ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে: ডা. আশীষ

তানভীরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ০৬:০১ পিএম, ১৪ মে ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২০ শনিবার

ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী

ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী

গত একদশকে বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন একটা এনজিওগ্রাম করার জন্য কমপক্ষে ভারতে যেতে হত। এখন দেশে ৩৫ টিরও বেশী কার্ডিয়াক সেন্টার আছে যেখানে ওয়ান স্টপ কার্ডিয়াক সার্ভিসেস রয়েছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলে তিনি। এসময় তিনি বলেন, এখানে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটেছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (সাবেক- আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী। দেশের চিকিৎসা সংকট, ডাক্তার রোগীর সম্পর্কের নানা দিক, চিকিৎসা ব্যবস্থার সমস্যা ও সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে কথা বলে গণমাধ্যমে বেশ প্রশংসা পেয়েছেন ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী। সমাজে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্যও খ্যাতি রয়েছে তার।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর একটা হচ্ছে মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচার। যখন কোন একটা ঘটনা ঘটে, সারা পৃথিবীতেই কিন্তু এমন ঘটনা ঘটছে। কোন রোগী যখন মারা যায়, হতে পারে সড়ক দূর্ঘটনার পর হাসপাতালে নিতে নিতে বা হাসপাতালে নেওয়ার পর রোগী মারা গেল। কিন্তু মিডিয়া যদি তখন নিউজ করে "ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু" তখন খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তিনি বলেন, কোন গ্রামের হাসপাতালেও যদি কোন ঘটনা ঘটে- অনেক ক্ষেত্রে সেটা দিয়েই গণমাধ্যম দেশের সকল হাসপাতালগুলোকে এমনকি পুরো চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে তুলনা করে থাকে। যা কাম্য নয়।

ডা. আশীষ গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বিষয়টির খুব গভীরে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত সত্যটি তুলে আনার চেষ্টা করুন। এতে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

এদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বড় সংকট কী এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আশীষ বলেন, এদেশে স্বাস্থ্যখাতে মানুষের কোন বাজেট নাই। আমরা ঈদে- কোরবানে বাজেট রাখি। রমজানে বাজেট রাখি। পোশাক কেনার জন্য বাজেট রাখি। কিন্তু চিকিৎসার জন্য কোন বাজেট নাই। যখনই কেউ ডায়াবেটিস, প্রেসার বা কিডনি ফেইলিওর হয়ে যায় বা আইসিইউতে ভর্তি হয় তখন মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে। কারণ চিকিৎসার টাকা নাই।

ডা. আশীষ এমন সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবীমা একদম ফাঁকা জায়গায় আছে। প্রচলিত যে বীমা সচরাচর সব জায়গায় দেখা যায় সেটা হলো লাইফ ইন্সুরেন্স।

লাইফ ইন্সুরেন্স বা জীবন বীমার সমালোচনা করে তিনি বলেন, লাইফ ইন্সুরেন্স পাওয়া যায় তখন যখন কারো হাত কাটা যায় বা পা কাটা যায়। আবার বয়স হতে হয় পঁয়তাল্লিশ। খুবই হাস্যকর।

স্বাস্থ্যবীমার গুরুত্ব প্রসঙ্গে ডা. আশীষ বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে স্বাস্থ্য বীমা চালু আছে। সেখানে এলআইসি চালু করেছে কার্ডিয়াক প্রিমিয়াম। বছরে একবার তিন হাজার নয়শ নিরানব্বই রুপী দিবে। বিনিময়ে যদি তার বুকে ব্যাথা হয়, হার্টে রিং পরানো হয়, হার্ট সার্জারী লাগে সবকিছু ফ্রি দেওয়া হয়। কেন? কারণ, অনেক মানুষ এটি করছে। ফলে ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলো লাভবান হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন যিনি রোগী তিনি।

অর্থমন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করে ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন। এদেশে ষোল কোটি মানুষ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে যদি কাজে লাগানো যায় অল্প প্রিমিয়াম দিয়ে বিশাল ফান্ড করা সম্ভব। কোন রোগী যদি জানে আড়াই লাখ টাকার বাইপাস সার্জারীতে সে শুধু ওষুধ খরচ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে হবে এবং বার্ষিক পাঁচ হাজার টাকার প্রিমিয়াম দিলে হবে তাহলে সবাই এ বীমা করতে উৎসাহী হবে।

হাসপাতালগুলোতে প্রায় ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে এমন ইঙ্গিতে ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, এদেশে হাসপাতালগুলোকে রোগীর সাথে রোগীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা এসে ভীড় জমায়। যারা প্রকৃতপক্ষে রোগীর কেউ না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের হাসপাতালগুলোতে এরকম কোন সুযোগ নাই। বিদেশের হাসপাতালগুলোতে কেউ লিগ্যাল আইডি ছাড়া রোগী সম্পর্কে কোন তথ্য জানার অধিকার রাখে না। কিন্তু আমাদের দেশে হাসাপাতালে রোগী আনার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর আত্মীয়দের হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়। দেখা যায় রোগীর আসল আত্মীয়দের দেখা নাই। সব চতুর্থ বা পঞ্চম পর্যায়ের আত্মীয়। তারা ডাক্তারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আর যদি রোগী কোন রাজনৈতিক নেতা কর্মী হয় তাহলে তো কথাই নেই।

তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে ইন্টার্নী চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রায় দেখা যাচ্ছে রোগীর স্বজনরা ইন্টার্নীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা এমনকি হাতাহাতিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা একপর্যায়ে গিয়ে বড় দুর্ভোগের জন্ম দেয় সারা দেশে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনের মধ্যমে সাধারণ রোগীদের অনুরোধ জানিয়ে ডা. আশীষ বলেন, আমি অনুরোধ করব আপনারা (সাধারণ রোগী) হাসপাতালে আপনাদের প্রকৃত স্বজনদের নিয়ে যান। অন্যকেউ যদি আসেও তাদের অনুরোধ করুন তারা যেন হাসপাতাল থেকে চলে যান। কারণ, বড় সমস্যা সৃষ্টি করে রোগীর বাইরের স্বজনরা যারা আসলে রোগীর কেউ নয়। যারা ঝামেলা করে তারা অনেক সময় জানেও না রোগী পুরুষ নাকি মহিলা।

তিনি অক্ষেপ করে বলেন, এ বিষয়গুলো যদি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয়। তারা ধরে নেয়, হাসপাতালে বোধ হয় ঝামেলা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করে ডা. আশীষ আরও বলেন, আমি আরেকটি বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করব। আমরা দেখি যখন তখন যে কেউ এসে যত্রতত্র ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক খুলছে। এগুলো তদারকি করার কেউ নেই। একটা পর্যায়ে গিয়ে এগুলোর মান আর থাকছে না। ফলে তা দুর্নাম ছড়াচ্ছে যার ফলে মানুষ পুরো দেশের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাচ্ছে। এসময় তিনি এসবের তদারকি বাড়ানোর জন্যও জোর দাবি জানান।

আআ/এসি