ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

বাংলাদেশে কি নতুন আরেকটি রাজধানী শহর গড়ে তোলা সম্ভব?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১১ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৪০ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো জাকার্তা থেকে তার দেশের রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বলেছেন, জনবহুল জাকার্তা নগরীর নানা সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রেসিডেন্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা নগরীর এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, একদিন সেখানেও কী একই ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হতে পারে?

ঢাকা থেকে বাংলাদেশের রাজধানী কি অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া সম্ভব?

আর যদি সেটা করা হয়, তার জন্য কী অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশকে?

কাজটা যে খুব সহজ হবে না, এটা স্বীকার করছেন সবাই। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকট হবে একটা সুবিধাজনক জায়গা খুঁজে পাওয়া।

‘বাংলাদেশ জমি বুভুক্ষার দেশ। এত বেশি জমি একসঙ্গে পাওয়া, এটা এত সহজ নয়। একটা বিমানবন্দরের জায়গা খুঁজতে গিয়েই আমরা বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। জমি অধিগ্রহণ করাটাই বড় সমস্যা হবে, এটার জন্য আর্থিক ব্যবস্থা লাগবে।’

ঠিক এ কারণেই একটি নতুন রাজধানী শহর গড়ে তোলার ধারণার বিরোধী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুসলেমউদ্দীন আহমেদ।

‘আমাদের দেশটা এত ছোট এবং এতবেশি শহর আমাদের আছে, নতুন শহর আসলে আমরা আরবান প্ল্যানিং এর দৃষ্টিকোণ থেকে নিরুৎসাহিত করি। বাংলাদেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০০ শহর আছে। সব শহরে যদি আমরা সুষম নগরায়ন করতে পারি, তাহলে আসলে ঢাকার ওপর চাপ এমনিতেই কমে যায়।’

কিন্তু নতুন রাজধানী যদি গড়তেই হয়, সেটা গড়ে তোলা অসম্ভব নয়, বলছেন তিনি। ‘টাকা থাকলে, জমি থাকলে, টেকনোলজি দিলে, কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।’

একটি নতুন রাজধানী শহর গড়ে তোলার জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় করার দরকার হবে, সেটি কি আসলে অর্থনৈতিক বিচারে শেষ পর্যন্ত লাভজনক হবে?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলছেন, অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির ক্ষেত্রে আসলে অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের দেখতে হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রয়োজন অনুযায়ী ঢাকাকে আর কতটা বিস্তৃত করা সম্ভব। এবং সেটা করতে না পারলে আমাদের কী ধরণের ক্ষতি হবে। এটা পরিবেশের ক্ষতি, শিক্ষার ক্ষতি, স্বাস্থ্যের মানের ক্ষতি। যাতায়তের ক্ষেত্রে ক্ষতি। অন্যান্য দূষণের ক্ষতি। এ সব ক্ষতি যদি আমরা বিবেচনায় নেই, তাহলে হয়তো এই বিপুল বিনিয়োগ যথার্থ বলে দেখা যেতে পারে। আর বিনিয়োগটা তো একবারে হয় না। এটা ধারাবাহিকভাবে করা হয়।

অন্যদিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুসলেহউদ্দীনের মত হচ্ছে, একটা নগরী যদি বসবাসের অযোগ্য হয়ে গিয়ে থাকে, সেটিকে বসবাসযোগ্য করে তোলার যে খরচ, সেটি একটি নতুন নগরী গড়ে তোলার খরচের চেয়ে অনেক কম। সে দিক থেকে নতুন নগরী সব সময়েই অর্থনৈতিক বিচারে অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ।

কিন্তু তিনি বলছেন, রাজধানী শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয় একমাত্র বিবেচনা হতে পারে না।

‘আপনি একটা নতুন শহর গড়ে তুললেন, বিশ্বে অনেক দেশেই হয়েছে। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, কৃষ্টির প্রতিফলন খুব একটা থাকবে না। কোনও একটা দেশের রাজধানী হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে যদি আমরা একটা উপাদান ভাবি, নতুন শহরে নিশ্চিতভাবেই সেটা অনুপস্থিত থাকবে।’

অধ্যাপক আহমেদের মতে, এ কারণেই আসলে ঢাকা থেকে রাজধানী সরানো সহজ হবে না। ‘ঢাকার সঙ্গে আমার কালচারাল হিস্ট্রি অনেক বেশি জড়িত। এ ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে রাজধানী সরাতে একটা ভাবাবেগ কাজ করতে পারে।’

সূত্র: বিবিসি

একে//