ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নুসরাত বেঁচে থাকলেও আবার মরে যেত: ব্যারিস্টার সুমন (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৯ পিএম, ২৮ মে ২০১৯ মঙ্গলবার

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

আলোচিত নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে একুশে টিভির বিশেষ অনুষ্ঠান একুশের রাতে এসেছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।  ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি।

ফেরদৌসি আহমেদের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছেন এই মামলার বিভিন্ন বিষয়।

একুশে টেলিভিশনের পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: ব্যারিস্টার সুমন, ১৫ এপ্রিল আইসিটি আইনে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি আপনি করেছিলেন, গণমাধ্যমে এ মামলার ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, বিষয়টি পরিষ্কার করে যদি বলেন?

ব্যারিস্টার সুমন:  ১১ তারিখ নুসরাতের জবানবন্দি ভিডিওটি দেখি সুপ্রিম কোর্টে বসে। নুসরাত কিন্তু মারা যায় ১০ তারিখে। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যে, নুসরাতের এই ভিডিও একজন ওসি সাহেব করতে পারেন! নুসরাত মারা গেল,  প্রিন্সিপালকে আটক করা হল, মামলা হল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এই কনসেপ্টটা সবার কাছে ক্লিয়ার না।

আমি খেয়াল করে দেখলাম যে, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম সাবেক যে কাজটুকু করেছেন তাতে প্রায় তিনটি সেকশন থেকে সরাসরি লাইক করতে পারে। নুসরাতের পরিবার তখন শোকে, ডিজিটাল আইনও তারা বুঝবে না। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি ডিজিটাল আইনের ধারা ২৬, ধারা ২৯ এবং ধারা ৩১ উল্লেখ করে মামলা করলাম।

পুলিশ বিভাগ একটি মার্ভেলাচ কাজ করেছে, ১৩ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। আমাকেও দিয়েছে। সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি এই জন্য যে, ভিডিওটা ওনারা ফরেন্সিং টেস্টের জন্য পাঠিয়েছিলেন। টেস্টে দেখা গেল  ভিডিওটি সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের স্যামস্যাং এ-৮ থেকে রেকর্ড করা হয়েছে। মিলে গেল ফরেন্সিং,  সবগুলো ধারা চলে এসেছে এখানে।

যে জায়গায় ঘটনা ঘটলো পিবিআই সেখানে গেলেন, নুসরাতের মা-বাবা এবং ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলেন সবাইকে সাক্ষী হিসেবে নিলেন, আমার সাক্ষীও নিলেন। ওনারা এও বলেছেন, ওসি সাহেব নিজের রুমে প্রটেকশন ছাড়া ভিকটিমের ইনভেষ্টিগেশন করবেন, তার ওপর ভিডিও করবেন এটা কিভাবে সম্ভব! আমি তো বলি, নুসরাত যদি বেঁচেও যেত এই ভিডিওর কারণে আবার মরে যেত। ওনারা এইটাই চেয়েছিলেন যে, ও মরে যাক।

আজকে আমার সাবমিশন এইটাই, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম সাহেবকে এমনভাবে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে যাতে দোষী প্রমাণিত হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। যাতে বাংলাদেশের কোনো অফিসার-ইনচার্জের রুম আর অনিরাপদ না হয়- শুধু মেয়েদের জন্যই নয়, ভিকটিম যে কেউ হোক।

আমি বার বার বলতে চেষ্টা করেছি যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ ফোর্সের গৌরবান্বিত ভূমিকা কেন দুই একজন অফিসারের জন্য ক্ষুণ্ণ হবে। পিবিআইর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওনি পুরো ডিপার্টমেন্টর সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন। এই জন্যই মামলাটি করা।

প্রশ্ন:  নুসরাতের ভাই যে হত্যা মামলা করেছিল এবং মা মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছিল সেই মামলাগুলো যদি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আনা হয় তাহলে কতটুকু এগুবে এবং এখন যেভাবে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আছে তাতে কতটুকু অগ্রগতি সম্ভব?

ব্যারিস্টার সুমন : সাইবার ট্রাইব্যুনাল অনেক দূর এগিয়েছে। যেটি হত্যা মামলা সেটির কিন্তু চার্জশিট হয়নি। আমাদের মাননীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেছেন যে, এই মামলা দ্রুত ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাবেন। তাতে অগ্রগতি বাড়তে, দ্রুত এগুবে। শুধু বিচার করলেই হবে না,  বিচারে যতগুলো পক্ষ জড়িত তারা যাতে বুঝতে পারেন এবং দেখতে পারেন বিচারটা সুষ্ঠ‍ু, ন্যায় বিচার সম্পন্ন হয়েছে।

আমার কষ্টটা এখানেই যে , যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে তো  গ্রেফতার করা হয়েছে, এর বাইরে যারা বাকি আছেন তাদের কী হবে। ওসি সাহেব ভিডিওটি করার কারণে তার বিরুদ্ধে আমি মামলা করি। ওসি সাহেবকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এই চেইনের মধ্যে এসপি সাহেব  আছেন এবং ঊর্ধ্বতনের কাছে নুসরাতের পরিবার গেল, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলেন।  বললেন ঘটনাটি তোমরা মিটিয়ে ফেল না কেন? তিনি একটি পার্ট হয়ে গেলেন। আমি খুশি হয়েছি যে, আওয়ামী লীগের সভাপতি জড়িত থাকায় তাকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়ে আসামি করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা একটা যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত।

প্রশ্ন: যারা সামাজিক অপরাধ করে তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীও কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, তাদেরকে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করা হবে। এটিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ব্যারিস্টার সুমন:  আমি এখনও বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই এখনও কিছুটা আশার সঞ্চার হয়। নুসরাতের ঘটনাটি ঘটার পর নেত্রী কিন্তু বলেছেন- তিনি নিজেই ঘটনাটি তদারকি করছেন। এত দ্রুত বিচার পাচ্ছি এটাও প্রধানমন্ত্রীর সিগন্যাল। সব ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ নিতে  হবে, এটা কিন্তু উচিত নয়।

প্রধানমন্ত্রীকে রিল্যাক্স করে দিতে হবে। আমাদের ডিপার্টমেন্টগুলো এখনও মেন্যুয়েল, অটো হয়নি। মাঝে মাঝে হতাশ হই, কিন্তু তরুণ সমাজ নিয়ে আমি আশাবাদী। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ঘটনাগুলো যেভাবে ভাইরাল হচ্ছে, কথা বলা শুরু হয়েছে, যেভাবে ব্যাকআপ দিচ্ছে তাতে আলোর মুখ দেখা যাচ্ছে।