ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২২ ১৪৩১

কুরআনের আলোকে বিশুদ্ধ নিয়ত

অধ্যাপক মাওলানা আতিকুর রহমান ভূঁইয়া

প্রকাশিত : ০২:৪১ পিএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার

নিয়ত শব্দের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ় সংকল্প। আর শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের ইচ্ছায় কোনও কাজের দিকে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলে। নিয়ত সম্পর্কে ইমাম খাত্তাবী বলেন, তোমার মনের দ্বারা কোনও জিনিসের প্রতি লক্ষ্য আরোপ করা এবং নিজের দ্বারা এর বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া। নিয়ত শব্দের অর্থ সম্পর্কে আল্লামা বায়যাভী বলেছেন, যে বর্তমান কি ভবিষ্যতের কোনও উপকার লাভ বা কোনও ক্ষতির প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অনুকূল কাজ করার জন্যে মনের উদ্যোগ উদ্বোধনকেই বলে নিয়ত।

নিয়ত সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন মজীদে বলেন, ‘বলে দাও, প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।’ (বনী ইসরাইল ৮৪)

‘যে পরকালীন ফসল চায়, তার ফসল আমি বৃদ্ধি করি। আর যে দুনিয়ার ফসল চায়, তাকে দুনিয়া হতেই দান করি কিন্তু পরকালে তার কিছুই প্রাপ্য হবে না।’ (আল-শুরা ২০)

‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার নিয়ত রাখবে। আমি তাকে ইহজগতে যতটুকু ইচ্ছা প্রদান করবো, অতঃপর তার জন্য দোযখ নির্ধারণ করবো, সে এতে দুর্দশাগ্রস্ত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আখিরাতের নিয়ত রাখবে এবং এর জন্য যেমন চেষ্টার প্রয়োজন তেমন চেষ্টাও করবে। যদি সে মুমিন হয় এরূপ লোকদের চেষ্টা কবুল হবে।’ (বনী ইসরাইল ১৮-১৯)

বিশুদ্ধ নিয়ত সম্পর্কে হাদীস: হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যাবতীয় কাজের ফলাফল নিয়তের উপরেই নির্ভর করে। আর প্রতিটি লোক (পরকালে) তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যেই হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোনও স্বার্থ উদ্ধারের নিয়তে হিজরত করে, মূলত তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে।’ (বুখারী, মুসলিম)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না, বরং তোমাদের অন্তকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ্য করেন।’ (মুসলিম)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে, যিনি শহীদ হয়েছেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করে তার প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে ওইসব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি আমার এসব নিয়ামত পেয়ে কি করেছো? সে উত্তরে বলবে আমি আপনার পথে লড়াই করতে করতে শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বীর খ্যাতি অর্জনের জন্য লড়াই করেছ এবং সে খ্যাতি তুমি দুনিয়াতেই পেয়ে গেছো। অতঃপর তাকে উপুড় করে পা ধরে টেনে হেঁচড়ে দোযখে নিক্ষেপ করার হুকুম দেয়া হবে এবং সে দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। এভাবে হাজির করা হবে এমন ব্যক্তিকে যাকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা ও নানা রকম ধন-সম্পদ দান করেছেন। তাকে তার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে এসব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এসব পেয়ে তুমি কি করেছো? সে বলবে আমি আপনার পছন্দনীয় সব খাতেই আমার সম্পদ খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি দাতারূপে খ্যাত হবার জন্যেই দান করেছো। সে খ্যাতি তুমি অর্জনও করেছো। তারপর ফায়সালা দেয়া হবে এবং উপুড় করে পা ধরে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম)

(কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন গ্রন্থ থেকে)

এএইচ/