ঢাকা, শনিবার   ১১ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে পড়তে চাইলে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৯ পিএম, ২৫ মে ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ১০:৫৪ পিএম, ২৫ মে ২০১৯ শনিবার

জার্মানি শুধু ইউরোপ নয় বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অন্যতম একটি। তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রসরমান এই দেশটি শিক্ষাসহ নানা দিক দিয়ে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয়। বিশেষ করে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত আধুনিক এবং যুগোপযোগী। রয়েছে বিশ্বের অনেক নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষার জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্যতম গন্তব্য এখন ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশ জার্মানি। শিক্ষা ও গবেষণায় শূন্য টিউশন ফি ও শিক্ষাবৃত্তির সুবিধা। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেধাবীসহ সব ধরনের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিকে নির্দ্বিধায় বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে পিছিয়ে নেই।

স্কলারশিপ ও আর্থিক সুযোগ সুবিধা :

বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক সব শাখাতেই উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। জার্মানির উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে লুদভিক ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ, ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন, হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি, উলম ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাড হনেফ প্রভৃতি। প্রতিবছর আড়াই লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী এবং ২৩ হাজার পিএইচডি গবেষক জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হন। এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ শতাংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন। ডিএএডি বা জার্মান ছাত্রবিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী জার্মানি পড়াশোনার সুযোগ পান।

এছাড়াও, ডিএএডি বা জার্মান ছাত্রবিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী জার্মানিতে পড়াশোনার সুযোগ পান। বর্তমানে ৪৫ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানের বৃত্তিভোগীদের ৭০ শতাংশই আসেন বিদেশ থেকে। স্নাতক কোসের্র শিক্ষার্থীরা মাসে ৬৫০ ইউরো, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ৭৫০ ইউরো আর পিএইচডি গবেষকেরা এক হাজার ইউরো পেয়ে থাকেন বৃত্তি হিসেবে। তবে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সুযোগ সীমিত। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য জার্মানিতে যান শিক্ষার্থীরা।

স্টিপেন্ডিয়াটেন ডেয়ার স্টুডিয়েনস্টিফটুং ডয়েচেস ফল্ক, ডয়েচলান্ড স্টিপেন্ডিয়ুম নামের বৃত্তিসহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পাওয়ার সুযোগও রয়েছে। ডিএএডি কনরাড আডেনাওয়ার ফাউন্ডেশন, হাইনরিশ ব্যোল ফাউন্ডেশন, ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশন, বোরিংগার ইংগেলহাইম ফাউন্ডেশন প্রভৃতি ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

জার্মানিতে পড়ার বিষয় :

জার্মানিতে বর্তমানে ৪৫০টির বেশি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গভর্ন্যান্স, পলিটিক্যাল সায়েন্স, অ্যাডভান্সড ম্যাটারিয়ালস, অ্যাডভান্সড অনকোলজি, কমিউনিকেশন টেকনোলজি, এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ফিন্যান্স, মলিকিউলার সায়েন্স, বিভিন্ন ভাষা বিষয়ে পড়াশোনা, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার সায়েন্সসহ প্রকৌশল ও জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।

নিজ খরচে পড়াশোনা :

অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে জার্মানিতে নিজ খরচে পড়াশোনায় কেমন টাকা লাগে। প্রশ্নটা অনেক সহজ হলেও এক কথায় উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন! এর অন্যতম কারণ হল: কেউ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন এবং সেখান থেকে অফার লেটার পেয়েছেন আবার কেউ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে একটি থেকে অফার লেটার পেয়ে জার্মানিতে এসেছেন। কেউ ইউনি এসিস্ট দিয়ে আবেদন করেছেন আবার কেউ সরাসরি ভার্সিটিতে আবেদন করেছেন। যদি সরাসরি আবেদনের সুযোগ খুব কম। কারো ইউনি এসিস্ট ফি ও ব্লক একাউন্ট এর টাকা তাদের বিদেশে থাকা আত্মীয় পরিশোধ করতে তাদের ট্রান্সপার ফি দিতে হয়নি ও ইউরোর রেট নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। কারো ক্ষেত্রে জার্মানিতে থাকা আত্মীয় তাকে স্পন্সর করতে রাজি হয়েছে সেকারণে তাকে ব্লক একাউন্টে টাকা রাখতে হচ্ছে না । আবার কয়েকটা ভার্সিটি ডকুমেন্ট মূল্যায়ন করতে আলাদা করে টাকা নেয় যেমন: Hochschule Worms

আবেদন খরচ:
৫টি আবেদনই ইউনি এসিস্ট দিয়ে করবেন ধরে নিলাম সেক্ষেত্রে খরচ প্রথম আবেদনে ৭৫ ইউরো, এর পরে সবগুলোর জন্য ৩০ ইউরো করে। সেক্ষত্রে সর্বমোট পড়বে ১৯৫ ইউরো। ট্রানফার খরচসহ ২০০ ইউরো ধরে নিলাম। যেটা ১০০ টাকা ইউরো রেট ধরে ২০০০০ টাকা। ডকুমেন্ট পাঠাতে ১০০০ থেকে ২৫০০ পর্যন্ত খরচ হতে পারে। আমরা ২৫০০ কে স্ট্যান্ডার্ড ধরবো। পরবর্তীতে আর্থিক লেনদেন করার জন্য আপনাকে বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে হবে। স্টুডেন্ট ফাইলের খরচ ৫০০০ টাকা থেকে ১৫০০০ টাকার মধ্যে। আমরা ১৫০০০ টাকা ধরে নিলাম। এছাড়াও ব্লক একাউন্ট করতে লাগবে ৮৬৪০ ইউরো। ব্লক একাউন্ট করতে আপনাকে জার্মান ব্যাংকে ফি দিতে হবে ৯৯ ইউরো থেকে ২০০ ইউরো। আপনি পার্টটাইম জব পাবার পর ওই টাকা আর খরচ করা লাগবে না যদি আপনার যথেষ্ট ইনকাম থাকে। তবে, আপনাকে ১০০ টাকা রেটে ৮৬৪০০০ টাকা ব্লক একাউন্টে রাখতে হবে। যা প্রতি মাসে ৭২০ ইউরো করে পাওয়া যাবে।

ট্রাভেল ইন্সুরেন্স: ট্রাভেল ইন্সুরেন্স খরচ ৫০০০ টাকা থেকে ১০০০০ টাকার মধ্যে।

আনুষাঙ্গিক খরচ: ফটোকপি করা, এম্বাসির জন্য ছবি তোলা ইত্যাদি বাবদ ১০০০ টাকা।

এম্বাসি ফি: ৭৫ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় কম-বেশি ৭৫০০ টাকা।

বিমান ভাড়া: জার্মানিতে একমুখী বিমান যাত্রার খরচ ৪০০০০ টাকা থেকে ৬০০০০ হাজার টাকা।

যা যা জানা প্রয়োজন:

প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা নিতে আসে৷ জার্মানিতে কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা পাওয়া যায়৷ তবে জার্মানির উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ার আগে শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন৷ পড়ে নিন সেগুলো৷

১. জার্মানির ১৬টি রাজ্যের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো টিউশন ফি নেই৷ এটা সত্য৷ তবে এক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুনির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রোগ্রামে আবেদন করলে বিনা খরচায় পড়ার সুযোগ আছে৷ সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা যেসব শর্ত মেনে লেখাপড়া করে, বিদেশিদেরও সেগুলো মানতে হবে৷ স্টাডি এবরোড প্রোগ্রাম এবং প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা ফ্রি নয়৷

২. একজন বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার ফাঁকে আপনি কতটা কাজ করতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র কোনো দেশের পাসপোর্টধারী নয়, এমন শিক্ষার্থীরা বছরে ১২০ দিন পূর্ণদিবস কিংবা ২৪০ দিন অর্ধদিবস কাজ করতে পারেন৷ এছাড়া সেমিস্টার চলাকালে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করা যাবে না৷ ভালো কথা, গোপনে বাড়তি কাজের চেষ্টা করবেন না৷ ধরা পড়লে বড় সমস্যা হতে পারে৷

৩. আশার কথা হচ্ছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অনুদান এবং ফেলোশিপের ব্যবস্থা রয়েছে জার্মানিতে৷ আপনার বিষয় যাই হোক না কেন, আপনি যদি তাতে মেধাবী হন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য পরিশ্রমে আগ্রহী হন, তাহলে অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস বা ডিএএডি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে থাকে৷ তবে অনুদানের আবেদন প্রফেশনালদের মতো হওয়া চাই৷

৪. উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জার্মানিতে পড়তে আসার ভিসা পাওয়া একটু জটিল৷ তাঁদের বেশ কিছু দিন সময় হাতে রেখে ভিসার আবেদন করতে হয়৷ আর জার্মানিতে আসার পর মাঝেমাঝেই যেতে হয় আউসলান্ডারবেহ্যোর্ডে বা বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত সরকারি কার্যালয়ে৷

৫. জার্মানিতে আসার পর আপনি নিয়মিতই বিভিন্ন চিঠি পাবেন৷ এমনকি কবে কবে বাড়ির সামনে কোন কোন ধরনের ময়লা রাখা যাবে, সেটাও জানবেন চিঠির মাধ্যমে৷ বুদ্ধিমানের কাজ হবে সব চিঠি জমা করে রাখা৷ তবে প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তর দিতে ভুল করবেন না যেন৷ জার্মানিতে বসবাসের এক বিরক্তিকর দিক হচ্ছে দেশটির জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া৷ সেই প্রক্রিয়ার অংশ এ সব চিঠি৷

৬. এটাও সত্য, জার্মানির বড় শহরগুলোতে জার্মান না জেনেও বসবাস করা য়ায়৷ এছাড়া বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ইংরেজিতে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে৷ তবে কিছুটা জার্মান ভাষা শিখতে পারলে দেশটিতে জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে যাবে৷ আর আপনি যদি পড়ালেখা শেষে জার্মানিতে চাকরি করতে চান, তাহলে ভাষা জানাটা অনেক জরুরি৷ এক্ষেত্রে ডয়চে ভেলের জার্মান ভাষা শিক্ষা কোর্স আপনাকে সহায়তা করতে পারে৷

৭. জার্মানির বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে৷ তবে তাদের সেবা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়৷ অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেছে দেওয়া অ্যাপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীর পছন্দ হয় না৷ আশার কথা হচ্ছে, অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো থেকে থাকার জায়গা বেছে নেওয়া যায়৷ কাজটা কঠিন৷ তবে চেষ্টা করবেন এমন জায়গায় থাকার যেখানে জার্মান শিক্ষার্থীরা থাকেন৷ তখন ভাষা শেখাটা আপনার জন্য সহজ হবে৷

আবেদন করবেন যেভাবে:

অনলাইনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের সব প্রক্রিয়া ও বৃত্তি সম্পর্কে জানা যায়। বাংলাদেশি স্টুডেন্ট অ্যান্ড অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইন জার্মানির ওয়েবসাইট (bsaagweb.de) থেকেও শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে বর্তমানে পড়ছেন এমন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরাসরি পরামর্শ নিতে পারেন। জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থা, দৈনন্দিন জীবনযাপন, পড়ালেখা-চাকরির সুবিধাসহ যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এ সাইট থেকে।

প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট:

১. স্টাডি ইন জার্মানি : study-in.de

২. ডিএএডি : daad.de/en

৩. ঢাকার জার্মান দূতাবাস : dhaka.diplo.de

৪. গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ঢাকা : goethe.de/ins/bd/en/dha.html

 

টিআই/এসএইচ/