ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা কম: প্রধান বিচারপতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪৩ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৮:৪৯ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

দেশে বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অপর্যাপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, বিচারকের অপর্যাপ্ততার কারণে প্রতিদিন মামলাজট বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ মানুষকে মাত্র ১০ জন বিচারক সেবা দিচ্ছেন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ১০৭, কানাডায় ৭৫, ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৮ জন বিচারক কাজ করে থাকেন।

দেশের বিদ্যমান বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচার-সংক্রান্ত একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরতে শনিবার (২৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলোতে বড়জোড় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয় আদালতে। আর আমাদের দেশে এর চিত্র ঠিক তার বিপরীত। এদেশে বিচারপূর্ব স্টেজে কেবল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। আর ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয় আদালতে, এটাই বেশি মামলা জট সৃষ্টি করছে ।

মামলা অনুসারে বিচারকের সংখ্যা অপযাপ্ত উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, প্রতিদিন মামলাজট বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে মাত্র ১০ জন বিচারক; যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০৭, কানাডায় ৭৫, ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়াতে ৪১ এবং ভারতে রয়েছেন ১৮ জন বিচারক।

হাইকোর্টে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি প্রতি বুধবার সাধারণ ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির জন্য গতবছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৬ টি বেঞ্চকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এসব বেঞ্চ সাড়ে ৩ মাসে ৮০ হাজার ৭৩৪ মামলার মধ্যে ৪১ হাজার ৪৬৪টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ দেন প্রধান বিচারপতি।

জার্মান সাহায্য সংস্থা জিআইজেড-এর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এটি স্বাধীন ও পদ্ধতিগতভাবে কাজ করে থাকে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জার্মানি। উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় দুই দেশই সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।

দেশের কারাগারগুলোতে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ এই জিআইজেড-এর আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পাদিত ন্যাশনাল জাস্টিস অডিটের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। এ ফলাফল উপস্থাপনের পর সুপ্রিম কোর্টের উপস্থিত বিচারপতিদের মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি জাফর আহমেদ প্রমুখ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিচারপতিরা মামলা জট কমানো এবং দ্রুত নিষ্পত্তিতে সাক্ষী সুরক্ষা আইন, দক্ষ প্রসিকিউটর নিয়োগ, নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করা, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নজরদারি ও দুর্নীতি দমন কমিশনে পর্যাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটির চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) বাংলাদেশের প্রধান জুডিথ হারবার্টসন, জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মাইকেল শুলথহাইস ও জিআইজেড বাংলাদেশের রুল অব ল’র হেড অব প্রোগ্রাম প্রমিতা সেনগুপ্ত।

এরপর বক্তব্য দেয়ার সময় এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আগামী একমাসের মধ্যে বিচারপতিদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে বসবো। এর মধ্যে সাক্ষী সুরক্ষা ও সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি সমাধানে আশা করি সরকার এগিয়ে আসবেন।

জাস্টিস অডিটের ফলাফল উপস্থাপন করেন- যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ম্যাপিং সেন্টারের পরিচালক জোসেপ এরিক ক্যাডোরা।
সভার শুরুতেই ন্যাশনাল জাস্টিস অডিটের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। জাস্টিস অডিটের তথ্যমতে, ৬৮ শতাংশ মানুষ আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পাবেন বলে বিশ্বাস করেন।

কিন্তু বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল হওয়া সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী। অর্থাৎ মাত্র ১৩ শতাংশ বিচারপ্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় দ্বারস্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে আদালতে ৩৪ লাখ মামলার জট তৈরি হয়েছে। আরো বেশি বিচারপ্রার্থী প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হলে পরিস্থিতি আরও ভিন্ন হতে পারতো।

জাস্টিস অডিটের ফলাফল উপস্থাপনায় দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালে মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে বিচারাধীন মামলার প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৪ শতাংশ, দায়রা আদালতে এই হার ১৬ শতাংশ এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এই প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে ২০২২ সালে মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত, দায়রা আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগে আগের বছরগুলো থেকে আগত মামলার পরিমাণ হবে যথাক্রমে ৭২ শতাংশ, ৮০ শতাংশ এবং ৯০ শতাংশ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে মামলা ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পদক্ষেপ নিতে উপস্থাপনায় পরামর্শ দেয়া হয়।

বিচার ব্যবস্থাকে আরো গতিশীল এবং জনমুখী করতে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট, মানবসম্পদসহ অন্যান্য সম্পদ বণ্টন নিয়েও আলোচনা করা হয়।

উপস্থাপনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা খাতে সরকারের বরাদ্দকৃত ১০ হাজার কোটি টাকার ৭ শতাংশ আদালতগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়ছে। এক্ষেত্রে যথাযথ বাজেট বরাদ্দের জন্যও উপস্থাপনায় সুপারিশ করা হয়।

আরকে//