ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বল্টু_সমাচার ৬

আবদুল জাববার খান

প্রকাশিত : ০৯:৫০ এএম, ১৬ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

রিকশা জার্নির পুরো সময়টাতেই বল্টু সোজা টাইট হয়ে বসে রইল। মাঝে মধ্যে খানাখন্দে পড়ে কয়েকটা ঝাকুনি অবশ্য শরীরের কলকব্জা নাড়িয়ে দিয়েছে।

সোজা হয়ে বসে থাকার কারণ একটা আছে। নতুন কেনা স্যুট পরেছে। জরিনার বাসায় আসা উপলক্ষে। স্যুট টা গায়ে খানিকটা টাইট লাগছে। টাইট স্যুট গায়ে দিলে টাইট হয়েই বসে থাকতে হয়। কেনার সময় এটা বোঝা যায়নি। ব্র্যান্ড শপের সেলসম্যানটা ভীষণ স্মার্ট! প্রথম কথাতেই বললো,

: আপনার তো কোল্ড অ্যালার্জি আছে। আমাদের দোকানের এসির ঠাণ্ডায় হাঁচি দিয়েই যাচ্ছেন। এই স্যুটটাই আপনার জন্য বেস্ট হবে। বলে, একটা স্যুট এগিয়ে দিলো। এক্সট্রা প্যাড দেয়া আছে। দেশি শীততো বটে, সাইবেরিয়ান ঠান্ডাও পাত্তা পাবেনা এর কাছে। অবশ্য প্রাইস একটু বেশি পড়বে। বলে হিপনোটিক একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে রইলো।

বল্টু্ও ভাবলো,

: তাইতো! দাম বেশি হলেও কাজের জিনিস। নেবোই যখন, ভালোটাই নেই! ভুলে গেলো যে শীত প্রায় শেষ।

সেলসম্যান স্যুটটা একটা সুন্দর ব্যাগে ভরে এগিয়ে দিয়ে বললো,

: দাম বেশি হলেও ফলাফল হাতেনাতে টের পাবেন!

টের অবশ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এক্সট্রা প্যাডের ঠেলায় ভেতরটা ঘেমে একাকার! ইচ্ছে করছে, এইসব স্যুটফুট ফেলে দিয়ে খালি গায়ে কোন একটা পুকুরে গিয়ে ডুব দিয়ে বসে থাকে।

 

জরিনাদের বাসার বাইরের গেটটা দেখা যাচ্ছে। ওরা থাকে দোতলায়।

একটা চাপা উত্তেজনায় বুকটা ঢিপঢিপ করছে। শেষ পর্যন্ত জরিনা তাকে বাসায় দাওয়াত দিয়েছে! তাও আবার ঈদের দিনে!

এতোটা কখনও বল্টুর কল্পনাতেও আসেনি।

জরিনার প্রতি মনটা কৃতজ্ঞতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। হাঁসফাঁস করে নেমে রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিলো। বকশিশ দিলো বিশ টাকা।

আজকের দিনে বকশিশ না দিলে আর কবে দেবে!

 

দুবার কলিং বেল টিপতেই ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গেল। খোলা দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে জরিনার ছোট বোন রুবিনা। দুই বোনের চেহারায় ভীষণ মিল আছে!

কৌতূহলী দৃষ্টিতে বল্টুর মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখছে। মুখে হাসি। বললো,

: আপনি বল্টু ভাইয়া!

বল্টু মাথা ঝাকালো। বললো,

: ঈদ মোবারক!

: ঈদ মোবারক! ভেতরে আসুন! আপনার সাথে এই আমার প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই আপনি সুপার হিট! বলতে বলতে রুবিনা সোফার দিকে ইঙ্গিত করে বসতে বললো।

তারপর আবার তড়িঘড়ি করে বললো,

: এক মিনিট প্লীজ! আপনার হাইট তো শুনেছিলাম পাঁচ ফিট পাঁচ ইঞ্চি। এখনতো দেখছি আরো বাটুল! আচ্ছা, আপনি কি জুতার হিলসহ হাইট মাপেন? প্রশ্নটা করে মেয়েটা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো একটা সোফার উপর।

: তাছাড়া, এই গরমে এরকম একটা বস্তা গায়ে দিয়েছেন কেন? ঘেমেনেয়ে তো শেষ অবস্থা! বসুন! আমি পানি নিয়ে আসি! নাহলে, ডিহাইড্রেশনে মরে যাবেন।

আফটার অল, আমার আপুর প্রিয় মানুষ আপনি।

বলে হাসতে হাসতে ভেতরে চলে গেল।

 

বল্টুর রীতিমতো কান্না পেয়ে গেল।

রুবিনা মেয়েটা ভীষণ রকমের বেয়াদব!

ফ্যামিলির হবু জামাইয়ের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়, এখনও তালিম পায়নি।

দাঁত কিড়মিড় করে ভাবলো,

: সময় আসুক! বেয়াদবি সব বের করবো! তুই বিয়ের সময় কতো লম্বা জিরাফ পাস, দেখা যাবে...!

পর্দা সরিয়ে জরিনা উঁকি দিলো। স্মিত মুখে বললো,

: ঈদ মোবারক! কেমন আছেন?

তরমুজ লাল কালারের পাতলা শাড়ি পরা।

শিফন না কি যেন একটা নাম হবে বোধহয়। চমৎকার করে সাজুগুজু চেহারা! হাতে বোধহয় এক্সট্রা নেইল লাগিয়েছে। লাল রঙের নেইল পলিশ ঝকঝক করছে! একদম নায়িকার মতো দেখাচ্ছে! শাড়িটা টানটান করে নাভির বেশ খানিকটা নিচে পরেছে। শারীরিক সৌন্দর্যের বেশ কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এই উর্বশীর রুপের ধাক্কায় বল্টুর কন্ঠ শুকিয়ে গেল। ভাবলো, জরিনা যে এতোটা সুন্দর, এটা আগে ভালো করে দেখা হয়নি কেন! বোনটা বেয়াদবের হাড্ডি! কিন্তু জরিনা হচ্ছে লক্ষ্মী একটা মেয়ে। বল্টু আসবে বলে আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। এই তরমুজ লাল রঙের শাড়ি যেখানেই পাবে, জরিনার জন্য কিনে ফেলবে। যাতে অন্য মেয়েরা পরার সুযোগ না পায়। তবে, বুঝিয়ে বলতে হবে, এভাবে বিয়ের আগে এতোটা এক্সপোজ না করাই ভালো। এরকম ঈদের দিনে কতো ধরনের মেহমান বাসায় আসতে পারে। পর্দা বলে শরীয়তে একটা ব্যাপার আছে!

একটা সোফায় বসতে বসতে জরিনা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

: নেন, পানি খান! চুপ মেরে আছেন যে...!

বল্টুর মুখ দিয়ে কথা সরছে না।

কোন রকমে বললো,

: না না, কই! এইতো বলছি...ঈদ মোবারক!

গলার স্বর আরও নামিয়ে বললো,

: আমি যে এসেছি, এটা খালাম্মা জানে?

: জানবে না কেন! মা`ইতো আপনাকে ইনভাইট করতে বললো। একেতো ঈদ। তার উপর আজকে আবার আমাকে দেখতে আসবে। ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। ইন্জিনিয়ার। শুধু বিয়ের জন্য কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে এসেছে দেশে। ঈদ টিদের ধার ধারছে না। ফ্যাশনেবল শিক্ষিত মেয়ে চাই। আমার খালার পরিচিত। ওরাই দেখাদেখির আয়োজন করেছে। ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো,

: আমার আবার এইগুলাতে কোন আগ্ৰহ নেই! তাই মা বললো, তোর ভাইয়াকে ডাক! কথাটথা বলার লোক লাগবে না! আপনিতো জানেনই যে আব্বু দেশের বাইরে থাকে। তাছাড়া ঈদের একটা ব্যাপার আছে না! এখন কথা যা বলার আপনিই বলবেন। আমি এসবের মধ্যে নেই!

পারবেন না ভাইয়া? বলে বল্টুর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জরিনা।

 

কি হচ্ছে এসব! বল্টু্র মাথা পুরাই আউট হয়ে গেল! এই মেয়ে বলে কি! ভাবলো,

: খবিস মাইয়া! কোন আগ্রহ নেই! তাহলে আলগা নখ লাগিয়ে আধা নেংটা হয়ে বসে আছিস কিসের আশায়! নেকু একটা....!

এই গরমে নতুন স্যুট পরে তোর বাসায় না এসে আমার এন্টার্কটিকায় চলে যাওয়া উচিত ছিল। অন্ততঃ ঠান্ডা কন্ট্রোলের পরীক্ষাটা হয়ে যেত!

বল্টু্র মুখ থেকে কোন কথা বেরুচ্ছে না।

শুধু গোঙ্গানির মতো একটা শব্দ বেরুলো।

 

জরিনাদের চালবাজিতে এভাবেই বল্টুভাইদের কতো কথা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে, কে জানে! আহা...!

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বসুধা বিল্ডার্স লি.।