ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

খাবারে মেশানো অ্যাসিড: হুমকিতে মানবদেহ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৬ পিএম, ৪ মে ২০১৯ শনিবার

খাবারে মেশানো হচ্ছে রাসায়নিক উপাদন। মেশানো হচ্ছে রঙ। এ ভেজাল মেশানো খাবার সেবন করার ফলে ডায়েরিয়া থেকে শুরু করে ক্যানসারের মত রোগ মানবদেহে দানা বাধছে। বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা আরো বলছেন, রাসায়নিক উপাদানে মিশ্রিত খাবার মানবদেহে ২০০ টির মত জটিল রোগ সৃষ্টি করছে।

ভেজাল বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, চিনিতে মেশানো হচ্ছে সাইট্রিক অ্যাসিড। এ অ্যাসিড আবার রুটি নরম করার জন্য ময়দাতেও মেশানো হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভেজালবিরোধী অভিযানে কতটুকু সাফল্য এসেছে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বলেন, উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এরই প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সারা বছরই সপ্তাহে ৫ দিন ভেজাল বিরোধি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আসন্ন রমজান উপলক্ষে এখন পুরো সাতদিনই বাজার অভিযান চালানো হচ্ছে।

 এ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, গত দুই মাসে শুধু ঢাকা শহরেই ভেজালবিরোধী অভিযানে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরির অপরাধে ৭ দিনে ৩৫ জনকে কারাদণ্ড সহ ২০ লাখ টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সূত্রানুসারে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ  হচ্ছে। এরফলে  প্রতি বছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ৫ বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রতিবছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু।

বঙ্গুবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের  মেডিসির বিভাগের ডা. বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ভেজাল খাবারের কারণে মানবদেহে ক্যান্সারসহ ২০০ টি জটিল রোগ ছড়াচ্ছে। সৃষ্ট ইনফেকশন নিম্ন আয়ের মানুষ এবং বয়স্কদের ওপর প্রভাব ফেলে বেশি। এছাড়া শিশু, গর্ভবতী নারীরাও খাবারজনিত সৃষ্ট রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডাক্তার জেবিন বলেন, খাদ্য জনিত রোগের মধ্যে রয়েছে পাকস্থলীতে ব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়া। খাবারে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মেশানোর ফলে খাদ্যে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়ার টক্সিন দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ক্যানসার এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতার মতো রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানাযায়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁগুলোকে মান নির্ধারণ স্টিকার দিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে ৫৭টি হোটেল-রেস্তোরাঁর মধ্যে ১৮টিকে ‘এ+’ এবং ৩৯টিকে ‘এ’ গ্রেডের স্টিকার দেওয়া হয়েছে। হোটেলগুলোর মানের উন্নতি-অবনতির সঙ্গে এই গ্রেড বাড়বে-কমবে।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভেজালবিরোধী বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কাজি গোলাম তৌসিফ বলেন, উন্নত দেশেও খাদ্যে ভেজাল ও দূষণের ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশেও ঘটছে।

তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য কী জিনিস, তা একসময়  সাধারণ জনগণের ধারণাই ছিলনা। এখন সাধারণ জনগণ  অনেকটা সচেতন হচ্ছে। ধীরে ধীরে আরও সচেতন হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, উৎপাদন ক্ষেত্রে এবং পরে সংরক্ষণ ক্ষেত্রে খাদ্য দূষিত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে এই দুটি জায়গায় কাজ করা জরুরি।