ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ডিজিটাল যুগের নতুন পথ প্রদর্শক হবে ডিটিএইচ সেবা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২৩ পিএম, ৯ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

দেশের সব অঙ্গনে লেগেছে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। বাড়ছে তারহীন প্রযুক্তির ব্যবহার। কিন্তু ঘরোয়া বিনোদনের প্রধানতম মাধ্যম স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সংযোগ এখনও রয়ে গেছে তিন দশক পুরনো ক্যাবল নেটওয়ার্কের অধীনে। এর ফলে দর্শকরা অনেক চ্যানেল দেখা থেকে বঞ্চিততো হচ্ছেনই পাশাপাশি যা দেখছেন তাও মানসম্পন্ন ছবি ও শব্দবিশিষ্ট নয়।

এদিকে গত দুই দশকে নেটওয়ার্ক ও টিভি সেট প্রযুক্তিতে এসেছে অনেকগুলো বড় পরিবর্তন। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ সারাবিশে^ ডিটিএইচ প্রযুক্তি টিভি দেখার অভিজ্ঞতাই বদলে দিয়েছে। একইসাথে তারবিহীন এ প্রযুক্তি মুক্তি দিয়েছে ডিশের তারের জঞ্জাল থেকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সংযোগ পদ্ধতি আধুনিকায়ন না হওয়ায় একদিকে গ্রাহক মানসম্পন্ন সেবা পাচ্ছে না অন্যদিকে আধুনিক ও স্মার্ট টিভির সত্যিকারের স্বাদ ও অভিজ্ঞতা পাচ্ছে না। আবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের তার চরসহ শহরের বাইরে প্রত্যন্ত-বিচ্ছিন্ন এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে বিপুল জনগোষ্ঠী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে পারছেন না।

অবাধ তথ্য প্রবাহের এ যুগে এখনও মানুষের বিনোদন এবং তথ্য পাওয়ার প্রধানতম মাধ্যম টেলিভিশন। স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো সে চাহিদা পূরণ করছে অনেক দিন ধরেই। ১৯৯২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবাদ চ্যানেল সিএনএন বিটিভি চ্যানেল ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রতিদিন কয়েক ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে। একই বছর বিবিসিও এটা শুরু করে। পরে ১৯৯৭ সালে এটিএন বাংলা স্যাটেলাইট টিভি সম্প্রচার শুরু করে। ১৯৯৯ সালে চ্যানেল আই এবং ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি)। বর্তমানে বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি কয়েকশ’ চ্যানেল সম্প্রচারিত হচ্ছে।

২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার পরিবারে টেলিভিশন ছিল। এর পর গত আট বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ প্রবৃদ্ধির ধারায় টিভির সংখ্যাও নিশ্চিত বেড়েছে। টিভি থাকা সিংহভাগ পরিবারেই ডিশ সংযোগ রয়েছে। ক্যাবল অপারেটররা বলছেন, দেশে ডিশ সংযোগের গ্রাহক রয়েছেন সর্বোচ্চ ৪০ লাখ। তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা তিন কোটির বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিশ অপারেটররা গ্রাহক সংখ্যা কম দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ডিজিটালাইজড বা ডিটিএইচ সেবায় প্রকৃত গ্রাহক সংখ্যা জানা যায়। ফলে এর মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির পথ বন্ধ করা যায়।

ডিশ সংযোগের তার বিদ্যুতের খুঁটিকে আশ্রয় করে ছড়িয়ে পড়ায় বড় ধরণের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিশের তার মনে করে বিদ্যুতের তারে হাত দিয়ে দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। ঝুলন্ত তার সড়ক-মহাসড়ক-গলির রাস্তায় জঞ্জাল তৈরি করেছে। যা শহর কিংবা গ্রামের সৌন্দর্য্যও নষ্ট করছে।

এদিকে গত প্রায় তিন দশকে টিভি সেটের প্রযুক্তিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সিআরটি টিভি অনেকটাই বাতিল হয়ে গেছে। এলসিডি, এলইডি, ওএলইডি, ইউএলইডিসহ এসেছে স্মার্ট টিভির নানা সংস্করন। আধুনিক টিভি সেটগুলোর অনেক ফিচার-বৈশিষ্ট্য ক্যাবল লাইনের সংযোগ দিয়ে উপভোগ করা যায় না। অর্থাৎ গ্রাহক টাকা দিয়ে টিভিসেট কিনেও সংযোগ প্রযুক্তির আধুনিকায়ন না হওয়ায় তার পুরো ব্যবহার করতে পারছেন না। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০০৩ সালে তারবিহীন উন্নত প্রযুক্তির ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) সেবা চালু হয়েছে। এর ফলে টিভি দেখার দারুণ অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন ওই দেশের জনগণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের সুবিধা-ফিচার সর্বোচ্চ উপভোগ করার জন্য ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) প্রযুক্তির বিকল্প নেই। প্রচলিত ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের স্থান দখল করে নিবে তারহীন এ প্রযুক্তি।

ক্যাবল লাইনের সংযোগ ছাড়াই স্যাটেলাইট টিভি দেখার উন্নত প্রযুক্তি হচ্ছে ডিটিএইচ। সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখা যাবে ঘরের টিভিতে। ডিটিএইচ সংযোগে থাকে একটি ছোট ডিশ অ্যান্টেনা, একটি সেট টপ বক্স,একটি রিমোট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। বাসা বা অফিসের ছাদে অ্যান্টেনা স্থাপন এবং টিভি সেটের সাথে সেট টপ বক্স সংযুক্ত করে গ্রাহক এ সেবা উপভোগ করতে পারেন।

ডিটিএইচ-এর অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে- গ্রাহকরা নিজেদের পছন্দের চ্যানেলগুলো নিজেরাই বাছাই করতে পারবেন। ক্যাবল অপারেটরের পছন্দ অনুযায়ী চ্যানেল দেখতে হবে না। ক্যাবল সংযোগে সিগন্যাল কেটে যায় বা ব্রেক হয়। ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে তা হয় না বলে বিরক্তি ছাড়াই চ্যানেলের সব অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়।

বিদ্যমান ডিশ ক্যাবল সংযোগে ৭০টির বেশি চ্যানেল দেখা যায় না। অপারেটররা বিভিন্ন সময় আরও বেশি চ্যানেল দেখা যায় দাবি করলেও তা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। এর বেশি চ্যানেল সংখ্যা বাড়াতে গেলে সিগন্যালের মান কমে যায়। ফলে টিভি অনুষ্ঠানের ছবি ও শব্দ অস্পষ্ট হয়ে উঠে। অথচ ডিটিএইচে অনায়াসে কয়েকশ’ চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভোগ করা সম্ভব। সর্বোপরি, ডিশ ব্যবসায়ী ও কর্মীরা বাজারে মনোপলি থাকার কারণে গ্রাহক সেবায় যে অবহেলা করেন তা থেকেও মুক্তি দিবে ডিটিএইচ।

 

টিআর/