ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

‘জর্জিয়া ও বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করতে চাই’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৯ পিএম, ১৮ মে ২০১৯ শনিবার

শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন। ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়। ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন বিদেশ গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিবেন। তাই দেশে থাকতে পড়েছেন, ঢাকার ডনস্‌হাইস্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে। আর এখান থেকেই মাধ্যমিক পাস করে ১৯৮১ সালে পাড়ি জমান আমেরিকায়। পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমানো চন্দন সে বছরেই সেখানে ভর্তি হন নর্থ ক্যারোলাইনার সেন্ট্রাল পিডমন্ট কমিউনিটি কলেজে। তার পরে তিনি জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (ইউজিএ) থেকে ইকোনমিকস অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজে বিবিএ ও এমবিএ করেন।

পড়াশোনা করতে যাওয়া সেই বাংলাদেশি ছেলেটি যে একদিন মার্কিন সিনেটর হবে, হয়তো তিনিও কখনো ভাবেননি। পড়াশোনা করতে যাওয়া সেই ছেলেটি একসময় সম্পৃক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে। তার পরে তিনি আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডিস্ট্রিক্ট-৫ নির্বাচনি এলাকা থেকে নির্বাচিত হন স্টেট সিনেটর হিসেবে।  ডেমোক্রেটিক দলের প্রাথমিক নির্বাচনে চন্দন মোট ৪ হাজার ২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কার্ট থম্পসন পান ১ হাজার ৮৮৫ ভোট। প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোট দেওয়া ব্যক্তিদের ৬৮ শতাংশই আস্থা রাখেন শেখ রহমানের ওপর। তারপর গত নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে রিপাবলিকান বা অন্য কোনো দল থেকে কোনো প্রার্থী না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

দীর্ঘ চার বছর পর তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। নিজের বাড়ি কিশোরগঞ্জে গিয়েছেন মায়ের কাছে। এই সিনেটর এসেছেন একুশে টেলিভিশনের কার্যালয়ে। একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন বিষয়ে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশনের অনলাইন প্রতিবেদক নিলয় মামুন।

একুশেটিভি অনলাইন: একজন বাংলাদেশি হিসেবে কিভাবে সেখানকার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেন ?

শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন: ১৯৮২ সালে প্রথম আমি একজন প্রার্থীর প্রচারণার মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করি। তবে এছাড়া আমি জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ি তখন আমি ছাত্র প্রতিনিধি ছিলাম। এভাবেই ধীরে ধীরে আমি রাজনীতিরি সঙ্গে সংযুক্ত হই।

একুশে টিভি অনলাইন: একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমেরিকার সিনেটর পর্যন্ত পোঁছাতে, আপনাকে কি কি সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে?

শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন: আসলে সেখানে প্রথমে গিয়ে আমাকে ৯০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশতে হয়েছে। আমি কোন দিক চিন্তা করিনি, তাদের সঙ্গে যত দ্রুত মেশা যায় আমি সেটার জন্য চেষ্টা করেছি। আমেরকিায় অনেকে আছে মুসলমানদের দেখতে পারে না, বর্ণবাদী বিভিন্ন ধরনের লোকই আছে। তবে এটাও সত্যি যে সেখানে যার যোগ্যতা আছে তাকে সেই দেশের মানুষ অবশ্যই গুরুত্ব দেয়। আর আমিও এভাবে সমর্থন পেয়েছি। কিন্তু প্রথমে একটু সমস্যা হয়েছে আমার গায়ের রংয়ের কারণে আমাকে মধ্যপ্রাচ্যের লোক মনে করতো অনেকে। তবে ধীরে ধীরে এ সমস্যা কেটে যায়। 

একুশে টিভি অনলাইন: অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্চলতা কিভাবে এসেছে?

শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন: বাংলাদেশ থেকে  যখন আমি যাই তখন দুবছরের মাথায় আমাকে অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছে। অর্থের অভাবে আমাকে কয়েক বছর ড্রপও দিতে হয়েছে কলেজে। আমার ৪ বছরের কোর্স শেষ করতে ১৩-১৪ বছরের মতও সময় লেগেছে। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে উঠে এসেছি। আমি টাকার জন্য ডিশ ওয়াসের কাজ করেছি, ক্যাব চালিয়েছি। এমন সব কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছি। বর্তমানে আমি আবাসন ব্যবসা ও রেন্টাল প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আছি।

একুশে টিভি অনলাইন: বাংলাদেশর রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যদি কিছু বলতেন ?

শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন: আসলে এই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ অনেক ক্রেডিট পেয়েছে। তবে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বালাদেশের অগ্রগতি কেমন আমি সেটা তেমন জানি না। তবে আমি খোঁজ নিব। এছাড়া আমার জায়গা থেকে এ বিষয়ে কিছু করার থাকলে অবশ্যই আমি করবো।

একুশে টিভি অনলাইন: নিজের অবস্থান কোথায় দেখতে চান ?

শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন: আসলে আমি তো আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে পারবো না। তবে জর্জিয়ার জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে,তাদের জন্য যদি কিছু করতে পারি। তাহলে সেটাই আমার বড় পাওয়া হবে। এছাড়া নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য কিছু করাই আমার লক্ষ্য।

একুশে টিভি অনলাইন: বাংলাদেশের কি কি উন্নতি এবার দেশে আপনার চোখে পড়েছে ?

শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন: আসলে বাংলাদেশের সাফল্য সত্যি প্রশংসনীয়। উল্লেখ যোগ্য উন্নতির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে। একটি দেশের উন্নতির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক গুরুত্ব বহণ করে।

একুশে টিভি অনলাইন: বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কোন পরামর্শ আছে কি-না?

আসলে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে দেশে পড়াশোনা হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি টেকনোলজি সম্পর্কে ধারণা বাড়ানোর জন্য বলবো। তবে কখনো নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শই দিতে চাই। ব্যর্থতার পরে অবশ্যই সফলতা আসবেই । 

 

এসএইচ/