হন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

রোববার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর। ভোরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারার আয়োজনে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। পরে যাবেন নিজের পুরনো শিক্ষায়তন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। সেখানে বর্তমান শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হবেন তিনি।

বিমসটেকের সদস্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকায় এ জোটের সচিবালয়েও যাবেন লোটে শেরিং। তিন দিনের সফর শেষ করে ১৫ এপ্রিল তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

আরকে//