ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কুরআনে কৃপণ ব্যক্তির পরিণতি জেনে নিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ১৮ মে ২০১৯ শনিবার

কোন বঞ্চিত, অবহেলিত বা অধঃপতিত মানুষ যদি কুরআনের মর্মবাণীকে অনুধাবন করতে পারে, অনুসরণ করতে পারে, তাহলে সেও পরিণত হবে যথার্থ মানুষে, সফল মানুষে, আলোকিত মানুষে। ধন-সম্পদ, অর্থ-কড়ি সবকিছুই আল্লাহর দান। কৃপণতা আল্লাহ পছন্দ করেন না, শাস্তিরও বিধান রেখেছেন।

কৃপণতা সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর বখিল বা কৃপণ হতে উৎসাহ যোগায়। অপরদিকে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা ২৬৯)

‘কিন্তু যখনই তিনি তাঁর অনুগ্রহ-সম্পদে ওদের ধন্য করলেন, তখন ওরা কৃপণের ন্যায় ধন-সম্পত্তি আঁকড়ে ধরল এবং (আল্লাহর সঙ্গে) অঙ্গীকার ভঙ্গ করল।’ (সূরা তওবা ৭৬)

‘বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দান করে এবং যাদের শ্রম ছাড়া দান করার মতো আর কিছুই নেই, তাদের নিয়ে এই (ধনশালী কৃপণ) মুনোফেকরা ঠাট্টাবিদ্রূপ করে। আল্লাহ অবশ্যই এই বিদ্রূপের প্রতিফল দান করবেন। ওদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন আজাব।’ (সূরা তওবা ৭৯)

‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃপণ হয়ো না বা অন্যকে সাহায্য করতে অনিচ্ছুক হয়ো না। আবার ব্যয়ের ক্ষেত্রে মুক্তহস্ত হয়ে (তোমরা সামর্থে্যর) সীমা ছাড়িয়ে যেও না। যদি করো, তাহলে তুমি নিন্দিত বা নিঃস্ব হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৯)

‘(এ বিষয়টি তোমাদের জানা থাকা প্রয়োজন) যাতে তোমরা যা হারাও তার জন্যে বিষণ্ন  না হও আবার আল্লাহ যা দেন তাতে অতিরিক্ত উল্লসিত ও গর্বিত হয়ে না যাও। উদ্ধত, অহঙ্কারী, কৃপণ ও কার্পণ্যে প্ররোচনা দানকারীদের আল্লাহ অপছন্দ করেন। (ধর্ম বিধান থেকে) কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলেও (তাতে আল্লাহর কোন ক্ষতি নেই। কারণ) আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সদাপ্রশংসিত।’ (সূরা হাদিদ ২৩-২৪)

‘জাহান্নাম সেদিন উচ্চস্বরে ডাকবে তাদের, যারা ন্যায় থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, যারা ধন-সম্পত্তি সংগ্রহ করে (সৎ কাজে ব্যয় না করে) কৃপণের মতো সংরক্ষিত করে রেখেছিল।’ (সূরা মা’আরিজ ১৭-১৮)

‘যখনই মানুষ অভাব বা বিপদে পড়ে তখন হা-হুতাশ করে। আবার যখন স্বচ্ছলতা বা সৌভাগ্য আসে তখন হয়ে যায় স্বার্থপর, অতিকৃপণ।’ (সূরা মা’আরিজ ২০-২১)

‘আর কেউ যদি কৃপণতা করে, স্রষ্টাবিমুখ হয় এবং চিরায়ত ভালো ও সত্যকে অস্বীকার করে, তবে আমি তার জন্যে দুঃখকষ্ট ও ধ্বংসের পথে চলাকে সহজ করে দেবো। কবরে গেলে ধন-সম্পত্তি তার কোন কাজে লাগবে?’ (সূরা লাইল ৮-১১)

‘(দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে) যে (কৃপণের মতো) অর্থ জমায় আর বার বার তা গণনা করে এবং একে নিজের রক্ষাকবচ মনে করে।’ (সূরা হুমাজাহ ২)

কৃপণতার পরিণাম : ‘তোমরা কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদের যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয়ে কৃপণতা করলে তোমাদের মঙ্গল হবে। আসল সত্য হচ্ছে, কৃপণতা তোমাদের জন্যেই অমঙ্গলের। যা নিয়ে কৃপণতা করবে, কেয়ামতের দিন সেটাই গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর মালিক আল্লাহ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন।’ (সূরা আলে ইমরান ১৮০)

‘আর যারা নিজেরা কৃপণ এবং অন্যকে কৃপণতা করতে উৎসাহিত করে (বা দানে নিরুৎসাহিত করে) এবং আল্লাহর অনুগ্রহ-সম্পদ গোপন করে, আল্লাহ তাদেরও অপছন্দ করেন। এ ধরনের অকৃতজ্ঞদের জন্যে আমি অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি।’ (সূরা নিসা ৩৭)

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকেই কৃপণতা করছ। (আল্লাহর পথে) কার্পণ্য করে, তারা তো আসলে নিজেদের প্রতিই কার্পণ্য করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অভাবমুক্ত আর তোমরা সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। যদি তোমরা (আল্লাহর পথ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দেবেন। আর তারা তোমাদের মতো আচরণ করবে না।’

আল্লাহ অনুগ্রহ করে অর্থ-সম্পদ যা দিয়েছেন তা থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করবো। অতিরিক্ত জমা করবো না। গরীবদের দান করবো, আল্লাহর পথে ব্যয় করবো। যাকাত আদায় করবো। রাব্বুল আলামীন এর চেয়েও বেশি সম্পদ দিতে পারেন।

এএইচ/