ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বইয়ের আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে যুক্ত করতে হবে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৩৬ পিএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৭:১৬ পিএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক, বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক মিনার মনসুর বলেছেন, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পূর্ণ হবে। অতএব, এই বছরটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যুক্ত করতে হবে। এটা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি একুশে টিভি অনলেইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতারও ৫০ বছর পূর্তি হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ পূর্তিকে সামনে রেখে আমার কিছু চিন্তা রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু চর্চার প্রসার ঘটানোটা খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি। কিশোর-তরুণরা সব সময় অনুসরণ করার মতো উদাহরণ খোঁজে। তাদের জীবন গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর চেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ আর কী হতে পারে!

মিনার মনসুর বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমার আরেকটা কাজ হলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রসারিত করা। আমি কতটা পারব জানি না, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য বিশাল একটা স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়ে যেতে চাই, যেমন আমাদের পূর্ববতী প্রজন্ম আমাদেরকে একটা দেশ দিয়ে গেছেন। রেখে গেছেন সোনার বাংলার স্বপ্ন।

তিনি আরও বলেন, যে চেতনা বা মূলনীতির ভিত্তিতে এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই চেতনা আমাদের সমাজে বাস্তবায়ন করার জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বই। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের যত আন্দোলন, স্বাধীনতা সব কিছুতেই এই সাহিত্য সংস্কৃতিই কিন্তু মূল ভূমিকা পালন করেছে।

মুক্তবুদ্ধির চর্চার যে আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মিনার মনসুর বলেন, আমি মনে করি, বই পড়ার আন্দোলন, পাঠাগার আন্দোলনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের যে ঐতিহ্য আমাদের আছে, সেটা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টাটা করতে হবে। মুক্তবুদ্ধির চর্চার যে আন্দোলন, যেটা আমাদের দেশে বহু আগে থেকেই ছিল, এই আন্দোলনটা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এইসব আন্দোলনেরই ফসল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।

পঁচাত্তরের নজিরবিহীন নৃশংসতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই নজিরবিহীন নৃশংসতা যখন সংঘটিত হয় সেই সময়ে এসএসসি পাশ করে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। দেশের যিনি স্থপতি ও রাষ্ট্রপতি তার বাসভবনে ঢুকে নিরস্ত্র মানুষগুলোকে যারা হত্যা করলো তাদের বেশিরভাগই ছিল রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত লোকজন। তারা কেবল শপথ ভঙ্গই করেনি, মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শকে বদলে দিতে চেয়েছিল। দেশটাকে পরিণত করতে চেয়েছিল মিনি পাকিস্তানে। আমি কখনোই এটা মেনে নিতে পারিনি। সে মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল, আমার উচিৎ তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেওয়া।

এদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ১০২ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি এবং জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬১ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটি করে সরকার। এরপর গত ৯ এপ্রিল জন্মশতবর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনে আটটি বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি গঠন করা হয় এবং গত ২০ মার্চ জাতীয় কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটির যৌথসভা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির কার্যালয় স্থাপন করে সেখানে কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। আসছে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ২০২০ ও ২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছর এক অনুষ্ঠানে বলেন, এ আয়োজনে সব বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। শিশু, তরুণ, যুবক- সবার জন্য আলাদা কর্মসূচি থাকবে। আয়োজনের বিস্তৃতি থাকবে দেশের সব ওয়ার্ড পর্যন্ত। আমরা এই সময়টাকে এমনভাবে কাজে লাগাতে চাই- বাংলাদেশ যেনো ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে ওঠে।

 টিআই/এসএইচ/