দুই-তিন ঘণ্টা যানজটে বসে দেখুন: আহ্বান ঢাবি উপাচার্যকে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৫৭ পিএম, ২৯ মে ২০১৯ বুধবার

যানজটের দুর্ভোগ মেনে নিতে আহ্বান জানানোর পাল্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে যানজটের অভিজ্ঞতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনা সভায় মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি ‘ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।
তিনি বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের বক্তব্যের পাল্টায় বলেন, আমি তাকে বলব, আপনিও সাধারণের কাতারে নেমে আসুন। দুই-তিন ঘণ্টা যানজটে বসে থাকুন। তখন হাসিমুখে বলুন, আমি আপনাদের পাশে আছি।
যানজট ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। এবার রোজায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে যানজটের দুর্ভোগের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান উন্নয়নের খাতিরে যানজট হাসিমুখে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মিজানুর বলেন, তিনি বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এজন্য সাময়িক এই দুর্ভোগ হাসিমুখে মেনে নিতে। আপনি দুর্ভোগ পোহাবেন না, জনগণকে হাসিমুখে দুর্ভোগ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাবেন? দেশের মানুষ তা মেনে নেবে, এতটা বোকা এদেশের মানুষ নয়।
সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সভায় মিজানুর আরও বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন নেই। আইনের শাসন নেই বলেই এত সমস্যা। এই রাষ্ট্র ধনীদের, গরিবের নয়। ধনীদের অধিকার রক্ষা করে, গরিবের নয়। আজ দেখলাম রিকশা উল্টো পথে চলায় তা উল্টে দেওয়া হয়েছে। একই সড়কে ভিআইপিরা উল্টো পথে সাইরেন বাজিয়ে চলেছে, তাদের গাড়ি উল্টে দিতে পারেনি।
গণপরিবহন খাতে আইনের শাসন অনুপস্থিত, মন্তব্য করে মিজানুর রহমান বলেন, আইনের শাসন অনুপস্থিত বলেই পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে। এর পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, যা নেই। ন্যূনতম আইনের শাসন সমাজে না থাকলে নাগরিকের অধিকার থাকে না। সড়কে দুর্ভোগ কমাতে এখন তো জরিমানা আদায়ের হিড়িক শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্র বারবার প্রতারণা করে। এটা সহ্য করাটা বড্ড কষ্টকর হয়ে যায়। যখন একই সঙ্গে দেখা যায়, গরিব রিকশাওয়ালার প্রতি কী আচরণ এবং ধনী গাড়ির মালিকের প্রতি কী আচরণ। তখনই বোঝা যায়, রাষ্ট্র কার স্বার্থে কাজ করে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। ঈদের সময় ট্রাকে, বাসে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেন। এটা থেকে যাত্রীদেরই নিবৃত্ত থাকতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা যান, তার দায় সবার, রাষ্ট্রের, মালিকপক্ষের, চালকের এমনকি যাত্রীর নিজেরও।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী মনে করেন, বিগত কয়েক বছরে ঈদযাত্রায় গণপরিবহন ব্যবস্থা আরামদায়ক না হলেও স্বস্তিদায়ক হয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ঢাকা শহরে বসবাসযোগ্যতা কমে যাচ্ছে। এই সমস্যা এতই কাঠামোবদ্ধ যে সমাধান হওয়াটা কঠিন। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবহন খাতে সুশাসন হবে না, ততক্ষণ দুর্ভোগ কমবে না। ঈদের আগে যে সমস্যাটি সবার সামনে আসে এটাকে সারা বছরের সমস্যা হিসেবে দেখে তার সমাধান করতে হবে।
সভায় বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক সালেহউদ্দিন আহমেদ, ডিটিসিএর জ্যেষ্ঠ নগর পরিকল্পনাবিদ তপন কুমার নাথ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরকে//