ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘ভাগ্য নির্ধারণের রাত লাইলাতুল কদর’

 ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দিন

প্রকাশিত : ০৬:১৬ পিএম, ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপার করুণায় আমরা (মুহাম্মদ সা. এর উম্মত) লাইলাতুল কদর পেয়েছি। আমাদের জন্য এটা আল্লাহ তা আলার বড় অনুগ্রহ।

অন্যান্য নবীর উম্মতরা পাঁচশ ছয়শ বছর হায়াৎ পেত। কিন্তু আমাদের ( মুহাম্মদ সা. এর উম্মতদের) গড় আয়ু মাত্র ষাট-সত্তর বছর। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কে একদিন অতীত যুগের উম্মতদের আমলনামা দেখানো হলো। তখন আল্লাহর নবী ভাবলেন, আগেকার নবীদের উম্মতরা অনেক বেশি হায়াৎ পেয়েছে বিধায় এতো বেশি নামায, রোজা করেছে। বেশি সওয়াব কামিয়েছে। কিন্তু আমার উম্মতরা হায়াৎ পাবে কম। তারা তো এতো আমল করতে পারবে না। তাহলে কী আমার উম্মতরা পেছনে পড়ে থাকবে। এমন চিন্তা করে রাসূলুল্লাহ ( সা.) খুব ব্যথিত হলেন। মনে মনে কষ্ট পেলেন।

তখন আল্লাহ আমাদের রাসূলকে লাইলাতুল কদর দান করলেন। বলেন, লাইলাতুল কদরের খায়রুম মিন আলফে সাহার। এই একটা নাত এতো মর্যাদার যেটা হাজার মাসের চেয়ে বহুগুনে উত্তম।

অন্যান্য নবীর উম্মতেরা হাজার মাস এবাদত করে যে সওয়াব পেয়েছে মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতরা একরাত ইবাদত করে তার চেয়ে অনেক বেশি গুণ সওয়াব পাবে।

লাইতালুল কদরের দুটো দিক। কদর শব্দের দুটো অর্থ। একটা হলো `ভাগ্য নির্ধারণ ` আর অন্য অর্থটা হলো সম্মান। আল্লাহ তা আলা নিজেও রাতটিকে মর্যাদাবান করে আমাদের জন্য দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত এ রাতে যারা ইবাদত বন্দেগী করে এমানুষগুলো আল্লাহর কাছে খুবই সম্মান পায়। এই লাইলাতুল কদরেই কোরআনুল কারীম নাযীল হয়েছিল। মর্যাদার ওপরে মর্যাদা, সম্মানের ওপর সম্মান, প্রাপ্তির ওপর প্রাপ্তির রাত লাইলাতুল কদর।

লাইলাতুল কদরের আরেকটা দিক হলো `নির্ধারণ`। আল্লাহ তা আলা দুনিয়াটা পরিচালনা করেন একটা নিয়মের ভিত্তিতে। আল্লাহ `ক্বুন ফায়াকুন` বললেই হয়ে যায়। কিন্তু শৃংখলার জন্য একটা নিয়মের ভিত্তিতে পৃথিবী পরিচালিত হয়। এই প্রেক্ষাপটে আগামী এক বছর হায়াৎ, মউত, সুখ, দুঃখ, ভালো, মন্দ, আয়, উপার্জন, এই এক বছরের ফয়সালা হবে লাইলাতুল কদরে। এজন্য এটার নাম নির্ধারনী। লাইলাতুল বরাতে রিযিক মোটামুটি বরাদ্দ হয় আর লাইলাতুল কদরে তা নির্ধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ তখন দায়িত্বগুলো ভাগ করে ফেরেশতাদের মাঝে বণ্টন করে দেন।

অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি লাইলাতুল কদর একদিকে সম্মানের রাত অন্যদিকে আমাদের তাকদীর নির্ধারণের রাত। আমরা যে যে অবস্থায় থাকি, আমরা সবাই শান্তি চাই। আমরা সবাই একটা উন্নত জীবন চাই। সেজন্য লাইলাতুল কদরের রাতে আমরা জনে জনে আল্লাহর কাছে আগামী এক বছর যেন আমাদের হায়াতে বরকত হয়, সুস্বাস্থ্য হয়, পরীক্ষার্থীদের যেন পড়াশোনা ভালো হয়, কর্মজীবীদের যেন আয় রোজগার ভালো হয়, সুখ বৃদ্ধি পায়- এজন্য আল্লাহর কাছে বলব। আরো অধিকতর প্রাচুর্য্য, অধিকতর সাচ্ছন্দ্যের জীবন চাইব।

লাইলাতুল কদরের সূর্যাস্তের পর থেকে ফেরেশতারা জিবরাঈল (আ.) এর নেতৃত্বে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। ওই রাতে যারা ইবাদত বন্দেগী করেন, জিবরাঈল (আ) ফেরেশতাদের বহর নিয়ে এসে সবার জন্য দোয়া করেন। ইবাদতরত লোকদের সঙ্গে মোসাহাবা করেন। হাত মেলান। অন্যান্য ফেরেশতারাও জনে জনে মুমিন মুসলমানদের সালাম দিয়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বুঝার মতো জ্ঞান দিয়েছেন।

তাই লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে আমরা ফরজ, সুন্নাহ, ওয়াজিবতো আদায় করবই- পাশাপাশি নফল নামাজ, তাসবীহ, কুরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ আদায় করব। সদকা করব। মানুষের একটা ভালো কথাও আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। আমরা আমাদের নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, বিশ্বের জন্য দোয়া করবো। সব মানুষ যেন এই জগতেও সেই জগতেও সুখ- শান্তি পায়, আল্লাহর কাছে সেই দোয়া করব।

 

লেখক : খতিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।

 

অনু লেখক: আলী আদনান।

 

এসএইচ/