ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

এই দেশে স্কুলে যাওয়া বিপদজনক, কিন্তু কেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪৭ এএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার

স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষের এক পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের বসার চেয়ার এবং ডেস্ক। শ্রেণিকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডে তারিখ লেখা আছে ১৫ই ডিসেম্বর ২০১৮। স্কুলটিতে এরপর আর ক্লাস হয়নি।

বুরকিনা ফাসো`র উত্তরে ফোবে শহর থেকে অল্প দূরত্বে এই স্কুলের অবস্থান। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক স্যামুয়েল সোয়াদোগো বিবিসিকে বলেছেন, এই এলাকায় একদল অস্ত্রধারির হামলার কারণে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

‘হামলাকারীরা অনেক স্কুল পুড়িয়ে ফেলেছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সেই হামলার ঘটনার পর স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক এবং কর্মীরা ভয়ে পালিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘যখন একজন শিক্ষককে হত্যা করা হয়, তখন কেউ কিছুই করেনি। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে।’

বুরকিনা ফাসো`র উত্তর, সাহেল এবং পূর্ব-এই তিনটি অঞ্চলে ২৮৬৯টি স্কুলের মধ্যে ১১১১টি স্কুল বন্ধ হয়েছে গত কয়েকমাসে।

দেশটির উত্তরের এই অঞ্চলগুলো মালি এবং নাইজার সীমান্তের কাছে। আর এই সীমান্তে জিহাদি জঙ্গিরা তৎপরতা চালাচ্ছে কয়েক বছর ধরে।

জঙ্গিদের হামলার কারণে সেখানে একের পর এক স্কুল বন্ধ হয়ে দেড় লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বুরকিনা ফাসোতে শতকরা ৫৮ভাগ শিশু প্রাথমিক স্কুল শেষ করতে পেরেছিল ২০১৬ সালে।

যে দেশে ৪২ভাগ শিশুই প্রাথমিক স্কুল শেষ করতে পারে না, সেই দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে থাকলে এর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

যে সব এলাকায় স্কুল বন্ধ হয়েছে. এর অনেক স্কুলে হামলার জন্য টার্গেট করেছিল জঙ্গিরা। কারণ জঙ্গিরা পশ্চিমা শিক্ষার বিরুদ্ধে সেখানে তৎপরতা চালাচ্ছে।

অনেক স্কুলের শিক্ষকরা নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির কারণে স্কুল বন্ধ রেখেছেন। তবে বিবিসি`র প্রতিবেদক ফোবে এলাকায় কিছু স্কুল খোলা পেয়েছেন। কিন্তু সেই স্কুলগুলোতে কোনো শিক্ষার্থী নেই। শেণিকক্ষগুলো ফাকা পড়ে আছে।

অভিভাবকরা আতংক বা ভয় থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। এমন একটি স্কুলের একজন শিক্ষক বলেছেন, বিপদজনক পরিস্থিতির কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের আসা যে বন্ধ হয়ে গেছে, এর অনেক শিক্ষার্থীই হয়তো আর কখনও স্কুলে ফিরে আসবে না বলে তিনি মনে করেন।

নিরাপত্তার হুমকি আছে, এরকম এলাকাগুলোর এক লাখের বেশি মানুষ শিশুদের নিয়ে বুরকিনা ফাসোর নিরাপদ জায়গায় ক্যাম্পে উঠেছেন।

জঙ্গি হামলার ভয়ের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণের অনেকে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এই আশ্রয় নেওয়াদের বড় অংশ শিশু। তাদের জন্য ক্যাম্পেই জরুরি শ্রেণিকক্ষ করে সেখানে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

বিবিসির প্রতিবেদক সেই ক্যাম্প পরিদর্শনে যেদিন গিয়েছিলেন, সেদিন অবশ্য তিনি জরুরি শ্রেণিকক্ষে শতভাগ উপস্থিতি দেখেছেন।

জাতিসংঘ বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিশুদের স্কুল যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে জঙ্গিরা শিশুদেরকেই নিয়োগের চেষ্টা করবে।

বুরকিনা ফাসো`র সরকার বলেছে, নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/