ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কূটনীতিবিদ হতে চাই: হৃদয় সরকার

নিলয় মামুন

প্রকাশিত : ১১:৪৪ পিএম, ১৩ মে ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৩:৩৫ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার

নেত্রকোনার ছেলে হৃদয় সরকার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যার জন্ম। কিন্তু তাতে কি? প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ছোট বেলা থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে নিজেকে বার বার প্রমাণ করছেন তিনি। স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে হৃদয় এখন পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মায়ের কোলে করে পরীক্ষা দিতে এসে আলোচনায় আসেন হৃদয়। ৩ হাজার ৭৪০ তম হয়েও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য তখনো কোন কোটা ছিলো না। পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। হৃদয়কে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী হিসেবে গণনা করে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আর তার মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়। এর আগে শুধু মাত্র দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক-প্রতিবন্ধীদের জন্য এই কোটা প্রযোজ্য ছিল। হৃদয় এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উঠে আসা ও ভবিষৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিলয় মামুন।

একুশে টিভি অনলাইন: অনেক চড়াই উতরাই পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। কেমন কাটছে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন?

হৃদয় সরকার: আজিমপুরে একটি ভাড়া বাসায় মায়ের সঙ্গে আছি। বাবা মাঝে মাঝে আসেন। তবে তিনি চাকুরির কারণে বেশিরভাগ সময়ই নেত্রকোনায় থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা চলছে। ভালোই কাটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়। এ সময়ের জন্যই তো অপেক্ষা করেছিলাম নবম শ্রেণী থেকে। স্বপ্ন দেখতাম একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। সে স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। এ জন্য এর সঠিক ব্যবহার করতে চাই। সময় গুলো কাজে লাগাতে চাই। বাসা থেকেই ক্লাস করছি। হলে তো এমন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দেখা শুনা করার মত অবস্থা নেই। তাই মায়ের সঙ্গেই আছি।

একুশে টিভি অনলাইন: স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় কী ধরনের সমস্যা আপনাকে বেশি মোকাবেলা করতে হয়েছে?

হৃদয় সরকার: স্কুল ও কলেজ ছিলো বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে। যেদিন রিকশা পেতাম সেদিন রিকশায় করে যেতাম। মা নিয়ে যেতেন। আর না পেলে মায়ের কোলে করে যেতাম। মা ক্লাসের সামনে বসে থাকতেন,যতক্ষন পর্যন্ত ক্লাস শেষ না হতো। ছোট থেকে আমাকে চলা ফেরার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে। শুধু মাত্র মনের জোর আর মায়ের সাহায্য আমাকে সব কিছু অতিক্রম করতে সহযোগীতা করেছে। মায়ের কোলের উপরই আমার নির্ভর করতে হয়েছে কলেজ পর্যন্ত। হয়তো জানেন,এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দিনও আমি মায়ের কোলে করে পরীক্ষা দিতে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এখন আমি হুইল চেয়ার ব্যাবহার করছি।

একুশে টিভি অনলাইন: বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য কেমন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আপনার কী কোনো সমস্যা হচ্ছে?

হৃদয় সরকার: বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ ভবনেই হুইল চেয়ার উঠানোর মত র‌্যাম্প নেই। শুধুমাত্র কলাভবন ও বিজনেস অনুষদ ভবনে আছে। এছাড়া বাকী ভবনগুলো হুইল চেয়ার উঠানোর মত ব্যবস্থা নেই। এতে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। প্রতিদিন হুইল চেয়ার নিয়ে কে আমাকে এমন সাহায্য করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে হুইল চেয়ার ব্যবহার করে। এছাড়া যারা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছে তারা ছাড়াও, যদি হঠাৎ কেউ কখনো দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হুইল চেয়ার ব্যাবহার করতে হয়। তাদেরও সমস্যায় পড়তে হবে। এটা শুধু শিক্ষার্থী না, শিক্ষকরাও এ সমস্যায় পড়তে পারেন । তাই এখন প্রতিটি ভবনে হুইল চেয়ার উঠানোর মত র‌্যাম্প তৈরি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

একুশে টিভি অনলাইন: অনেক কষ্ট করে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। পাশ করে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? স্বপ্নটা কি?

হৃদয় সরকার: যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়ছি। এখন একটাই চাওয়া যেন রেজাল্টটা ভালো হয়। আমার ইচ্ছা একজন কূটনীতিবিদ হওয়ার। যার মাধ্যমে জাতি সংঘের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাই। আর এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে চাই।

একুশে টিভি অনলাইন: যারা এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠছেন তাদের জন্য কিছু বলুন।

হৃদয় সরকার: যেহেতু এখন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই সেহেতু সবাইকে বলবো একটু ধৈর্য ধরে স্কুল ও কলেজটা কৃতিত্বের সঙ্গে পার করুন। তারপর এখানে ভর্তি হতে পারলেই আপনার স্বপ্নটা অবশ্যই বাস্তবে রুপ দিতে পারবেন। যদি আপনার মনের জোর থাকে। আর এমন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চাদের বাবা-মায়ের উদ্দ্যেশে বলবো- তারা সব সময় চিন্তা করে আমরা মারা গেলে আমাদের এমন বাচ্চাদের কে দেখবে? তাদের বলবো নিজেরা সাহস না হারিয়ে সন্তানদেরও সাহস দিন। তাদের পড়াশুনা করান। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে পারলেই সে নিজেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। আর কারো করুণা বা বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে না।

একুশে টিভি অনলাইন: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার সফলতা কামনা করছি।
হৃদয় সরকার: একুশে টিভি অনলাইনকেও ধন্যবাদ।

এসি