ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এক অনন্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৬ পিএম, ৭ মে ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:০৪ পিএম, ৭ মে ২০১৯ মঙ্গলবার

এটিএম শামসুজ্জামান। বাংলা চলচ্চিত্রের এক কিংবদন্তীতুল্য অভিনেতার নাম। তিনি কমোডি, খলনায়ক চরিত্রসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে গণমানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার কারণে পেয়েছেন তারকা খ্যাতি।

গুণী এই অভিনেতা ১৯৪১ সালে নোয়াখালি জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নুরুজ্জামান ও মা নুরুন্নেসা বেগম। আট ভাইবোনের মধ্যে শামসুজ্জামান সবার বড়। এটিএম শামসুজ্জামান লেখাপড়া করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে।

প্রায় ছয় দশক ধরে তিনি রূপালী পর্দার দর্শককে মাতিয়ে রেখেছেন। কখনও হাসিছেন কখনও বা কাঁদিয়েছেন অভিনয় শৈলী দিয়ে। ফলে পাঁচ পাঁচবার অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকও। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত এই অভিনেতা শুধু  অভিনয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি। পাশাপাশি তিনি পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার হিসেবে সমধিক পরিচিতি পেয়েছেন।

বরেণ্য এই অভিনেতা বর্তমানে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে লাইফ সার্পোটে আছেন। গত ২৬ এপ্রিল রাতে আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গত ৩ মে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে লাইফ সার্পোট খুলে নেওয়া হয়। সোমবার সকালে ফের তাকে লাইফ সার্পোট দেওয়া হয়। তিনি এখন  নিবিড় পর্যবেক্ষণ’ (আইসিইউ) আছেন।  

১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমাতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজের মাধ্যমে তার রুপালী জগতের পদচারণা শুরু হয় তার। এরপর ১৯৬৫ সালে অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে আসেন এটিএম শামসুজ্জামান। ‘জলছবি’তে প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্যকারের কাজ করেছেন। শতাধিক চিত্রনাট্যের কাহিনী লিখেছেন বরেণ্য এই অভিনেতা। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করলেও ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমনি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে দশর্কের কাছে পরিচিতি পান তিনি।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই গুনী অভিনয় শিল্পীকে। টেলিছবি, নাটকসহ রূপালি পর্দার নানা শাখায় স্বগৌরবে বিচরণ করেছেন তিনি। গত ২৬ এপ্রিল মুক্তিপ্রাপ্ত নাসির উদ্দিনের পরিচালিত ‘আলফা’ চলচ্চিত্র তিনি সর্বশেষ অভিনয় করেন। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

জলছবি, যাদুর বাঁশি, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়। নারায়ণ ঘোষ মিতার লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় এটিএম। খলনায়ক চরিত্রে অভিনিত তার উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্র হল অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক। এছাড়াও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অনন্ত প্রেম, দোলনা, অচেনা, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, চোরাবালি।

১৯৬১ সালে ‘বিষকন্যা’ চলচিত্রে উদয়ন চৌধূরির সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করা ছাড়াও খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তর মত গুনী পরিচালকদের সাথে কাজ করেন শামসুজ্জামান। শাবনূর-রিয়াজ অভিনীত ‘এবাদাত’ নামের চলচিত্রে ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

এমএস/কেআই