ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শমীকে নিয়ে উত্তাল মিডিয়া, কি ঘটেছিল সেদিন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৫ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৩৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সাংবাদিকদের সঙ্গে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে শমী কায়সারের আচরণকে ‘নিকৃষ্ট দুর্ব্যবহার’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে শমীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠন দুটি। শমী কায়সারকে নিয়ে মিডিয়ায় উত্তাল মিডিয়া। মুল ধারার মিডিয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে শমীকে নিয়ে বেশ সমালোচনা। আসলে কি ঘটেছিল সেইদিন প্রেসক্লাবে।

এক যৌথ বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এ আহ্বান জানান বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।

ডিইউজে যুগ্ম-সম্পাদক আকতার হোসেনের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, একজন শহীদ সাংবাদিকের মেয়ে হয়ে পিতার পেশার উত্তরসূরীদের ‘চোর’ বলে সম্বোধন করে শমী কায়সার প্রকারান্তরে তার পিতাকেই নিকৃষ্টভাবে অসম্মান করেছেন। শুধু তাই নয়, একজন সেলেব্রিটি হিসেবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘মোবাইল ফোন হারানো’র সূত্র ধরে যে আচরণ করেছেন, তা সেলেব্রিটিদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তার মত একজন অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয়।

এ ধরনের নিকৃষ্টতম দুর্ব্যবহারের জন্য সাংবাদিক সমাজের কাছে শমী কায়সারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, যত বড় সেলেব্রিটিই হোন না কেন, তার সংবাদ বর্জন করা হবে। প্রয়োজন হলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে সাংবাদিক সমাজ নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিস্তারিত জানাতে বাধ্য হবে।

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটনবিষয়ক সাইট ‘বিন্দু৩৬৫’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শমী কায়সার। তিনি ই-ক্যাবের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শমী কায়সার জানান, তার মোবাইল ফোন দুটি খুঁজে পাচ্ছেন না। এতে উপস্থিত অর্ধশতাধিক সাংবাদিক হতভম্ব হয়ে পড়েন। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

একপর্যায়ে শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মীরা মিলনায়তনের মূল গেট বন্ধ করে দেন। শমী কায়সার উপস্থিত সবার দেহ তল্লাশি করার কথা বললে সাংবাদিকরা তাতে সম্মতি দেন। দেহ তল্লাশি শেষে সাংবাদিকরা বের হতে চাইলে শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মীরা সাংবাদিকদের ‘চোর’ বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এতে সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করার উদ্যোগ নেন। এতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের লাইটিংয়ের দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মী মোবাইল ফোন দুটি নিয়ে বের হয়ে যান। ওই দৃশ্য দেখার পর সাংবাদিকদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন শমী কায়সার।

পরে শমী কায়সার সাংবাদিকদের উদ্দেশে তার ফেসবুকে লিখেন, ‘ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটনবিষয়ক সাইট ‘বিন্দু৩৬৫’র উদ্বোধনকালে বক্তব্য দিতে যাই আমি। বক্তব্য শেষ করে কেক কাটার সময়ই হঠাৎ দেখি- আমার স্মার্টফোন দুটি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফোন দুটিতে কল দিয়ে তখনো সচল পাচ্ছিলাম। আসলে মুঠোফোন আমাদের সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে সেখানে। আয়োজকরা ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে মিলনায়তনের মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিক ভাইয়েরা সহযোগিতার মনোভাবে দেহতল্লাশি করার অনুমতি নিয়ে এগিয়ে আসেন।

পরে সাংবাদিক ভাইদের ক্যামেরায় কিছু চলমান ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী স্মার্টফোন দুটি নিয়ে গেছে। তা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে মূলত অসাধু কারণে এখানে এসেছিল এবং সে এর আগেও প্রেসক্লাব ও শিল্পকলায় এইরূপ জঘন্য কাজ করেছে।

প্রেসক্লাব আমার নিজের জায়গা বলেই আমি দাবি অনুভব করি। আয়োজকরা এবং উপস্থিত সবাই আমার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। আমি স্বাভাবিক ভাবেই খুব আপসেট ছিলাম, কিন্তু আমি এমন কোনো অসম্মানজনক বক্তব্য দেইনি এবং আমি একজন দেশবরেণ্য সাংবাদিকের সন্তান হিসেবে তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটির জন্য সব উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করি। এটা আসলেই অনিচ্ছাকৃত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
তবে, তার ওই ঘটনার জন্য সাংবাদিকরা নিন্দা জানিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে সাংবাদিকরা শমী কায়সারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিকরা শমী কায়সারের এই ব্যবহার নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। ফেসবুকে তাকে নিয়ে নিন্দার ঝড় থামছে না।

এসএইচ/