ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

জাকাত ফিতরা আদায় হয়েছে কি?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২৭ পিএম, ২ জুন ২০১৯ রবিবার

রমজানের আজ ২৭ তারিখ। মহিমান্বিত এ মাসটি শেষ হতে আর মাত্র দুই থেকে তিন বাকি। আপনি কি জাকাত ও ফিতরা আদায় করেছেন? না হয়ে থাকলে অতি দ্রুত আদায় করুন। পূণ্যের মাস রমজান কিন্তু শেষের পথে। এ মাসে এক পূণ্যে ১০ থেকে ৭০০ গুণ বেশি সওয়াব। এখনই হিসাব করে জাকাত-ফিতরা আদায় করুন।

জাকাতকে আল্লাহ ফরজ করেছেন। জাকাতকে গরিবের হক হিসেবে আল্লাহ নির্ধারিত বিধান করেছেন। জাকাত না দিলে বা অস্বীকার করলে দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। জাকাত সমাজে শান্তি আনয়ন করে। জাকাতের ওপর অর্থনীতির যে ভিত তৈরি হয় তাতে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমে যায়। জাকাত আখিরাতের মুক্তিকে নিশ্চিত করে। জাকাত যে কোন সময় আদায় করা যায় তবে রমজানে সওয়াবের পরিমাণ বেশি সেহেতু ইসলামী সমাজ রমজানেই জাকাত আদায় করে আসছে। ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ অর্থাৎ ৪০ ভাগের ১ ভাগ জাকাত দিতে হয়।

ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হয়। ফিতরা ঈদের দিন সকালের মধ্যেই আদায় করার নিয়ম। ফিতরা নির্ধারিত খাদ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও আদায় করা যায়।

চলতি বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ৭০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৯৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে সর্বনিম্ন এই হার থেকে সর্বোচ্চ হারে ফিতরা আদায় করতে পারবেন। জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটি দেশের সব বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের সর্বোচ্চ বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এই ফিতরা নির্ধারণ করেছে। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী এসব পণ্যের যেকোনো একটি পণ্য বা এর বাজারমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে। পণ্যগুলোর স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।

রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের সময়ে সবাই এক রকম ফিতরা আদায় করতেন না। খেজুর, যব, কিসমিস, মুনাক্কা, পনির ও গম দিয়ে ফিতরা আদায় করা হতো। যার যে রকম সুযোগ ছিল তিনি সেভাবে আদায় করতেন। এতে ফিতরার বিভিন্নতা বুঝা যায়। তাছাড়া যদি সবাই এক রকম ফিতরা আদায় করতো তাহলে এক রকমেরই ঘোষণা থাকতো। তাই আমাদের জীবন যাত্রার মানের প্রতি লক্ষ্য রেখে যার সঙ্গতি আছে তার উপর ভিত্তি করে ফিতরা আদায় করা উচিত।

ফিতরা বিতরণ বিষয়ে কোরআন হাদীসে আলাদা কোন খাত উল্লেখ নেই বিধায় কোরআনে বর্ণিত যাকাতের খাতসমূহে বিতরণের জন্য ফিকাহবিদগণ মত পোষণ করেছেন। তবে হাদীসের বর্ণনার ধারা মোতাবেক প্রতীয়মান হয়েছে যে ফিতরা আদায়ে ফকির মিসকিনের হক বেশি। যেহেতু হাদীসে বলা হয়েছে ঈদের পূর্বে তাদের কাছে এ অর্থ পৌঁছে দেয়ার কথা। এ ছাড়া বুখারীতে ইবনে ওমায়েরের এক বর্ণনায় জানা যায়, সাহাবগণ ঈদুল ফিতরের দুই একদিন আগে আদায়কারীর কাছে বায়তুলমালে ফিতরা জমা দিতেন। ইবনে আদী ও দারেকুতনীতে ‘মিসকিনদেরকে সেদিন রুজির সন্ধানে ঘুরাফিরা থেকে রেহাই দাও’ বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাজা ও আবু দাউদে ইবনে আব্বাসের একটি বর্ণনায় মিসকিনদের আহারের ব্যবস্থা যাতে হয়ে যায় একথা তারই সমর্থন করে। এতে বুঝা যায় ফকির মিসকিনদের অগ্রাধিকার সহ বর্ণিত খাতে তা ব্যয় করলে ফিতরার হক আদায় হয়ে যাবে।

অতএব, ইসলামের বনিয়াদি নীতির স্বার্থে, দুনিয়া ও আখিরাতের  মুক্তির লক্ষ্যে এবং সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে সম্পদশালী মুসলমানের উচিত সুষ্ঠুভাবে জাকাত প্রদান করা। জাকাত যেমনিভাবে গরিব ও দরিদ্র মানুষের ভাগ্য বদলে দেয় এবং স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে, তেমনি ফিতরাও গরিব ও দরিদ্র মানুষের জীবনে আনে স্বস্তি। এ দুই খাত থেকে তারা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ পায়।

আসুন  আর দেরি না করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জাকাত ও ফিতরা আদায় করি, আর কল্যাণময়ী জীবন গড়ি।

এএইচ/